বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাতা কোম্পানি ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের বানানো দুটি কার্গো জাহাজ ভারতীয় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
শুক্রবার সকালে চট্টগ্রামে বোট ক্লাবসংলগ্ন এলাকায় কর্ণফুলী নদীতে ওয়েস্টার্ন ক্রজ জাহাজে হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতা হয়।
এর আগে ২০১৫ সালে ভারতের জিন্দাল স্টিল ওয়ার্কস চারটি জাহাজ নির্মাণের কার্যাদেশ দেয় ওয়েস্টার্ন মেরিনকে। এর মধ্যে প্রথম দুটি জাহাজ জেএসডব্লিউ রায়গড় ও জেএসডব্লিউ প্রতাপগড় ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে প্রতিষ্ঠানটির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
অপর দুটি জাহাজ জেএসডব্লিউ সিংহগড় ও জেএসডব্লিউ লোহগড় এদিন হস্তান্তর করা হয় ভারতের জিন্দাল স্টিল ওয়ার্কসের কাছে। জাহাজগুলি মুম্বাই এবং গোয়ার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত জয়গড় বন্দর থেকে মহারাষ্ট্রে অবস্থিত ধরমতার বন্দরে খনিজ লোহা এবং কয়লা বহন করবে।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, “আমরা শুধু জাহাজ রপ্তানি করছি তা নয়, আমরা তৈরি পোশাকও ভারতে রপ্তানি করি। আরও অনেক পণ্য আমরা ভারতে রপ্তানি করি। আজকের বিশ্ব যৌথ অংশধারী ব্যবসায়ের।
“ভারত আমাদের পাশে আছে, ভারতের অনেক জনসংখ্যা। এটা অনেক বড় একটা মার্কেট। ভারতের এই বড় বাজার থেকে আমরা বেশি লাভবান হতে পারি, যদি আমরা আমাদের মাইন্ড সেট পরিবর্তন করি। আমাদের মাইন্ড সেট পরিবর্তন করা দরকার।”
ভারত, নেপাল ও ভুটানকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করতে দেওয়া হলে বাংলাদেশের রাজস্ব আয় বাড়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানও বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
টিপু মুনশি বলেন, “আমাদের অ্যাডভান্টেজ যেটা আছে, ভৌগলিক। কারণ ভারতের একটা বিশাল অংশ রয়েছে পূর্বাঞ্চলে, তারা কিন্তু ল্যান্ড লক জায়গা। তাদের কিন্তু সমুদ্র নাই। তাদেরকে অনেক দূর যেতে হয়।
“আমাদের এই অ্যাডভান্টেজ, এই সমুদ্র বন্দর। চট্টগ্রাম এবং মোংলা। এটা যেমন আমাদের নিজেদের প্রয়োজন এবং একটা বিশাল আর্নিং আমাদের হতে পারে ভারতকে ব্যবহার করতে দেওয়া। সে ব্যাপারে আমরা লক্ষ্য করে কাজ করে চলেছি।”
মোংলা পোর্টের উন্নয়ন করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম পোর্টের ক্যাপাসিটি বেড়েছে। পূর্ব ভারতের এদিককার প্রায় ৫০ মিলিয়ন মানুষ…. আরো বেশি হতে পারে, নেপাল রয়েছে এবং ভুটান রয়েছে। আমাদের অনেক… রেভিনিউ আসবে। আমাদের কর্মসংস্থান হবে।”
টিপু মুনশি বলেন, “আজকের দুনিয়া তো পার্টনারশিপের। অগ্রগতির জন্য পার্টনারশিপ; যে আমরা এগোবো, অর্থনৈতিকভাবে এগোবো। এই যে নেগেটিভ কথাগুলো এত বছর ধরে বলা হয়েছে। আজকে বাংলাদেশের অবস্থান প্রমাণ করে এসব মিথ্যা কথা।
“আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। আমরা অনেক পথ এগোনোর জন্য আমরা প্রস্তুত। এজন্য লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে হবে।”
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তি একীভূত করে আগামী বছর রপ্তানি ৬০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সেই টার্গেট নিয়ে আমরা কাজ করছি। আর এই টার্গেট পূরণে জাহাজ নির্মাণ শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”
ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, “জাহাজ দুটির প্রতিটির ধারণক্ষমতা ৮ হাজার ডিডব্লিউটি (ডেডওয়েট টনেজ)। এই দুটি জাহাজই এখন পর্যন্ত দেশে নির্মিত সবচেয়ে বড় জাহাজ।”
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশ বলেন, “জাহাজ রপ্তানি ভারতে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির পূরণে সহায়ক হবে।
“বাণিজ্য ঘাটতির জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ সরকার তো শুধু পরিবেশ তৈরি করে। ঘাটতি পূরণের জন্য বাণিজ্যের পাশাপাশি বিনিয়োগটাও একটা বড় বিষয়।”
ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডে নির্মাণ করা এই জাহাজের প্রতিটির বিক্রয় মূল্য আনুমানিক ৫০ কোটি টাকা। অর্থ্যাৎৎ চারটি জাহাজের মোট মূল্য ২০০ কোটি টাকা।
শেয়ারবার্তা / মিলন