দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে আগামী পাঁচ বছর প্রান্তিক পরিবারগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, ‘প্রান্তিক পরিবার থেকেই আমরা বের করে আনবো আমাদের আগামী নেতৃত্ব। শিক্ষায় শিক্ষিত কারা হবে, কীভাবে তারা দেশের উন্নয়নে সহায়তা করবে।’
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিজনেস পত্রিকা ‘দ্য ব্যাংকার’ কর্তৃক বিশ্বের সেরা অর্থমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার অর্জনকে পুরো জাতির অর্জন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘যেসব সম্পদ এখনও ব্যবহার করতে পারিনি, সেগুলো ব্যবহার করতে পারলে আমাদের প্রবৃদ্ধি আরও ভালো ও সবার জন্য আকর্ষণীয় হবে। যেটাকে আমরা বলি ‘ইনক্লুসিভ গ্রোথ’। আমরা সে কাজগুলো করার জন্য আগামী ৫ বছর প্রত্যেকটি প্রান্তিক পরিবারকে নিবেদন করবো। প্রান্তিক পরিবারগুলো হবে আমাদের অগ্রাধিকার। এখন রাস্তা-ঘাট যেরকম অগ্রাধিকার পাচ্ছে তার চেয়েও বেশি অগ্রাধিকার পাবে প্রান্তিক পরিবার।’
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘কয়েক দিন আগে আমি পুরস্কৃত হয়েছি। আসলে আমিতো পুরস্কৃত হয়নি, পুরস্কৃত হয়েছে পুরো জাতি, প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের সকল মানুষ, এটা সবার পুরস্কার। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে উন্নয়ন হয়েছে সব বিবেচনায় এ পুরস্কার।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সামনে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে… এগুলো অর্জন করতে আমরা কী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছি, আগামীতে আরও কী কী চ্যালেঞ্জ আসতে পারে… যদি আসে সেগুলো কীভাবে আমরা মোকাবিলা করবো সেসব বিষয়ে তারা আমার মতামত নিয়েছে। তবে মুখ্য এলাকা হচ্ছে অর্থনীতি। অর্থনীতির চালিকা শক্তি আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে। তিনি নিজেই… আমরা কীভাবে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো, লক্ষ্যটি খুব বড় এবং লক্ষ্য থেকে আমরা এখনো বিচ্যুত হইনি। লক্ষ্য অর্জনের পথেই আমরা রয়েছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘যারা অথেন্টিক, যাদের কথা সারা বিশ্ব শোনে তারাই বলছে, ২০২৫ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াকে অভারকাম করে এগিয়ে যাব। এই যে আমাদের সক্ষমতা জায়গাগুলোর কথা বলা হচ্ছে, এর কারণ, আমরা পলিসি ও প্ল্যানিং প্রোসপেক্টিভে আমরা দৃঢ়ভাবে এগুচ্ছি। একটি শক্ত জায়গা থেকে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘এখানে মিসম্যাচ থাকতেই পারে। তারপরও আমি মনে করি আমরা ভালো কাজ করছি, এটা আমার বিশ্বাস। সারাবিশ্বে গত এক বছর এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কোনোটাই বাড়েনি। গত ছয় মাসে আমাদের ৫ শতাংশের মতো এক্সপোর্ট গ্রোথ কম। তবে সারাবিশ্বে আমাদের তুলনামূলকভাবে খুবই কম।’
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বিশ্বাস করি। আমার বৃহত্তর পৃথিবীর একটি বৃহত্তর পরিবারের অংশ। সুতরাং সেখানে কোনোভাবেই অন্য কারো থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে পারি না। সারাবিশ্ব যেভাবে এগোই আমাদেরও সেভাবে এগুতে হবে।’
উল্লেখ্য, গত ২ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে গ্লোবাল ফিন্যান্স মিনিস্টার অব দ্য ওয়ার্ল্ডে ভূষিত করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিজনেস পত্রিকা ‘দ্য ব্যাংকার’।
লন্ডন, যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্বনামধন্য ফাইন্যানন্সিয়াল টাইমস গ্রুপের মাসিক ম্যাগাজিন ‘দ্য ব্যাংকার’ পত্রিকা ২০২০ সালের জন্য ‘ফিন্যান্স মিনিস্টার অব দ্য ইয়ার ফর এশিয়া-প্যাসিফিক অ্যান্ড গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড ২০২০ এ ভূষিত করেছেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে।
‘দ্য ব্যাংকার’ পত্রিকাটি ১৯২৬ সাল হতে প্রকাশিত হচ্ছে, যা পৃথিবীর ব্যাংকিং সেক্টরের ইন্টেলিজেন্স হিসেবে খ্যাত। তারা ‘ফাইন্যান্স মিনিস্টার অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কারটি গত ২০০৪ সাল থেকে প্রচলন করেছে।
বাংলাদেশের কোনো অর্থমন্ত্রী প্রথমবারের মতো এই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। গত বছর এ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন ইন্দোনেশিয়ার অর্থমন্ত্রী, তার আগের বছর ভারতের সাবেক অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এবং ২০১৭ সালে আর্জেন্টিনার অর্থমন্ত্রী ‘ফাইন্যান্স মিটিস্টার অব দ্য ইয়ার’ হয়েছিলেন।
শেয়ারবার্তা / হামিদ