পুঁজিবাজারে সদ্য তালিকাভুক্ত কোম্পানি রিং সাইন টেক্সটাইলের শেয়ার ও কর্পোরেট অফিসের ঠিকানা পরিবর্তন হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সাভার ছেড়ে রাজধানীর গুলশানের বারিধারার নতুন অফিস নিয়েছে।
কোম্পানিটির দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ডিএসই জানিয়েছে, আগে রিং সাইনের শেয়ার ও কর্পোরেট অফিস ছিল সাভারে গণকবাড়ির ডিইপিজেডের ২২৪-২৬০ নম্বর প্লটে। সেখান থেকে প্রতিষ্ঠানটি গুলশানের বারিধারা মডেল টাউনের ৬ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাসায় অফিস নিয়েছে। গত ৮ জানুয়ারি এ অফিস পরিবর্তন করা হয়েছে।
এর আগে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) ঘোষণা দেয়া ব্যাংকের পরিবর্তে অন্য ব্যাংকে ঋণ পরিশোধ করার তথ্য জানায় রিং সাইন টেক্সটাইল। কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিএসই জানায়, প্রসপেক্টাসে ঢাকা ব্যাংক এবং ওরি ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করার কথা বলা হয়। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ওরি ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেছে।
তবে এ সময়ের মধ্যে প্রিমিয়াম ব্যাংকে ঋণ তৈরি হয়েছে। সে কারণে রিং সাইনের পরিচালনা পর্ষদ এখন ওরি ব্যাংকের পরিবর্তে প্রিমিয়ার ব্যাংকের ২২ কোটি টাকা পরিশোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মেশিনারিজ আমদানিতে ৯৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা, ঋণ পরিশোধে ৫০ কোটি টাকা এবং আইপিও বাবদ ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা খরচের জন্য আইপিওতে ১৫ কোটি সাধারণ শেয়ার ছেড়ে ১৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করে রিং সাইন টেক্সটাইল।
গত বছরের ১২ মার্চ পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আইপিওর মাধ্যমে কোম্পানিটিকে পুঁজিবাজার থেকে টাকা তোলার অনুমোদন দেয়। অনুমোদন নিয়ে ২৫ আগস্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আইপিও আবেদন গ্রহণ করে। আর গত ১২ ডিসেম্বর থেকে শেয়ারবাজারে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার লেনদেন শুরু হয়।
লেনদেন শুরু এক সপ্তাহের মাথায় রিং সাইন টেক্সটাইল অনুমোদিত মূলধন বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। কোম্পানিটি অনুমোদিত মূলধন ৪৪০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫৪০ কোটি টাকা করবে। ইতোমধ্যে আরজেএসসি থেকে এ বিষয়ে অনুমোদন নেয়া হয়েছে।
আইপিওর মাধ্যমে টাকা তোলার পর শেয়ারবাজারে রিং সাইন টেক্সটাইলের তালিকাভুক্ত নিয়ে বেশ নাটকীয়তার সৃষ্টি হয়। ডিএসইর পর পর দু’টি পর্ষদ সভাতে প্রতিষ্ঠানটির আইপিও অনুমোদন পাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
ডিএসইর পক্ষ থেকে বলা হয়, অস্তিত্বহীন ইউনিভার্স নিটিং কোম্পানির নামে রিং সাইন টেক্সটাইলের প্রায় ২৫ কোটি টাকার শেয়ার রয়েছে। রিং সাইন টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইউনিভার্স নিটিংয়ের চেয়ারম্যান পদে আছেন, যা অনৈতিক। এ বিষয়ে ডিএসই থেকে বিএসইসিতে একটি অভিযোগও দেয়া হয়।
এরপর গত ৫ নভেম্বর কমিশন সভা করে বিএসইসি জানায়, বিএসইসির তদন্তে বেরিয়ে এসেছে রিং সাইন টেক্সটাইল নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য মিথ্যা। ইউনিভার্স নিটিং গার্মেন্টসের চেয়ারম্যান সুং ওয়ে মিন রিং সাইন টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বিষয়টি প্রসপেক্টাসের ১৯৫ পৃষ্টায় উল্লেখ করা আছে।
এছাড়া ইউনিভার্স নিটিং কোম্পানির নিয়মিত পরিচালনায় সক্রিয় থাকার প্রমাণাদি কমিশনে পাঠায় রিং সাইন। বলা হয়, এতে কোনো আইন লঙ্ঘন হয়নি। যাতে বিষয়টি সভায় ডিসক্লোজার ভিত্তিতে সমাধান হয়েছে।
তবে শেয়ারবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে রিং সাইন টেক্সটাইলের এমডির স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইউনিভার্স নিটিং গার্মেন্টস কর্তৃক রিং সাইনের ধারণ করা শেয়ারে ১ বছরের পরিবর্তে ৩ বছর লক-ইনের শর্তারোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। কমিশনের এ সিদ্ধান্তের পর প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার লেনদেনের সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসই।
এদিকে ডিএসই সিদ্ধান্ত নেয়ার আগেই ২০ নভেম্বর সর্বশেষ হিসাব বছরের জন্য ১৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করে রিং সাইন টেক্সটাইল। ফলে তালিকাভুক্তি নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। বিদ্যমান দুটি আইনের সাংঘর্ষিক অবস্থার কারণে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন নিয়ে এ জটিলতা দেখা দেয়।
বিদ্যমান আইন অনুসারে, লভ্যাংশ সংক্রান্ত ঘোষণার পরবর্তী লেনদেন দিবসে সার্কিট ব্রেকার বা শেয়ারের মূল্য পরিবর্তনের সীমা থাকে না। এ হিসেবে রিং সাইনের শেয়ার লেনদেন শুরুর প্রথম দিনে সার্কিট ব্রেকার থাকার কথা নয়।
কিন্তু সম্প্রতি জারি করা বিএসইসির একটি নির্দেশনা অনুসারে, আইপিও পরবর্তী প্রথম লেনদেনের দিন থেকেই সার্কিট ব্রেকার কার্যকর হবে। আইনের এই জটিলতার প্রেক্ষিতে ডিএসইর সিদ্ধান্তের পরও রিং সাইনের শেয়ার লেনদেন চালু করতে দেরি হয়। অবশ্য সব জটিলতার অবসান ঘটিয়ে ১২ ডিসেম্বর থেকে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন শুরু হয়েছে।
শেয়ারবার্তা / আনিস