পুঁজিবাজারে গত কয়েক মাসের পতনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানিগুলো। যেসব কোম্পানির পতনে পুরো পুঁজিবাজারে কম্পন তৈরী হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে গ্রামীণফোন।
পুঁজিবাজারে যতগুলো মৌলভিত্তির কোম্পানি আছে, তারমধ্যে অন্যতম ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি), গ্রামীণফোন, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন ও অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ। এ কোম্পানিগুলো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্লু-চিপস কোম্পানির তালিকায়ও রয়েছে।
গত বছর আকস্মিক গ্রামীণফোনের কাছে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা পাওনা দাবি করে বসে বিটিআরসি। যা নিয়ে ঊভয়পক্ষের মধ্যে দ্বন্ধ তৈরী হয়। বিষয়টি দেশের সর্বোচ্চ আদালতে গড়ায়। সেখানেও গ্রামীণফোনের বিপক্ষে রায় গেছে। সার্বিকভাবে এই পাওনার দ্বন্ধ গ্রামীণফোনের দর পতনে ভূমিকা রেখেছে। যা পুরো বিদেশী বিনিয়োগকারীসহ পুঁজিবাজারে নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।
পুঁজিবাজারে ধসের পেছনে বিটিআরসি ও গ্রামীণফোনের দ্বন্ধকে মূল কারণ হিসাবে উল্লেখ করে বিএসইসি চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) অফিস ও ওয়েবসাইট উদ্ধোধনীতে বলেন, গ্রামীণফোনের সাথে বিটিআরসির যে একটা ঝামেলা শুরু হয়, এতে শুধুমাত্র গ্রামীণফোনের ক্ষতি হয়নি। পুরো পুঁজিবাজারের কাঠামো ধ্বংস হয়েছে। কারণ বিদেশিরা যখন আসে তখন ফান্ডামেন্টাল শেয়ার দেখে। তারা গ্রামীণফোনের পাশাপাশি অলিম্পিক, ইউনাইটেড পাওয়ার, বিএটিবিসি এবং স্কয়ার ফার্মার শেয়ার কেনে। আর বিটিআরসি ও গ্রামীণফোনের দ্বন্ধের কারনে সবগুলোতেই বিক্রি করেছে। শুধুমাত্র গ্রামীণফোন আর বিএটিবিসি বিক্রি করার ফলে বিগত দুই মাসে ১৭৪ পয়েন্ট পরেছে। স্কয়ার ফার্মা, গ্রামীণফোন, ইউনাইটেড পাওয়ার, বিএটিবিসি এবং অলিম্পিক এই ৫টি কোম্পানি মার্কেট পতনের জন্য ৮০ শতাংশই দায়ী।’
দেখা গেছে, ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারির ব্যবধানে সিকিউরিটিজের দাম (বাজার মূলধন) কমেছে ৬০ হাজার ৬২০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এরমধ্যে ওই ৫ কোম্পানির অবদান ২৩ হাজার ৯২৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বা ৩৯ শতাংশ।
ওই ৫ কোম্পানির মধ্যে ৩টির পর্ষদ সর্বশেষ অর্থবছরের ব্যবসায় বোনাস শেয়ার দিয়েছিল। অর্থাৎ কোম্পানিগুলো মুনাফা শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে বিতরনের পরিবর্তে বোনাস শেয়ার প্রদান করেছিল। এতে কোম্পানিগুলোর বাজার মূলধনে ইতিবাচক প্রভাব পড়া স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু এরপরেও কোম্পানিগুলোর বাজার মূলধন কমেছে।
বোনাস শেয়ারের কারনে আগের বছরের থেকে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর পরিশোধিত মূলধন ১২০ কোটি বেড়ে হয়েছে ১৮০ কোটি টাকা। এছাড়া ইউনাইটেড পাওয়ারের ৪৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা বেড়ে হয়েছে ৫২৭ কোটি এবং স্কয়ার ফার্মার ৫৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা বেড়ে হয়েছে ৮৪৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। তবে বোনাস শেয়ার না দেওয়ার গ্রামীণফোন ও অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের মূলধন বাড়েনি।
গত ১ বছরের ব্যবধানে বিএটিবিসি কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে ৭২.১৬ শতাংশ। কোম্পানিটির ২০১৯ সালের শুরুতে শেয়ার দর ছিল ৩৫০৪.৪০ টাকা। যে শেয়ারটি এ বছরের ৭ জানুয়ারি দাড়িঁয়েছে ৯৭৫.৬০ টাকায়। এ হিসাবে দর কমেছে ২৫২৮.৮০ টাকা বা ৭২.১৬ শতাংশ।
এদিকে বিএটিবিসির শেয়ারটি ২০১৮ সালের জন্য ঘোষিত ২০০ শতাংশ বোনাস শেয়ার সমন্বয়ে হয়েছিল ১৫২১.৮৩ টাকা। এই বিবেচনায়ও শেয়ারটির দর কমেছে ৩৬ শতাংশ।
শেয়ারবার্তা/ সাইফুল