পুঁজিবাজারে পতন অব্যাহত থাকায় মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর পোর্টফোলিও খুব খারাপ অবস্থানে রয়েছে। এখান থেকে না পারছে বেরোতে, না পারছে ধরে রাখতে। আবার পুঁজিবাজারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হচ্ছে আইসিবি। বাজার যখন খারাপের দিকে যায়, তখন একে স্থিতিশীল রাখার দায়িত্ব আইসিবির। আইসিবি একাই ৫০ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করে। কিন্তু কেন তারা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না, এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
খুজিস্তা নুর-ই-নাহারিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএমএসএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের এমডি ও সিইও মো. রিয়াদ মতিন এবং প্রিলিংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ডা. মো. জহিরুল ইসলাম।
মো. রিয়াদ মতিন বলেন, বাজারের এ অবস্থায় এখন মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর পোর্টফোলিও খারাপ অবস্থানে রয়েছে। এখান থেকে না পারছি বেরোতে আবার না পারছি ধরে রাখতে। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোও সংকটে রয়েছে। আবার পুঁজিবাজারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হচ্ছে আইসিবি। বাজার যখন খারাপের দিকে যায় তখন একে স্থিতিশীল রাখার দায়িত্ব আইসিবির। অর্থাৎ পুঁজিবাজারে আইসিবির বড় একটি ভূমিকা রয়েছে, কারণ আইসিবি একাই ৫০ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করে। কিন্তু কেন তারা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না, এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত। লাখ লাখ মানুষ এ বাজারে বিনিয়োগ করেছেন এবং এর সঙ্গে তাদের পরিবার জড়িত রয়েছে। বাজারের এ সংকটে সরকারের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নজরদারি করা উচিত।
ডা. মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারে এখন মূল সমস্যা আস্থার সংকট। আরেকটি হচ্ছে বাজারে অর্থপ্রবাহ অনেক কম। যারা এ বাজারের সঙ্গে জড়িত, বিশেষ করে মার্চেন্ট ব্যাংক, মিউচুয়াল ফান্ড ও ব্রোকারেজ হাউসগুলো এখন এমন অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে যে, তারা নতুন করে বিনিয়োগ করবে, সে অবস্থায় নেই। তাই এ বাজারকে রক্ষা করতে হলে নজর দিতে হবে, পর্যাপ্ত অর্থপ্রবাহ বাড়াতে হবে। এছাড়া সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। যেসব কোম্পানি বাজারে আসবে, সেসব কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন ঠিক আছে কি না, সেটি সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এ বিষয়গুলো বাজারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যখন বাজারে ভালো কোম্পানি আসে, তখন এমনিতেই বাজার ঘুরে দাঁড়ায়। যখনই খারাপ কোম্পানি আসে, তখনই বাজারের দৃশ্য নেতিবাচক হয়ে যায়। সেটার ফলাফল এখন বাজারে দেখা যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ভারতে মোট জনসংখ্যার পাঁচ শতাংশ লোক পুঁজিবাজারের সঙ্গে জড়িত। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫০ শতাংশ লোক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে। আর আমাদের মোট জনসংখ্যার এক শতাংশের নিচে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে। এ বাজার সম্পর্কে তারা তেমন পরিচিত নয়। আবার যারা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, আশপাশের দেশের তুলনায় তাদের অংশগ্রহণ খুবই নগণ্য। আসলে আমাদের নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য নেই। দীর্ঘ পরিকল্পনা করে বাজারের কীভাবে উন্নয়ন করা যায় এবং কীভাবে সাধারণ বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা যায়, সেটার কোনো প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে না। আবার যখন কোনো পলিসি গঠন করা হয়, কিছুদিন পর আবার সেই পলিসি পরিবর্তন ও পরিমার্জন করা হয়। এর ফলে পলিসিগুলো স্থিতিশীল রাখা যায় না। তখন বিনিয়োগকারীর আস্থার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। তাহলে কি বারবার পলিসি পরিবর্তন হবে? এজন্য যেকোনো পরিকল্পনা দীর্ঘস্থায়ী হওয়া উচিত। আবার প্রত্যেক বছরে প্রায় ১০টি কোম্পানি আইপিও’র মাধ্যমে বাজারে আসে। এটি আগে থেকেই হয়ে আসছে। এখন আইপিও বন্ধ রাখলেই বাজারে রাতারাতি অর্থপ্রবাহ বেড়ে যাবে, তা ভাবা ঠিক নয়। আইপিও’র সরবরাহ বাড়াতে হবে। তবে সেটি ভালো মানের আইপিও হতে হবে, যাতে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হয়।
শেয়ারবার্তা / ৮ জানুয়ারি ২০২০