বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি ট্রাস্টে ৭১ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে আট ব্যাংক।
জাতির পিতার কন্যা হিসেবে মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে কাজ করে যাচ্ছেন, তাই তার ওপর ভরসা রাখতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের এক বছরপূর্তি উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান। এ সময় জনগণের একজন হয়ে থাকতে চান বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাধারণ মানুষকে ঘিরেই আমার সকল কার্যক্রম। আপনাদের (জনগণ) ওপর আমার পূর্ণ আস্থা রাখি। বাংলাদেশের মানুষ অসাধারণ পরিশ্রমী এবং উদ্ভাবন ক্ষমতাসম্পন্ন। যেকোনো পরিস্থিতির সঙ্গে তারা নিজেদের মানিয়ে নিতে সক্ষম। অল্পতেই সন্তুষ্ট এ দেশের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। জাতির পিতা আজীবন সংগ্রাম করেছেন এসব মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য, তাদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। তার কন্যা হিসেবে আমার জীবনেরও একমাত্র লক্ষ্য মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। আমার ওপর ভরসা রাখুন। আমি আপনাদেরই একজন হয়ে থাকতে চাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর সরকার গঠনের এক বছর পূর্ণ হলো। বিগত এক বছর চেষ্টা করেছি জনগণকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে। সব ক্ষেত্রে শতভাগ সফল হয়েছি, তা দাবি করা যাবে না। কিন্তু এটুকু জোর দিয়ে বলা যায়, চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। অতীতের ভুলভ্রান্তি এবং অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাব। সামনে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসবে। সকলের সহযোগিতায় সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। পবিত্র ইসলাম ধর্মের অপব্যাখ্যা করে কেউ যেতে তরুণদের বিপথে পরিচালিত করতে না পারে, সে জন্য মসজিদের ইমামসহ ধর্মীয় নেতাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাই। যেখানে হিংসা-বিদ্বেষ হানাহানি থাকবে না। সকল ধর্ম-বর্ণ এবং সম্প্রদায়ের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন। সকলে নিজ নিজ ধর্ম যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালন করতে সক্ষম হচ্ছেন।’
প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও সৌহার্দ্য বজায় রাখাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘আলোচনার মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সমস্যা সমাধান করা হচ্ছে। এটি আমাদের দুর্বলতা নয়, কৌশল। এ কারণেই মিয়ানমারের দিক থেকে নানা উসকানি সত্ত্বেও সে ফাঁদে পা দিইনি। আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথ থেকে সরে যাইনি।’
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত বছর দু–একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের প্রশ্রয় দেওয়া হয়নি। জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে প্রশাসনিক এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো মহল গুজব ছড়িয়ে অরাজকতা সৃষ্টির মাধ্যমে ফায়দা লোটার চেষ্টা করেছে। সেসব অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিয়েছি।’
২০২০ সালকে জাতীয় জীবনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ বছর উদযাপিত হতে যাচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। আগামী ১৭ মার্চ বর্ণাঢ্য উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার শুভ সূচনা হবে। ইতিমধ্যেই ২০২০-২১ সালকে মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।’
‘২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনের অনুষ্ঠানমালা যুগপৎভাবে চলতে থাকবে। এই উদ্যাপন শুধু আনুষ্ঠানিকতাসর্বস্ব নয়, এই উদ্যাপনের লক্ষ্য জাতির জীবনে নতুন জীবনীশক্তি সঞ্চারিত করা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাঙালি জাতি বীরের জাতি। এমন জাতি পৃথিবীতে কোনো দিন পিছিয়ে থাকতে পারে না। বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। আসুন, দলমত–নির্বিশেষে সকলে মিলে তার স্বপ্নের ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার জন্য নতুন করে শপথ নিই।’
শেয়ারবার্তা / মিলন