পুঁজিবাজারে নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রথম দিনে সার্কিট ব্রেকার আরোপ করার পর সোমবার বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে আসা এডিএন টেলিকমের লেনদেন হয়। এদিন দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ প্রথমে ৩০ টাকা ভিত্তি মূল্য ধরে সার্কিট ব্রেকার আরোপ করেছিল। পরে লেনদেন শুরুর আগ মুহূর্তে সেটি পরিবর্তন করে ২৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করেছেন, স্টক এক্সচেঞ্জগুলো ভুল সিদ্ধান্ত নিলে তারা সিদ্ধান্তহীনতায় পড়েন। এতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। ২৭ টাকাই সঠিক বলছেন স্টক এক্সচেঞ্জ সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, কোম্পানির অর্থ উত্তোলনের জন্য বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে ইস্যু মূল্য নির্ধারণের জন্য যোগ্য বিনিয়োগকারীদের বিডিংয়ের অনুমোদন প্রদান করা হয়েছিল। যোগ্য বিনিয়োগকারীরা বিডিংয়ের মাধ্যমে কোম্পানির প্রতিটি শেয়ার ৩০ টাকায় প্রান্ত-মূল্য (কাট অফ প্রাইস) নির্ধারণ করে। সে অনুযায়ী এক কোটি ১৮ লাখ ৭৫ হাজার সাধারণ শেয়ার ৩০ টাকা মূল্যে যোগ্য বিনিয়োগকারী ও ২৭ টাকা মূল্যে (কাট-অফ মূল্য থেকে ১০ শতাংশ বাট্টায়) ৭৯ লাখ ১৬ হাজার ৬৬৬টি সাধারণ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীর (অনিবাসী বাংলাদেশিসহ) নিকট ইস্যুর প্রস্তাব অনুমোদন করেছে কমিশন।
কিন্তু প্রথম দিন লেনদেনে ৩০ টাকা নাকি ২৭ টাকা নির্ধারিত হবে এটি নিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রাম উভয় স্টক এক্সচেঞ্জই প্রথমে ভুল করেছিল। প্রথমে ৩০ টাকা মূল্যের ওপর ৫০ শতাংশ সার্কিট ব্রেকার দিয়ে ৪৫ টাকা নির্ধারণ করে। পরে লেনদেন শুরুর এক মিনিট আগে ঠিক করে ২৭ টাকার ওপর সার্কিট ব্রেকার বসায়। গতকাল ৪০ টাকা ৫০ পয়সা অর্থাৎ সার্কিট ব্রেকারে স্পর্শ করে লেনদেন শেষ হয়।
বিনিয়োগকারীরা বলছেন, বিষয়টি স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর উচিত ছিল আগেই সুরাহা করা। এভাবে হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত পরিবর্তিত হলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। স্টক এক্সচেঞ্জ যদি সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত না নিতে পারে- তাহলে বিনিয়োগকারীরাও সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করবেন।
এ বিষয়ে ডিএসই’র পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, আগে যেটিই হউক শেষ মুহূর্তে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, সেটি সঠিক। তাই এ নিয়ে কোনো ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ নেই। বিনিয়োগকারীরা যে মূল্যে কিনেছে তার ওপর ভিত্তি করে সার্কিট ব্রেকার নির্ধারণ করা হয়েছে।
স্টক এক্সচেঞ্জ কেন দু’ রকম সিদ্ধান্ত নিলো বা প্রথমেই সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে কেনো ব্যর্থ হলো তা জানতে চাইলে ডিএসই’র পরিচালক শাকিল রিজভী দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’কে বলেন, সার্কিট ব্রেকার আরোপের পর এই প্রথম কোনো বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে আসা কোম্পানির লেনদেন হয়েছে। তাই কাট অফ প্রাইস ও অফার প্রাইস নিয়ে সমস্যা হয়েছে। এর আগে একটি কোম্পানি এসেছিল সেটি ফিক্সড প্রাইসে বাজারে এসেছিল। তাই সেখানে জটিলতা ছিল না। পরবর্তীতে আর সমস্যা হবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
জানা গেছে, গত বছরের ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আইপিও’তে আসা কোম্পানির লেনদেনের প্রথম দিনে ইস্যু মূল্যের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত দর বাড়তে পারবে। দ্বিতীয় দিন প্রথম দিনের ক্লোজ প্রাইজের ৫০ শতাংশ বাড়তে পারবে। তৃতীয় দিন থেকে অন্যান্য কোম্পানির মতো সার্কিট ব্রেকার প্রযোজ্য হবে।
গত ২৮ নভেম্বর কোম্পানির লটারির ড্র অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয় এবং ৪ নভেম্বর থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আবেদন গ্রহণ করে। গত ৩ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির আইপিও অনুমোদন করেছে বিএসইসি। আইপিও’তে শেয়ারের ইস্যু মূল্য নির্ধারিত হয়েছে ২৭ টাকা।
পুঁজিবাজার থেকে এডিএন টেলিকম ৫৭ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কাছে এক কোটি ১৮ লাখ ৭৫ হাজার শেয়ার ৩০ টাকা দরে বিক্রি করে ৩৫ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হয়। বাকি ২১ কোটি ৩৭ লাখ ৪৯ হাজার ৯৮২ টাকা সাধারন বিনিয়োগকারীদের কাছে ৭৯ লাখ ১৬ হাজার ৬৬৬টি শেয়ার ২৭ টাকা দরে বিক্রির মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়।
আইপিও’র মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থ কোম্পানিটি ভৌত কাঠামো উন্নয়ন, ডাটা সেন্টার স্থাপন, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ এবং আইপিও খরচ খাতে ব্যয় করবে।
এদিকে কোম্পানির প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর ১৯) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৪৪ পয়সা। আইপিও’র পরবর্তী শেয়ার হিসাবে এই ইপিএস হয়েছে। একই সময় কোম্পানির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য বা এনএভি হয়েছে ২৩ টাকা ৮৫ পয়সা।
এদিকে ৩০ সেপ্টেম্বর শেষে কোম্পানির কর পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৬৩ পয়সা (আইপিও’র আগের হিসাবে)।
আগের বছর একই সময় কোম্পানির মুনাফা ছিল ২ কোটি ১৬ লাখ টাকা এবং ইপিএস ছিল ৪৮ পয়সা।
কোম্পানির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলো আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড।
শেয়ারবার্তা / হামিদ