1. [email protected] : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক
  2. [email protected] : শেয়ারবার্তা : nayan শেয়ারবার্তা
  3. [email protected] : news uploder : news uploder
শেয়ারবাজারে পচা শেয়ারের দাপট চলছেই
শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:৫৯ পিএম

শেয়ারবাজারে পচা শেয়ারের দাপট চলছেই

  • আপডেট সময় : শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

সার্বিক শেয়ারবাজারে মন্দা চললেও কারখানা বন্ধ, উৎপাদন নেই, ব্যবসায় লোকসান, বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে পারছে না- এমন বেশকিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েই চলেছে। লোকসানে নিমজ্জিত কোম্পানির শেয়ারের দাম টানা কয়েক সপ্তাহ বাড়ার ঘটনাও ঘটেছে। স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে বিনিয়োগকারীদের বার বার সতর্ক কারার পরও এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ার প্রবণতা থামছে না।

স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে চারটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানি থাকে ‘এন’ গ্রুপে। তালিকাভুক্তির পর এক আর্থিক বছর পর হলে কোম্পানিগুলো ‘এ’, ‘বি’ ও ‘জেড’ গ্রুপে বিভক্ত হয়। এর মধ্যে ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানির স্থান হয় ‘এ’ গ্রুপে। ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানি থাকে ‘বি’ গ্রুপে। আর লভ্যাংশ না দিতে পারা কোম্পানির স্থান হয় ‘জেড’ গ্রুপে। জেড গ্রুপের কোম্পানিকে শেয়ারবাজারের পচা কোম্পানি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

গত সপ্তাহে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম বাড়ার শীর্ষে থাকা ১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬টিই ‘জেড’ গ্রুপের। বাকি চারটি প্রতিষ্ঠান ‘বি’ গ্রুপের। অর্থাৎ ভালো কোম্পানিগুলোর একটিও দাম বাড়ার শীর্ষ দশে স্থান পায়নি। এমনকি দাম বাড়ার শীর্ষ চারটি স্থানও দখল করেছে ‘জেড’ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান।

‘জেড’ গ্রুপের যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার শীর্ষে রয়েছে, এর মধ্যে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের শেয়ারের দাম কয়েক সপ্তাহ ধরেই বাড়ছে। গত সপ্তাহেও কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বড় অঙ্কে বেড়েছে। কারখানা ও উৎপাদন বন্ধ থাকা লোকসানে নিমজ্জিত এই কোম্পানিটি কয়েক বছর ধরে বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিচ্ছে না।

এরপরও এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীর কাছে কোম্পানিটির শেয়ার পছন্দের শীর্ষে রয়েছে। ফলে হু হু করে শেয়ারের দাম বাড়ছে। কোম্পানিটির শেয়ারের এমন দাম বাড়াকে অস্বাভাবিক বলছে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। এ জন্য বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করতে কয়েক দফায় সতর্ক বার্তাও প্রকাশ করেছে। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েই চলেছে।

গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ২৫ দশমিক ৭১ শতাংশ। টাকার অঙ্কে প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ৫ টাকা ৪০ পয়সা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ২৬ টাকা ৪০ পয়সা, যা আগের সপ্তাহের শেষে ছিল ২১ টাকা। এতে এক সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম সম্মিলিতভাবে বেড়েছে ৩৯ কোটি ৪৪ লাখ ১৬ হাজার টাকা।

শুধু গত সপ্তাহ নয়, তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম টানা বাড়ছে। গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ে ২২ দশমিক ৮১ শতাংশ। টাকার অঙ্কে প্রতিটি শেয়ারের দাম বাড়ে ৩ টাকা ৯০ পয়সা। এতে এক সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম সম্মিলিতভাবে বেড়েছে ২৮ কোটি ৪৮ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।

তার আগের সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ে ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে প্রতিটি শেয়ারের দাম বাড়ে ৩ টাকা ৮০ পয়সা। ১৩ টাকা ৩০ পয়সা থেকে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ১৭ টাকা ১০ পয়সা ওঠে। এতে এক সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম সম্মিলিতভাবে বাড়ে ২৭ কোটি ৭৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা।

অন্যভাবে বলা যায়, তিন সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ১৩ টাকা ১০ পয়সা বা ৯৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। এছাড়া সম্মিলিতভাবে শেয়ারের দাম বেড়েছে ৯৫ কোটি ৬৮ লাখ ২৪ হাজার টাকা।

অবশ্য এক মাসের হিসাব করলে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ার হার অনেক বেশি। গত ২৩ ডিসেম্বর কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৭ টাকা ২০ পয়সা। এখান থেকেই কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়া শুরু হয়। ৭ টাকা ২০ পয়সা থেকে এখন কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ২৬ টাকা ৪০ পয়সায় উঠেছে। অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ১৯ টাকা ২০ পয়সা। শেয়ারের এই দাম বৃদ্ধির হার ২৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানিটি ২০১৪ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালে ১ শতাংশ নগদ এবং ২০১৫ সালে ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি।

২০২০ সালের পর বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দিতে না পারায় শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির স্থান হয়েছে পচা ‘জেড’ গ্রুপে। এমনকি কোম্পানিটি নিয়মিত আর্থিক প্রতিবেদনও প্রকাশ করে না। সর্বশেষ ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটি আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ২০২২ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসের ব্যবসায় কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি লোকসান করে ১১ পয়সা।

বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে না পারা এবং নিয়মিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ না করা এই কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়াকে অস্বাভাবিক বলছে ডিএসই। ডিএসই থেকে জনানো হয়েছে, শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিটিকে নোটিশ পাঠানো হয়। জবাবে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে- শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পেছনে কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।

২০২৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ডিএসই থেকে কোম্পানিটির প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনে ডিএসইর প্রতিনিধিদল দেখতে পায়, কোম্পানিটির কার্যক্রম এবং উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই তথ্য প্রকাশ করেও বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করেছে ডিএসই। এরপরও শেয়ারের দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।

কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৭ কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার। এর মধ্যে উদ্যোক্তার কাছে ৩৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ শেয়ার আছে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৫৯ দশমিক ১৩ শতাংশই আছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে এক দশমিক ১১ শতাংশ শেয়ার।

খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের শেয়ারের দাম বড় অঙ্কে বাড়লেও গত সপ্তাহে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে সব থেকে বড় দাপট দেখিয়েছে আর এক পচা কোম্পানি ডেল্টা স্পিনিং। পাঁচ কার্যদিবসে ৩৯ দশমিক ১৩ শতাংশ দাম বাড়ার মাধ্যমে ডিএসইতে দাম বাড়ার শীর্ষস্থান দখল করেছে ২০১৭ সালের পর বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দিতে না পারা এই কোম্পানিটি। আর খুলনা প্রিন্টিং রয়েছে দাম বাড়র শীর্ষ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে।

গত সপ্তাহে ডেল্টা স্পিনিংয়ের প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে এক টাকা ৮০ পয়সা। এতে সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ২৯ কোটি ৯৬ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৫ টাকা। শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানাটি ২০১৭ ও ২০১৬ সালে বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ করে বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয়। তার আগে ২০১৫ সালে ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। বছরের পর বছর ধরে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে না পারায় কোম্পানিটির স্থান হয়েছে ‘জেড’ গ্রুপে।

দাম বাড়ার শীর্ষ তালিকায় স্থান করে নেওয়া ‘জেড’ গ্রুপের বাকি চার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- তাল্লু স্পিনিং, প্রাইম টেক্সটাইল, গ্লোবাল হেবি কেমিক্যাল এবং খুলনা পাওয়ার। এর মধ্যে তাল্লু স্পিনিংয়ের ২১ দশমিক ৫৭ শতাংশ, প্রাইম টেক্সটাইলের ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ, গ্লোবাল হেবি কেমিক্যালের ১২ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং খুলনা পাওয়ারের শেয়ারের দাম ৮ দশমিক ২০ শতাংশ বেড়েছে।

গত সপ্তাহে দাম বাড়ার শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় থাকা হাক্কানী পাল্পের ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ, সোনারগাঁও টেক্সটাইলের ১০ দশমিক ১৪ শতাংশ, চাটার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের ৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ দাম বেড়েছে।

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:

ভালো লাগলে শেয়ার করবেন...

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ