পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো যাতে নগদ লভ্যাংশ প্রদানে উৎসাহিত হয় এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা যাতে এটি অনুমোদন করে, সে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক দরপতনের পরিপ্রেক্ষিতে বাজার স্থিতিশীলতায় ত্বরিত পদক্ষেপ হিসেবে এ প্রস্তাব দেয়া হয়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মো. রকিবুর রহমান সোমবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এসব প্রস্তাব দেন।
প্রস্তাবে সরকারের সব সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে লাভজনক সরকারি কোম্পানি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনার উদ্যোগ নেয়া এবং বাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিল সংকট কাটাতে সহজ শর্তে ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, ২০১৯ হিসাব বছরে ব্যাংকগুলোর ভালো পরিচালন মুনাফা করেছে। ব্যাংকগুলোকে নগদ লভ্যাংশ প্রদানে উৎসাহিত করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকও যেন ব্যাংকগুলোকে ২০১৯ হিসাব বছরে ভালো নগদ লভ্যাংশ ঘোষণার অনুমোদন দেয়। ব্যাংকগুলো নগদের পরিবর্তে স্টক লভ্যাংশ দিলে তাদের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) কমে যাবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়।
পুঁজিবাজারে ভালো মুনাফায় থাকা সরকারি কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগের উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়। প্রস্তাবে বলা হয়, প্রয়োজনে একটি জাতীয় পর্যায়ের সমন্বয় সভা আহ্বান করে লাভজনক সরকারি কোম্পানিগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ডিরেক্ট লিস্টিংয়ের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আনতে হবে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা), বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই) আমন্ত্রণ জানানো যেতে পারে।
বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলা হয়, বাজারের গভীরতা বাড়ানো এবং ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়াতে সরকারের কাছে থাকা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর শেয়ার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ডিরেক্ট লিস্টিংয়ের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে ছাড়ার উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য প্রয়োজনবোধে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর প্রধানদের নিয়ে একটি সভা করা যেতে পারে।
পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট নিরসনের উপায় উল্লেখ করে প্রস্তাবে বলা হয়, স্টক ব্রোকার, স্টক ডিলার, মার্চেন্ট ব্যাংক, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি এবং ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে পুঁজিবাজারে ভূমিকা রাখতে পারে, সেজন্য ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি ব্যাংকগুলো এক্ষেত্রে অর্থায়ন করতে পারে। এ ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত জামানত ও নিরাপত্তা প্রদান করা হবে। ঋণের অর্থ শুধু সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ করা হবে। এক্ষেত্রে যেসব কোম্পানি ভালো পরিমাণে নগদ ও স্টক লভ্যাংশ দেয়, পাঁচ বছরের মধ্যে ন্যূনতম তিন বছর রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, ইকুইটির বিপরীতে গড়ে ৮ শতাংশ হারে রিটার্ন এসেছে এবং বাজার মূলধনের পরিমাণ ন্যূনতম ৫০০ কোটি টাকা, এমন ধরনের কোম্পানিতে ঋণের অর্থ বিনিয়োগ করা হবে বলে প্রস্তাবে জানানো হয়েছে।
শেয়ারবার্তা / হামিদ