বিনিয়োগকারীরা বছরের শুরুতেই বড় ধরনের ধাক্কা খেলেন। বিদায়ী বছরের চলমান পতন এ বছরের শুরুতেই আরও ভারী হয়েছে। পরপর দুই কার্যদিবসের বড় পতনে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিটের বাজার মূলধন হ্রাস পেয়েছে সাত হাজার কোটি টাকার বেশি। পাশাপাশি অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর ও সূচকের ব্যাপক পতন হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীদের হতাশা আরও বেড়েছে। বিনিয়োগকারীদের মতো পতনের কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্টরা।
প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক গত দুই দিনের পতনে ৪৪ মাস আগের অবস্থানে চলে গেছে। দুই দিনে সূচকের পতন হয়েছে ১২৮ পয়েন্ট। গতকাল ৬৮ পয়েন্ট হ্রাস পাওয়ার মধ্যে দিয়ে সূচক নেমে যায় চার হাজার ৩৩২ পয়েন্টে। দুই দিন যার অবস্থান ছিল চার হাজার ৪৫৯ পয়েন্টে। এর আগে ২০১৬ সালের ১৭ মে সূচকের অবস্থান ছিল চার হাজার ৩২৬ পয়েন্ট।
ডিএসইর বাজার মূলধন গত দুই দিনের পতনে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৮১১ কোটি টাকা থেকে তিন লাখ ৩৩ হাজার ৭১২ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। অর্থাৎ দুই দিনে বাজার মূলধন কমেছে ৭ হাজার ৯৮ কোটি টাকা।
বছরের শুরুতে পতন বড় হওয়ায় পুঁজিবাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের উৎকণ্ঠা আরও বাড়ছে। পুঁজির নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন তারা। তাদের অভিমত, এখন যে অবস্থায় রয়েছে, এই অবস্থা থেকে পুঁজিবাজারে অস্বাভাবিক পতন হওয়ার কোনো উল্লেখযোগ্য কারণ নেই। একই ধরনের মন্তব্য করছেন পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা।
অব্যাহত পতনে প্রতিদিনই উধাও হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি। হাতেগোনা কিছু প্রতিষ্ঠান ছাড়া একযোগে কমছে তালিকাভুক্ত সব খাতের শেয়ারের দর, যার জের ধরে আশঙ্কাজনকহারে কমে গেছে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজার মূলধন। গতকাল এক দিনেই বাজারমূলধন কমে গেছে চার হাজার কোটি টাকার বেশি। এর আগের দিন বাজার মূলধন কমে তিন হাজার কোটি টাকা।
এই পরিস্থিতিতে ধৈর্যহারা হয়ে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা, বাড়ছে ক্ষোভ। তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, পুঁজিবাজার নিয়ে তারা খুবই শঙ্কিত। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে তাদের অবস্থা আরও করুণ হবে বলে তারা অভিমত প্রকাশ করেন।
বিনিয়োগকারীরা বলেন, যাদের পুঁজিবাজার নিয়ে ভাবার কথা, আসলে এ নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। তারা চান না পুঁজিবাজার স্থিতিশীল হোক, যে কারণে দীর্ঘমেয়াদি অপেক্ষা করেও আমরা কোনো ফল পাচ্ছি না।
তারা বলেন, বহুদিন থেকে বাজারে নীরব দরপতন চলছে। অথচ বিএসইসিসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা রাখছে না। সবার আগে কারা বাজার নিয়ে কারসাজি করছে, তাদের বের করা দরকার। সেটা করা হচ্ছে না। ফলে বাজারও তার স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসছে না।
এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাব রয়েছে। তবে এর জন্য তারা একা দায়ী তা বলব না। যাদের বাজারকে সাপোর্ট দেওয়ার কথা তারা বর্তমানে চুপ রয়েছে। ফলে বাজারচিত্র বদলাচ্ছে না। তিনি বলেন, এ কথা ঠিক যে বর্তমানে বাজারে বেশিরভাগ শেয়ার সস্তা, কিন্তু এখানে নতুন অর্থ না এলে এসব শেয়ার আরও সস্তা হয়ে যাবে।
একই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর একজন পরিচালক বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট চলছে, যাদের বাজারে আসার কথা তারা আসছেন না। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে।
এজন্য তিনি আইসিবির মতো বড় বড় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীকে দায়ী করে বলেন, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে হাত গুটিয়ে নিয়েছেন। তারা অপেক্ষায় রয়েছেন আরও কম দরে শেয়ার কেনার।
শেয়ারবার্তা / মিলন