শেয়ারবাজারকে স্থিতিশীলতায় ফিরাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরপরও টানা পতন অব্যাহত দেশের শেয়ারবাজারে। সর্বশেষ আইসিবির ঋণ প্রান্তির খবরে গত বুধবার চাঙ্গা হয়েছিল শেয়ারবাজার। তবে আইসিবির ঋণে উচ্চ সুদের খবরে পরপর দুই কর্মদিবস পতন হলেও সব চাপ কাটিয়ে সোমবার উত্থান হয়েছে শেয়ারবাজারে।
হাসিনা সরকারের দীর্ঘ ১৬ বছর পতনে নিমজ্জিত ছিল শেয়ারবাজার। এই দীর্ঘ সময়ে শেয়ারবাজার থেকে ধাপে ধাপে কারসাজির মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অর্থ লুটপাট করা হয়েছে। তবে হাসিনা সরকারের পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দেশের সব সেক্টরের পাশাপাশি শেয়ারবাজার সংস্কারেও হাত দেয়। এরই অংশ হিসেবে সংস্থাটির চেয়ারম্যানকে বাদ দিয়ে নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে নিয়োগ দেওয়া হয়। বাজারের স্থিতিশলতা আনয়নে মাকসুদ কমিশন বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্ত তাতেও স্থিতিশীলতা ফিরছে না শেয়ারবাজার।
তবে শেয়ারবাজার স্থিতিশীলতায় বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) সভরেন গ্যারান্টির বিপরীতে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই ঋণে সুদ নির্ধারণ করা হয় ১০ শতাংশ। ঋণ অনুমোদনের খবরে প্রথমে চাঙ্গা হয়ে উঠে শেয়ারবাজার। সুদ বেশি নির্ধারণ হওয়ায় চাপের কারণে কিছুটা ধসে পড়ে শেয়ারবাজার। তবে সব চাপকে দূরে ঠেলে সোমবার উত্থান হয়েছে শেয়ারবাজারে।
সোমবার (০২ ডিসেম্বর) সূচকের উত্থানে শুরু হয় লেনদেন। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে সূচক ৪২ পয়েন্ট বাড়ে। এরপর সূচক নিচের দিকে নামতে থাকলেও উত্থানের মধ্যেই লেনদেন হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত উত্থান অব্যাহত থাকে শেয়ারবাজারে।
এদিন সূচকের পাশাপাশি দুই শতাধিক কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। বেড়েছে টাকার পরিমাণে লেনদেনও। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) টাকার পরিমাণে লেনদেন ৫০০ কোটি টাকার ঘরে উঠেছে। এদিন উত্থানের কারছে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা ৩ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা ফিরে পেয়েছেন।স্টক ব্রোকারেজ
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, শেয়ারবাজারের প্রাণ হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীরা যখন শেয়ারবাজারে সক্রিয় থাকবে তখনই শেয়ারবাজার নিজস্ব গতিতে হাটতে থাকবে। কোনভাবেই বিনিয়োগকারীদের হতাশ হলে চলবে না। বিনিয়োগকারীদের সাথে সাথে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলো এবং প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজারে সক্রিয় হলে বাজারে কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়।
সোমবারের বাজার পর্যালোচনা
আজ ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৬.৮৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২০১ পয়েন্টে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে‘ডিএসইএস’ ২.৮৯ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৬৮ পয়েন্ট এবং ‘ডিএস-৩০’ সূচক ২.৪৭ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯১৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
এদিন ডিএসইতে ৫০০ কোটি ২৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩৯৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আজ লেনদেন বেড়েছে ১০২ কোটি ৯১ লাখ টাকার বা ২৬ শতাংশ।
ডিএসইতে লেনদেন আজ হওয়া ৩৯৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ২৩৮টির বা ৫৯.৯৫ শতাংশের, কমেছে ৯৮টির বা ২৪.৬৮ শতাংশের এবং দর পরিবর্তন হয়নি ৬১টির বা ১৫.৩৬ শতাংশের।
অপর শেয়ারবাজার সিএসইতে আজ ৬ কোটি ৯১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২২৩ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ১১৩টির, কমেছে ৭৪টির এবং পরিবর্তন হয়নি ৩৬টির।
এদিন সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁডিয়েছে ১৪ হাজার ৫৫৮ পয়েন্টে।