তৈরি পোশাক, চামড়া, প্লাস্টিকসহ বড় বড় খাতে রফতানি ও রফতানি আয় কমেছে। যার প্রভাবে এ খাতে নেতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের ষষ্ঠ মাস ডিসেম্বরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রফতানি কমেছে ১২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। অর্জিত আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে পাঁচ দশমিক ৮৪ শতাংশ কম। তবে আলোচিত সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি বেড়েছে।
রোববার (৫ জানুয়ারি) রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের রফতানি আয়ের সিংহভাগই তৈরি পোশাক খাতের ওপর নির্ভরশীল। বিশ্ববাজারে পোশাকের চাহিদা কম। বছরের শুরু থেকেই রফতানি আদেশ কমেছে। সঙ্গে সঙ্গে পণ্যের মূল্যও কমেছে। এছাড়া অবকাঠামোগত সমস্যা, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন না করা, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহারসহ বিভিন্ন কারণে রফতানি কমে গেছে। রফতানি বাড়াতে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে তালমিলিয়ে সরকারকে সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। পাশাপাশি একক পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে রফতানি পণ্য বহুমুখীকরণে জোর দিতে হবে। তা না হলে আগামীতে রফতানি আয় আরও কমে যাবে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে (জুলাই-ডিসেম্বর) পণ্য রফতানি আয়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয় দুই হাজার ২১২ কোটি মার্কিন ডলার। এর বিপরীতে রফতানি আয় হয়েছে এক হাজার ৯৩০ কোটি ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ দশমিক ৭৭ শতাংশ কম। একইসঙ্গে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রফতানির এ হার পাঁচ দশমিক ৮৪ শতাংশ কম।
ইপিবির তথ্য বলছে, একক মাস হিসাবে গেল ডিসেম্বরে রফতানি আয় হয়েছে ৩৫২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। লক্ষ্য ছিল ৪০৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ডিসেম্বরে রফতানি আয় কমেছে ১৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এছাড়া একক মাস হিসাবে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বরে রফতানি আয় হয়েছিল ৩৪২ কোটি ৬১ লাখ ডলার।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে মোট রফতানি আয়ে পোশাকের অবদান প্রায় ৮৩ শতাংশ। তবে হোমটেক্স, টেরিটাওয়েলসহ এ খাতের অন্যান্য উপখাত হিসাব করলে তৈরি পোশাক খাতের অবদান ৮৫ শতাংশে দাঁড়াবে। তাই তৈরি পোশাকের রফতানি কমলে তার প্রভাব পড়ে পুরো রফতানি খাতে।
আলোচিত সময়ে তৈরি পোশাক খাতের রফতানি আয় কমেছে। অর্থবছরের ডিসেম্বর শেষে পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে এক হাজার ৬০২ কোটি ৪০ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ কম। এ সময় রফতানি প্রবৃদ্ধিও কমেছে দশমিক ৬ দশমিক ২১ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের বড় খাতগুলোতেও রফতানি আয় কমেছে। চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর শেষে কৃষিপণ্য রফতানিতে আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ কম হয়েছে। ডিসেম্বর শেষে কৃষিপণ্য রফতানিতে বাংলাদেশ আয় করেছে ৫২ কোটি ৩৯ লাখ ডলার।
প্লাস্টিক পণ্য রফতানির প্রবৃদ্ধি সামান্য বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ২২ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। ছয় মাসে এ খাতে আয় হয়েছে পাঁচ কোটি ৬৮ লাখ ৬০ হাজার ডলার। ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাত কোটি ২৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার।
আলোচিত সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানির প্রবৃদ্ধি কমেছে; অর্জন হয়নি লক্ষ্যমাত্রাও। ছয় মাসে চামড়াজাত খাত থেকে রফতানি আয় এসেছে ৪৭ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ দশমিক ৪৮ শতাংশ কম। প্রবৃদ্ধিও কমেছে ১০ দশমিক ৬১ শতাংশ।
আলোচিত সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি বেড়েছে। ডিসেম্বর শেষে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতারি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ৫১ কোটি ১৭ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। প্রবৃদ্ধিও গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২১ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেড়েছে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে পণ্য রফতানি করে চার হাজার ৫৩ কোটি ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এ আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি। যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেশি।
চলতি অর্থবছরে (২০১৯-২০২০) রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৪ বিলিয়ন বা পাঁচ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে পণ্য খাতে রফতানির লক্ষ্য সাড়ে ৪৫ বিলিয়ন এবং সার্ভিস সেক্টরে সাড়ে আট বিলিয়ন ডলার। যা গত অর্থবছরের রফতানি আয়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি।
শেয়ারবার্তা / হামিদ