1. [email protected] : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক
  2. [email protected] : শেয়ারবার্তা : nayan শেয়ারবার্তা
  3. [email protected] : news uploder : news uploder
বড় সংকটের মুখে উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৯ পিএম

বড় সংকটের মুখে উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি

  • আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারী, ২০২০
Usmania-Glass-Logo

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি বড় সংকটে রয়েছে। পুরোনো প্রযুক্তির কারখানায় উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, বাজারে অসম প্রতিযোগিতা, নীতিনির্ধারকদের উদাসীনতা, অদক্ষ ব্যবস্থাপনা সব মিলিয়ে কোম্পানিটি এখন উৎপাদন বন্ধের পথে রয়েছে। ইতোমধ্যে একটি উৎপাদন ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে। আর্থিক সংকটে থাকায় প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে এফডিআরও (স্থায়ী আমানত) ভেঙে ফেলেছে।

দেশের ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানটির বেড়ে চলছে লোকসানের মাত্রা। এখন সরকার নগদ অর্থ, নতুন ও উন্নত প্রযুক্তির মেশিনারিজ ইনস্টল (স্থাপন) না করলে কোম্পানিটির পক্ষে ব্যবসা পরিচালনা অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, ১৯৫৯ সালে প্রযুক্তি ও জরাজীর্ণ পুরোনো যন্ত্রপাতি দ্বারা শুধু সাদা রঙের গ্লাস শিট উৎপাদন করে উসমানিয়া। এতে পণ্যের মান নিম্নমানের হলেও উৎপাদনে ব্যয় বেশি ও প্রতিযোগী কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত মূল্য কমানোর প্রতিযোগিতায় থাকায় কয়েক বছর ধরে লোকসানের রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বিক্রি ও চাহিদা কম এবং মজুত বেড়ে যাওয়ায় কোম্পানিটির দুটি ইউনিটের মধ্যে ইউনিট-১-এর উৎপাদন দেড় বছর যাবৎ বন্ধ আছে। এই ইউনিটটির উৎপাদন ক্ষমতা ৬৭ লাখ বর্গফুট। একটি ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ থাকার পরও কোম্পানিটির স্টকে আগের পণ্য জমা রয়েছে।

২০১৭-১৮ হিসাববছরে উৎপাদন করা ৩২ লাখ বর্গফুট সাব-স্ট্যান্ডার্ড গ্লাস শিট লোকসানে বিক্রি করতে হয়েছে কোম্পানিটিকে। এগুলোর উৎপাদন ব্যয় হয়েছিল চার কোটি ৭১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। কিন্তু বিক্রি করা হয় দুই কোটি ৫৪ লাখ আট হাজার টাকায়। ফলে দুই কোটি ১৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে তাদের।

কোম্পানিটির লোকসানের কারণ হিসেবে তিনটি বিষয়কে সামনে এনেছেন কর্মকর্তারা। এর মধ্যে একটি পণ্য উৎপাদন ব্যয়ের থেকে বিক্রি মূল্য কম। অপর দুটি হলো কাঁচামাল ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি এবং উচ্চ বিক্রি কমিশন। অপরদিকে ইউনিট-১-এর মেশিনারিজ মেরামত ছাড়া উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব নয়।

এদিকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কোম্পানিটির মোট লোকসান হয় ১০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। আর লোকসানের ঘাটতি মেটাতে চার কোটি ৭৮ লাখ টাকা এফডিআর (স্থায়ী জমা) ভাঙাতে হয়। এতে কোম্পানিটির এফডিআর কমে দাঁড়ায় সাত কোটি ৯০ লাখ টাকা। তার আগের অর্থবছরে মোট লোকসান হয়েছিল দুই কোটি ৯৩ লাখ টাকা ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আট কোটি তিন লাখ টাকা। এছাড়া কোম্পানি কর্তৃপক্ষ গত তিন অর্থবছর রিজার্ভ থেকে লভ্যাংশ দিয়ে আসছে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরের রিজার্ভ তহবিল থেকে লভ্যাংশ না দেওয়ার বিএসইসি’র নির্দেশনা থাকায় লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হয় কোম্পানিটি। ফলে গত তিন মাসে শেয়ারের বাজারদর কমেছে ৫৫ শতাংশের বেশি।

কোম্পানির নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান খান ওহাব শফিক রহমান অ্যান্ড কোং-এর নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮-১৯ হিসাববছর শেষে কোম্পানিটির পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫ কোটি ৬৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। সরকার যদি নগদ অর্থ এবং নতুন ও উন্নত প্রযুক্তির মেশিনারিজ ইনস্টল করে সহযোগিতা না করে, তাহলে কোম্পানির ভবিষ্যতে ব্যবসা পরিচালনার সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ আছে।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, কোম্পানিটি দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে বড় ধরনের তারল্য সংকটে রয়েছে। কোনো ধরনের দীর্ঘমেয়াদি সম্পদ কেনা ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটি এফডিআর ভেঙে ফেলেছে। আর তারল্য সংকটের পাশাপাশি উসমানিয়া গ্লাস শিটের ফ্যাক্টরি উৎপাদনে বড় ধরনের প্রযুক্তিগত সমস্যায় ভুগছে।

নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান বলছে, কোম্পানিটির উৎপাদন প্রযুক্তি প্রতিযোগীদের তুলনায় পুরাতন। এতে কোম্পানির বিক্রির তুলনায় উৎপাদন ব্যয় বেশি হচ্ছে। ফলে কয়েক বছর ধরে বড় ধরনের পরিচালন লোকসানে রয়েছে কোম্পানিটি। অপরদিকে, কনটেইনার গ্লাস প্লান্ট অর্থাৎ আধুনিক একটি ইউনিটের পরিকল্পনা থাকলেও দুর্বল ব্যবস্থাপনা এর বিস্তারিত বর্ণনা দিতে পারেনি।

বাজার-সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে দেশে কাচের বার্ষিক চাহিদা ২৫ কোটি বর্গফুট। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে দেশের মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৩২ কোটি বর্গফুট। এর মধ্যে পিএইচপি দৈনিক ১৫০ ও নাসির গ্লাস ২৫০ মেট্রিক টন ফ্লোট গ্লাস উৎপাদন করে। আর উসমানিয়া ও এমইবি ৮০ থেকে ১০০ মেট্রিক টন শিট গ্লাস প্রস্তুত করে। বর্তমানে দালান, দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান কিংবা অফিসে সাজসজ্জায় দেয়ালের পরিবর্তে সবচেয়ে বেশি ব্যবহ্নত হচ্ছে এই ফ্লোট গ্লাস। এছাড়া একাধিক প্রতিষ্ঠান গ্লাসের মূল্য সংযোজনকারী পণ্য হিসেবে উন্নত মানের আয়না এবং টেম্পার্ড গ্লাস উৎপাদন ও বাজারজাত করে থাকে। এতে বাজারে ভবিষ্যতে উসমানিয়া গ্লাসের টিকে থাকা সম্ভব হবে না।

প্রতিষ্ঠানটির একাধিক বিনিয়োগকারী বলেন, দীর্ঘদিনের অবহেলা ও উদাসীনতার কারণে বর্তমানে উসমানিয়া গ্লাসের এ অবস্থা। চারদিকে এত উন্নয়ন হচ্ছে; অথচ উসমানিয়ার হচ্ছে করুণ দশা। এ থেকে উত্তরণে কোম্পানির ৯ দশমিক আট একর জমিসহ বেসরকারি খাতে অথবা পিপিপির (সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব) মাধ্যমে আধুনিক কারিগরি ক্ষমতাসম্পন্ন কারখানা করা যেতে পারে। তা না হলে এ কোম্পানি হারিয়ে যাবে। কোম্পানির শেয়ার গড়ে ১০০ টাকা করে কেনা হয়েছিল। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে এখন তা ৪৩ টাকায় নেমে গেছে। আবার ২০১৯-২০ অর্থবছরে কোনো ধরনের লভ্যাংশ দেওয়া হয়নি। সব মিলিয়ে এ কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীরা ভালো নেই।

জানতে চাইলে উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ৬০ বছরের পুরোনো প্রযুক্তি ও জরাজীর্ণ যন্ত্রপাতি দ্বারা গ্লাস শিট উৎপাদন, বাজারের অসম প্রতিযোগিতা, কাঁচামাল ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, বিক্রিতে কমিশন বৃদ্ধি এবং গ্লাসের চাহিদা কমে যাওয়ায় উসমানিয়া লোকসানে আছে। প্রতিযোগী কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত মূল্য কমানোর প্রতিযোগিতায় থাকায় আমাদের লোকসান বাড়ছে। এখন তো এফডিআরের টাকায় চলছে প্রতিষ্ঠান।

নীতিনির্ধারকদের দীর্ঘ সময়ের অবহেলা, নতুন বিনিয়োগ পরিকল্পনা না থাকা ও লভ্যাংশ না পাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা হতাশ। এ প্রসঙ্গে মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, উদাসীনতা আগের ব্যবস্থাপনার বিষয়। লোকসানি কোম্পানি তো লভ্যাংশ দিতে পারে না। ফলে স্বাভাবিকভাবে বিনিয়োগকারীরা হতাশ হবেন। এছাড়া লভ্যাংশ না দেওয়ায় শেয়ারের দাম অর্ধেকের বেশি কমেছে, তাও স্বাভাবিক। তবে বিনিয়োগকারীদের জন্য সুখবর আছে-দ্রুত সময়ে আমাদের কনটেইনার প্লান্ট স্থাপনের কাজ শুরু হবে। এতে বিসিআইসি ৩০০ কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ করবে। এ বিনিয়োগ প্রকল্পে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে এক টাকাও নেওয়া হবে না।

শেয়ারবার্তা / আনিস

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:

ভালো লাগলে শেয়ার করবেন...

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ