ধারাবাহিক অনিয়ম ও লুটতরাজের কারণে গত আড়াই বছরের বেশি সময় যাবত দেশের শেয়ারবাজার পতনের বৃত্তে আটকে ছিল। এরফলে শেয়ারবাাজরের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা তৈরি হয়।
দেশের শেয়ারবাজারকে স্বচ্ছ, গতিশীল ও শিল্পায়নের অর্থ সংগ্রহেরনির্ভরযোগ্য উৎস হিসাবেগড়ে তোলারজন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সংস্কারের দাবি তুলেছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। একইসাথে প্রতিষ্ঠানটির দলবাজ চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের নিরপেক্ষ তদন্ত করে আইনুনাগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেছেন শেয়াবাজারের বিনিয়োগকারীরা।
গত মঙ্গলবার পুঁজিবাজার ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত বিনিয়োগকারীদের এক সমাবেশে শেয়ারবাজার লুন্ঠনকারীদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত করে বিচার দাবি করেছেন বিনিয়োগকারীরা।
বিনিয়োগকারীরা বলেছেন, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে শেয়ারবাজারে যথেচ্ছভাবে লুন্ঠন করে যারা সম্পদের পাহাড় গড়েছেন এবং শেয়ারবাজারকে পঙ্গু করে দিয়েছেন, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
এদিকে, গত মঙ্গলবার বিএসইসি অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান।
সভায় বিএসইসির কর্মকর্তারা শেয়ারবাজারের অধ্যাদেশ, আইন ও বিধিবিধানের বাইরে কোনো সুপারিশ বা কোনো ধরনের কাজ করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এছাড়া গতকাল বুধবারও বিএসইসির কর্মকর্তারা এসব বিষয় নিয়ে বেশ সরব ছিলেন। এই সময় তাদের পক্ষ থেকে বেশকিছু দাবি উত্থাপন করা হয়।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ বন্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে কমিশনের অভিজ্ঞ সিনিয়র কিংবা অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনার পদে নিয়োগ দিতে হবে।
শেয়ারবাজারে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শেয়ারবাজারকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। শেয়ারবাজার উন্নয়নের লক্ষ্যে আইনের ১৭ ধারা মোতাবেক কর্মকর্তাদের কাছে ক্ষমতা অর্পণ (ডেলিগেশন অব পাওয়ার) করতে হবে। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দ্রুত পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চিকিৎসা সুবিধা পুনর্বহাল করতে হবে।
বিএসইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনার পদে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগের কারণে তারা শেয়ারবাজারের উন্নয়নে ভূমিকা না রেখে স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থ রক্ষায় সচেষ্ট থাকেন। তাছাড়া তাদের শেয়ারবাজার সম্পর্কে কোনো ধরনের অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে বাজারের উন্নয়নে সেভাবে ভূমিকা রাখতে পারেন না।
সভায় অভিযোগ করা হয়, এক সময় কমিশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তথা নির্বাহী পরিচালকদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে কমিশন অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করত। কিন্তু কয়েক বছর ধরে কমিশন এককভাবে সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। অথচ এসব সিদ্ধান্তের দায় তাদের ওপরও এসে পড়ছে।
দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিএসইসির কর্মকর্তারা রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ করা চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের কার্যক্রমের দায় নিজেদের ওপর নিতে চান না। এই কারণে তারা সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তা ও সাবেক কর্মকর্তাদের প্রাধান্য দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। তাছাড়া বর্তমানে বিএসইসির চেয়ারম্যানসহ দুই কমিশনার অনুপস্থিত থাকার কারণে কমিশনের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলেও তারা জানিয়েছেন।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অফিসে আসছেন না বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ ও মো. মহসিন চৌধুরী। বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনার শামসুদ্দিন গত মাসে সরকারি সফরে কানাডা গিয়েছিলেন। এরই মধ্যে বিএসইসি চেয়ারম্যান দেশে ফিরে এলেও তিনি গত দুইদিন অফিসে আসেননি। কমিশনার শামসুদ্দিন আহমেদও দেশে ফিরেছেন। কিন্তু অফিসে আসছেন না। আরেক কমিশনার মো. মহসিন চৌধুরী দেশে থাকলেও তিনি দুইদিন ধরে অফিসে আসছেন না।