গত আড়াই বছর যাবত শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের ছোখেমুখে ছিল কেবল আতঙ্কের ছাপ। এই সময়ে বিনিয়োগকারীরা ধারাবাহিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থই হয়েছেন। কিছু কারসাজিকারী ছাড়া শেয়ারবাজারে লাভবান হয়েছেন, এমন বিনিয়োগকারী খুঁজে পাওয়া খুবই দুস্কর হবে।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা নতুন স্বপ্ন নিয়ে ফিরছেন। গত দুই দিনে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক বেড়েছে প্রায় ৩৯০ পয়েন্ট। এই দুই দিনে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি ফিরেছে প্রায় ৩৩ হাজার ৬১৩কোটি টাকা।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৭ হাজার ১০৫ পয়েন্ট। এরপর থেকেই চলেছে থেমে থেমে পতনের ছোবল। পতনের ছোবলে ২ বছর ৭ মাসে ডিএসইর সূচক কমেছে প্রায় ২ হাজার পয়েন্ট। অথচ এরমধ্যে শেয়ারবাজারে নতুন আইপিও শেয়ার এসেছে ২০টির বেশি। যেগুলোর মূলধন সূচকে যোগ হয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সময়ে বাজারে তারল্য সংকটের কারণে যতটা কমেছে, তারচেয়ে বেশি কমেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে। অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত ইসলামের ইন্ধনে আওয়ামী পন্থীদের লুটপাটে শেয়ারবাজারের মেরুদন্ড ভেঙ্গে গেছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা শিবলী রুবাইয়াত ও তার আওয়ামী পন্থী দোসরদের দুর্নীতি ও অনিয়মের তদন্ত দাবি করেছেন।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে অবিলম্বে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ও কমিশন সদস্যদের পুর্নগঠন করা প্রয়োজন। তাঁরা বলছেন, নোবেলবিজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূস অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান হওয়ার খবরে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের নতুন করে আস্থা তৈরি হচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলোর পূর্ণ সমর্থন পাওয়া ড. ইউনূসের নেতৃত্বে দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি ফিরবে-এমনটাই সবার বিশ্বাস।
বুধবারের বাজার পর্যালোচনা
আজ সাপ্তাহিক লেনদেনের দ্বিতীয় দিন বুধবার (০৭ আগস্ট) ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই-সিএসই) ব্যাপক উত্থান হয়েছে। এদিন ডিএসই ও সিএসইতে আগের কর্মদিবসের চেয়ে সূচক বাড়ার পাশাপাশি টাকার পরিমাণে লেনদেন বেড়েছে। পাশাপাশি উভয় বাজারে লেনদেনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার এবং মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দাম বেড়েছে।
আজ ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ১৯২.৩৬ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৬১৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়া সূচক ৪২.৫২ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২১৯ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৮৭.৪৩ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ২২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
এদিন ডিএসইতে মোট ৩৯৪ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ২৬৬টি কোম্পানির, কমেছে ১১৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৬টির।
এদিন মোট ৭৭৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কর্মদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৭৪৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সিএসসিএক্স সূচক ৩৩০.৪৯ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৯ হাজার ৬০৯ পয়েন্টে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৫৪৫.১০ পয়েন্ট বেড়ে ১৫ হাজার ৯৩৮ পয়েন্টে, শরিয়া সূচক ২৪.৮২ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২১ পয়েন্টে এবং সিএসই৩০ সূচক ৫৪৯.০৮ পয়েন্ট বেড়ে ১২ হাজার ৬৪৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
আজ সিএসইতে ২৫৬টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ১৬০টি কোম্পানির, কমেছে ৭৫টির এবং অপরিবর্তিত আছে ২১টির।
দিন শেষে সিএসইতে ২২ কোটি ৫১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কর্মদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।