আগামী বছরের ২৪ ও ২৫ জানুয়ারি খুলনা শহরের সার্কিট হাউজ সংলগ্ন মাঠে বীমা মেলা অনুষ্ঠিত হবে। মেলার আযোজনে থাকবে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
সোমবার নির্দেশনা আকারে দেশের সব সাধারণ বীমা ও জীবন বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সিইও) বরাবরে আইডিআরএ’র এই সিদ্ধান্ত পাঠানো হয়েছে।
আইডিআরএ’র নির্বাহী পরিচালক খলিল আহমদ সই করা এ সংক্রান্ত নির্দেশনায় বীমা মেলা আয়োজনে কোম্পানিগুলোর সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।
আগামী বছরে মেলাটি আয়োজন করা হলেও এটি ২০১৯ সালের মেলা হিসেবে অভিহিত করেছে আইডিআরএ। এ মেলার মাধ্যমে টানা চারটি বীমা মেলার আয়োজন করছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
এর আগে ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো বীমা মেলা আয়োজন করা হয় রাজধানী ঢাকায়। এরপর ২০১৭ সালে সিলেটে অনুষ্ঠিত হয় বিভাগীয় পর্যায়ের বীমা মেলা। সবশেষ চলতি বছরের মার্চে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয় বীমা মেলা-২০১৮।
এদিকে আগামী জানুয়ারি খুলানয় বীমা মেলার আয়োজনে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছে আইডিআরএ । কমিটির সভাপতি করা হয়েছে কর্তৃপক্ষের সদস্য গকুল চাঁদ দাসকে। আর কর্তৃপক্ষের সদস্য বোরহান উদ্দিন আহমেদ কোষাধ্যক্ষ এবং নির্বাহী পরিচালক খলিল আহমদকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।
২৫ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে- আইডিআরএ’র সদস্য ড. এম মোশাররফ হোসেন, নির্বাহী পরিচালক ড. শেখ মহ. রেজাউল ইসলাম, নির্বাহী পরিচালক মো. আশরাফ হোসেন, বিআইএফ’র সভাপতি ও পপুলার লাইফের সিইও বিএম ইউসুফ আলী, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন, জীবন বীমা কর্পোরেশনের জেনারেল ম্যানেজার মো. আনোয়ার হোসেন, সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. আমিনুল হক ভূঁইয়া, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য এবং কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্সের ভাইস চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের নির্বাহী সদস্য এবং রূপালী ইন্স্যুরেন্সের সিইও পি কে রায়, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের নির্বাহী সদস্য এবং গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের সিইও ফারজানা চৌধুরী, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সিইও জামাল এম এ নাসের, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের সহ-সভাপতি এবং ফারইস্ট ইসলামী লাইফের সিইও মো. হেমায়েত উল্লাহ, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারী জেনারেল নিশিথ কুমার সরকার, আইডিআরএ’র পরিচালক মো. সিদ্দিকুর রহমান, আইডিআরএ’র পরিচালক আব্দুস সালাম সোনার, আইডিআরএ’র পরিচালক আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হক, আইডিআরএ’র পরিচালক মো. শাহ আলম, আইডিআরএ’র পরিচালক কামরুল হক মারুফ, আইডিআরএ’র পরিচালক মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমির প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন অফিসার মো. মিরাজ হোসেন, আইডিআরএ’র কর্মকর্তা আবু মাহমুদ এবং তানিয়া আফরিন।
ফিরে দেখা বীমা মেলা-২০১৮
চলতি বছরের ১৫ ও ১৬ মার্চ দুই দিনব্যাপী চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়াম সংলগ্ন মাঠে বিভাগীয় বীমা মেলা করে আইডিআরএ। মেলার এ মাঠ ও স্টল প্রস্তুতসহ অন্যান্য কাজের জন্য দ্য অ্যাড কমিউনিকেশন, প্লান বি, ক্রিয়েটিভ এবং ভিমরুল নামের চারটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টর কাছ থেকে প্রস্তাব সংগ্রহ করে আইডিআরএ। এরপর ‘দ্য অ্যাড কমিউনিকেশন’ নামের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হয়।
অথচ চারটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দ্য অ্যাড কমিউনিকেশনই খরচের বিবরণ দেয় সব থেকে বেশি। প্রতিষ্ঠানটি সমস্ত কাজের খাত ভিত্তিক বিবরণ তুলে ধরে মোট খরচের প্রস্তাব দেয় ২৮ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ টাকা। বাকি তিন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্লান বি ২১ লাখ ৫২ হাজার ৪৫০ টাকা, ক্রিয়েটিভ ১৮ লাখ ৭৪ হাজার ৪০০ টাকা এবং ভিমরুল ১৭ লাখ ৬৬ হাজার ৯০০ টাকা খরচের বিবরণ দেয়। এরপরও এই তিন প্রতিষ্ঠানকে উপেক্ষা করে কাজ দেয়া হয় দ্য অ্যাড কমিউনিকেশনকে।
মেলার জন্য আইডিআরএ’র খরচের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মেলার একটি ঘোষণা মঞ্চের জন্য ব্যয় করা হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। অথচ এই ঘোষণা মঞ্চে করে দিতে প্লান বি ৮ হাজার, ক্রিয়েটিভ ৩ হাজার এবং ভিমরুল ৫ হাজার টাকা চেয়েছিল আইডিআরএ’র কাছে।
ঘোষণা মঞ্চের মতোই এমন বাড়তি অর্থ ব্যয় করা হয়েছে একটি ক্যামেরা দিয়ে স্থিরচিত্র তোলার ক্ষেত্রে। একটি ক্যামেরা দিয়ে দুদিনের মেলার স্থিরচিত্র তুলতে খরচ করা হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। অথচ এই কাজের জন্য প্লান বি ১২ হাজার টাকা, ক্রিয়েটিভ ৮ হাজার টাকা এবং ভিমরুল ১০ হাজার টাকা খরচের প্রস্তাব দেয় আইডিআরএকে।
স্থিরচিত্রের পাশাপাশি ভিডিওচিত্র ধারণের জন্য ২টি ক্যামেরার জন্য খরচ করা হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। এ ক্ষেত্রেও অন্য তিন প্রতিষ্ঠান আরও অনেক কম খরচের প্রস্তাব দিয়ে ছিল। এর মধ্যে প্লান বি ২৬ হাজার, ক্রিয়েটিভ ২৪ হাজার এবং ভিমরুল ১৬ হাজার টাকা খরচ হবে বলে জানিয়েছিল।
এমন বাড়তি অর্থ ব্যয় করা হয়েছে মেলার লিফলেট বিতরণের জন্যও। দ্য অ্যাড কমিউনিকেশনের মাধ্যমে ৫০ হাজার লিফলেট বিতরণের জন্য খরচ করা হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। অথচ এই কাজ করে দেয়ার জন্য প্লান বি ৫ হাজার এবং ভিমরুল ৮ হাজার টাকা চেয়ে ছিল।
সব থেকে মজার বিষয় মেলার মাঠে ৮টি ছাতা ক্রিয়েটিভ ১৫ হাজার টাকা এবং ভিমরুল ২৪ হাজার টাকায় স্থাপন করে দেয়ার জন্য আইডিআরএকে প্রস্তাব দেয়। আর এর জন্য দ্য অ্যাড কমিউনিকেশন প্রস্তাব দেয় ৮০ হাজার টাকা। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে উপেক্ষা করে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ অ্যাড কমিউনিকেশনের প্রস্তাবিত খরচ অনুমোদন করে। তবে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানটি মেলার মাঠে ছাতা স্থাপন না করায় এই বিল পরিশোধ করা হয়নি।
আটজনের মঞ্চ টেবিল করে দেয়ার জন্য প্লান বি ১ হাজার টাকা এবং ক্রিয়েটিভ ৩ হাজার টাকা চেয়েছিল। তবে অ্যাড কমিউনিকেশনের মাধ্যমে আইডিআরএ এ কাজ করেছে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে। র্যালিতে ব্যান্ড পার্টির জন্য আইডিআরএ খরচ করেছে ৩০ হাজার টাকা। তবে এই ব্যান্ড পার্টির জন্য প্লান বি ৬ হাজার, ক্রিয়েটিভ ২০ হাজার এবং ভিমরুল ৫ হাজার টাকা খরচ হবে বলে আইডিআরএকে প্রস্তাব দিয়েছিল।
একইভাবে দুই লাইন সোফার জন্য খরচ করা হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। তবে এই কাজ প্লান বি ১১ হাজার এবং ক্রিয়েটিভ ১২ হাজার টাকায় করে দিতে চেয়েছিল। দর্শকদের ৫০০ চেয়ারের জন্য খরচ করা হয়েছে ১২ হাজার টাকা। অথচ এর জন্য প্লান বি ৫ হাজার এবং ক্রিয়েটিভ ৪ হাজার টাকা চেয়েছিল।
মেলার দুটি গেটের জন্য খরচ করা হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। যে গেট প্লান বি ও ক্রিয়েটিভ ১ লাখ টাকা এবং ভিমরুল ৬০ হাজার টাকায় করে দিতে চেয়েছিল।
এদিকে চার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্বোচ্চ খরচের বিবরণ তুলে ধরা প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হলেও, যেভাবে কাজ করার কথা তা করেনি প্রতিষ্ঠানটি। আইডিআরএ’র সূত্রে জানা গেছে, মেলার মাঠে যে কয়টি ফেস্টুন স্থাপনের কথা, তা করা হয়নি। ৮টি ছাতা স্থাপন করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। আবার মেলার মাঠে কার্পেটের দেয়ার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। উল্টো কার্পেটের পরিবর্তে ইট বিছিয়ে দিয়ে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দাবি করা হয়েছে। আইডিআরএ’র বাছাই কমিটিতে বিষয়টি ধরা পড়ায় এই বিল আটকে দেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রামে বীমা করতে আইডিআরএ’র আয়োজক কমিটিতে ছিলেন ফারইস্ট ইসলামী লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হেমায়েত উল্লাহ, ন্যাশনাল লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা জামাল আবু নাছের, পপুলার লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বিএম ইউসুফ আলী, সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের জিএম আমিনুল ইসলাম এবং আইডিআরএ’র কয়েকজন সদস্য ছিলেন।
শেয়ারবার্তা / আনিস