আবারও রেকর্ড গড়েছে ভারতের শেয়ারবাজার। গতকাল মঙ্গলবার ভারতের শেয়ারবাজারের মূল সূচক সেনসেক্স ৭৮ হাজারের মাইলফলক পেরিয়েছে। গতকাল এই সূচক ৭১২ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট বেড়ে ৭৮ হাজার ১৬৪ দশমিক ৪১ পয়েন্ট পর্যন্ত ওঠে।
শুধু সেনসেক্স নয়, বাজারের আরেক সূচক নিফটিও নতুন রেকর্ড গড়েছে। ১৮৩ দশমিক ৪৫ পয়েন্ট উঠে এই সূচক ২৩ হাজার ৭২১ দশমিক ৩০ পয়েন্টে থেমেছে।
ভারতের বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সংবাদে বলা হয়েছে, গতকাল শেয়ারবাজারের এই উত্থানে মূল অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে একটি খবর। সেটি হলো, গড়ে আড়াই বছরে এই প্রথম ভারতের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত তৈরি হওয়া। একটি দেশের রপ্তানিমূল্য আমদানিমূল্যকে ছাড়ালে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত হয়। তার সঙ্গে বিভিন্ন খাতে বিদেশি মুদ্রার আয়-ব্যয় ধরে চলতি হিসাবের মূল্যায়ন করা হয়।
অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, আমদানি খরচের তুলনায় রপ্তানি খাতে আয় হয়েছে বেশি। অর্থাৎ বাড়তি বিদেশি মুদ্রা ঢুকেছে। সরকার উদ্বৃত্ত আয় কাজে লাগাতে পারলে বেকারত্বের হার কমে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বাড়তে পারে; সেই সঙ্গে বাড়তে পারে রুপির বিনিময় হার। তবে এতে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির আশঙ্কা আছে।
গত সোমবার রিজার্ভ ব্যাংক জানিয়েছে, গত জানুয়ারি-মার্চে চলতি হিসাবে ৫৭০ কোটি ডলার ঢুকেছে। গত ১০ প্রান্তিকে এই প্রথম চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত তৈরি হয়েছে।
বিশ্লেষকেরা আরও বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার কমেছে; এই পরিস্থিতিতে নীতি সুদহার কমার বাস্তবতা তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছে বাজার। ভারতেও সুদ কমানোর চাপ তৈরি হচ্ছে। এমনকি রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ঋণনীতি কমিটিরই একাংশ দেরি করার পক্ষপাতী নন।
এ ছাড়া ধারণা করা হচ্ছে, রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ২ লাখ ১০ হাজার কোটি রুপি লভ্যাংশের অর্থ থেকে রাজকোষের ঘাটতি মিটিয়েও কেন্দ্রীয় সরকার মূলধনি খরচ করতে পারবে। সেই সঙ্গে চলতি বছর বর্ষার পূর্বাভাসও ভালো। বাজেটে কিছু সংস্কারমূলক ঘোষণাও আসতে পারে; বাজার চাঙা হওয়ার পেছনে এটাই বড় কারণ।
একই সঙ্গে বিশ্লেষকদের সতর্কবাণী, বাজেটে কিছু ক্ষেত্রে ঋণ মওকুফসহ কিছু জনতুষ্টিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। তার তাৎক্ষণিক বিরূপ প্রভাবে সূচক হয়তো কিছুটা নামবে; সে জন্য সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সাবধান থাকতে হবে।
এদিকে ভারতে নতুন কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের পর বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আবার বিনিয়োগ করতে শুরু করেছেন। গতাকল ভারতের শেয়ারবাজারে ১ হাজার ১৭৬ কোটি রুপি বিনিয়োগ করেছে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। এ ছাড়া বিভিন্ন তহবিল থেকেও বিনিয়োগ হচ্ছে। ফলে শেয়ারের দাম বাড়ছে।
অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, বাজেটের আগপর্যন্ত পতনের আশঙ্কা নেই। বাজেটের ওপর ভিত্তি করে বাজারের পরবর্তী গতি নির্ধারিত হবে।