পুঁজিবাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে সক্রিয় রয়েছে একটি কারসাজি চক্র। সাম্প্রতিক সময়ে সিরিয়াল ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে ওই চক্রটি কম দামে শেয়ার হাতিয়ে নিয়েছে। এতে একদিকে পুঁজিবাজারে মূল্য সূচকের পতন ঘটেছে, অন্যদিক সাধারণ বিনিয়োগকারীরা হয়েছেন নিঃস্ব।
পুঁজিবাজারে অস্থিরতা সৃষ্টির পাশাপাশি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে কারসাজি চক্রটি কাজ করছে। সিরিয়াল ট্রেডিং বা কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে বিএসইসি।
সম্প্রতি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সার্ভেইল্যান্স বিভাগের অনুসন্ধানে এমন তথ্য উঠে এসেছে। বিএসইসির সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, কারসাজি চক্রটি কম দামে শেয়ার হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে পুঁজিবাজারে লেনদেনের শুরুতেই ওপেনিং প্রাইসের থেকে কম মূল্যে ইনডেক্স মুভার কোম্পানির শেয়ার বিক্রি শুরু করে। দাম কমলে চক্রটির অন্য সদস্যরা ভিন্ন বিও অ্যাকাউন্ট থেকে ওই শেয়ার হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে পুঁজিবাজারের মূল্য সূচকে বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে বড় মূলধনী কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দামে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার কারণে অন্যান্য কোম্পানির শেয়ারের দামেও প্রভাব পড়েছে। এসব কোম্পানির শেয়ারদর সামান্য কমলেও সূচকে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা যায়। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যেমন আতঙ্কের সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি কম দামে শেয়ার বিক্রির চাপে লাগাতার পতন কাটিয়ে উঠতে পারছে না দেশের শেয়ারবাজার।
সক্রিয় এই কারসাজি চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে এভাবে পুঁজিবাজারকে অস্থির করে তুলছে। এখানেই ওরা সীমাবদ্ধ নয়, বিভিন্ন ব্রোকার হাউসের কর্মকর্তাদের ফোন করে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে সরকার ও কমিশনের বিরুদ্ধে মিথ্যে তথ্য ছড়িয়ে আসছে। বিএসইসির সার্ভেইল্যান্স টিমের অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। পাশাপাশি কারসাজির সঙ্গে জড়িত ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে চিহ্নিত করে যোগ্য বিনিয়োগকারী হিসেবে আইপিও কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। একইসঙ্গে যেসব ব্যক্তি এসব কারসাজির সঙ্গে জড়িত তাদেরকে জরিমানার আওতায় নিয়ে আসা হবে। এছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান (ব্রোকারেজ ও মার্চেন্ট ব্যাংক) কারসাজির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের সনদ নবায়ন স্থগিত করাসহ কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।
প্রসঙ্গত, পুঁজিবাজারে এক বা একাধিক ব্যক্তি বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে বা কমিয়ে কারসাজি করে থাকে। একাধিক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে একজন ব্যক্তি বা এককাধিক ব্যক্তি (সংঘবদ্ধ চক্র) কয়েকটি অ্যাকাউন্ট খুলে নিজেদের মধ্যেই শেয়ার কেনা-বেচা করে দাম বাড়ানোর বা কমানোই সিরিয়াল ট্রেডিং।