এবার সবার মনে ঘুরপাক খেতে থাকা আতঙ্ক যেন বাস্তবে রূপ নিলো। বিনিয়োগকারীদের মনস্তাত্ত্বিক বাধা অতিক্রম করে ৩৩ মাস পর ৬ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে গেলো মূল্যসূচক।
সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবস বুধবার (১৩ মার্চ) লেনদেন শুরু হওয়ার ১৩ মিনিটের মাথায় ৯ দশমিক ৩০ পয়েন্ট পতনের পর ৫ হাজার ৯৯১ পয়েন্টে নেমে আসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স।
গতকাল মঙ্গলবার বড় পতনের পর আজ ৬ হাজার ৬ পয়েন্টে লেনদেন শুরু হয় বাজারে। লেনদেনের শুরুতেই প্রায় ১২ পয়েন্টের উত্থানে ১০ টা ৩২ মিনিটে সূচক ৬ হাজার ১৮ পয়েন্টে অবস্থান নেয়। তবে এরপর থেকেই শুরু হয় পতন। ঠিক লেনদেনের ১৩ মিনিট অতিক্রম করতেই সূচক চলে আসে ৬ হাজার পয়েন্টের নিচে।
বাজারের এই সংকট কাটিয়ে উঠতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাজারের প্রতিটি অবস্থার উপর নজর রাখছে এবং পর্যবেক্ষন করছে। বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এবং ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ) থেকে যে ফান্ড বাজারে আসার কথা তা দ্রুততম সময়ে বাজারে আনার চেষ্টা করছে কমিশন। কিছু ফান্ড বাজারে আসলেই এই অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন হবে বলে আশা করছি।
তিনি বলেন, কোভিড পরবর্তী ফ্লোর-প্রাইজ তুলে নেয়ার পর এটিই পুঁজিবাজারে সূচকের সর্বনিম্ন অবস্থান। বিনিয়োগকারীদের বলবো আতঙ্কিত হয়ে প্যানিক সেল না দেয়ার জন্য। আমরা আশা করছি খুব দ্রুতই এই সংকট কাটিয়ে উঠবে পুঁজিবাজার।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী লেনদেন শুরুর দেড় ঘন্টা পর আজ বেলা ১১ টা পর্যন্ত ডিএসইতে ১৬৭ কোটি ৩২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। কমেছে অধিকাংশ কোম্পানি এবং মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ারদর।
আলোচিত সময়ে বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ডিএসই প্রধান বা ডিএসইএক্স সূচক ৩১ দশমিক ১৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৯৭৫ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ৮ দশমিক ৯০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩০১ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৬ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৭ পয়েন্টে।
উল্লেখ, দেশের পুঁজিবাজারের বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী ৬ হাজার পয়েন্টকে একটি মনস্তাত্ত্বিক বাধা হিসেবে বিবেচনা করে আসছেন। এতদিন পর্যন্ত তারা মনে করতেন, বাজারে নানা মাত্রায় উঠা-নামা থাকলেও সূচক (ডিএসইএক্স) ৬ হাজারের নিচে নামবে না। তারা বিশ্বাস করতেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সূচক ৬ হাজারের নিচে নামতে দেবে না। যদিও মূল্যসূচক বাড়ানো-কমানো বা কোথাও ধরে রাখা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজ নয়, তবু অতীতে তাদের নানা কার্যক্রমের মধ্যে সূচককে ধরে রাখার একটা চেষ্টার আভাস দেখেছেন বিনিয়োগকারীরা। বাজারে বড় দর পতন হলে ব্রোকারদেরকে শেয়ার বিক্রি করতে বারণ করা বা বাড়তি শেয়ার কিনে বাজারকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য বিএসইসি থেকে নিয়মিত ফোন আসার কথা শোনা যায়। বিশেষ করে ২০২২ সালের জুলাই মাসে বাজারে দরপতন ঠেকাতে ফ্লোরপ্রাইস আরোপের মত নজিরবিহীন ব্যবস্থা নেয় বিএসইসি, যদিও এ ব্যবস্থার উল্টা মাশুল গুণতে হয় বিনিয়োগকারী ও বাজারকে।