বিশেষজ্ঞদের আপত্তি সত্ত্বেও দুই শতাংশ অর্থ আগাম পরিশোধ-সাপেক্ষে খেলাপিদের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার ব্যাংকগুলোকে নীতিবহির্ভূতভাবে আরও সুযোগ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এসব ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ স্পেসিফিক প্রভিশন সংরক্ষণের বিষয়টি পরিবর্তন করে সাধারণ প্রভিশন সংরক্ষণ ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বিধি অনুযায়ী পর্যালোচনাপূর্বক জরুরি ভিত্তিতে কার্যক্রম গ্রহণ করে তা অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে জানাতে বলা হয়েছে।
তবে এ ধরনের উদ্যোগ একেবারে ব্যাংকিং নীতিমালাবহির্ভূত বলে উল্লেখ করেছেন ব্যাংক খাত বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ইতোমধ্যে সরকার ব্যাংক খাতে নীতিবহির্ভূত অনেক খারাপ কাজ করেছে। এটি আরও একটি গর্হিত কাজ হবে।
সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিনিধির উপস্থিতিতে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর নির্বাহীদের সঙ্গে সভা করেন। ওই সভায় এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সভার কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
সভায় ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট-সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালার বিষয়ে বেশকিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এগুলো হচ্ছে- ঋণ পুনঃতফসিলের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এ ধরনের প্রতিটি কেস পর্ষদে নিয়ে যেতে হয়। এক্ষেত্রে প্রতিটি কেস পর্ষদে উপস্থাপন না করে পর্ষদের অনুমোদনক্রমে প্রণীত নীতিমালার আলোকে অর্থের পরিমাণের ভিত্তিতে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে কেসগুলো নিষ্পত্তি করা যেতে পারে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক দ্রুততম সময়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে পর্যালোচনাপূর্বক মতামত প্রদান করবে।
ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট-সংক্রান্ত নীতিমালার আওতায় নিয়মিত ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ স্পেসিফিক প্রভিশন সংরক্ষণের বিষয়টি পরিবর্তন করে ৫০ শতাংশ সাধারণ প্রভিশন সংরক্ষণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বিধি অনুযায়ী পর্যালোচনাপূর্বক জরুরিভিত্তিতে কার্যক্রম গ্রহণ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে অবহিত করবে।
প্রভিশন সংরক্ষণ কমিয়ে আনার উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটা হলে একেবারে ব্যাংকিং নীতিমালার বাইরে হবে। কারণ এ ঋণ তো ভালো হয়ে যায়নি, এ ঋণ জোর করে ভালো করানো হয়েছে। এটা আসলে ব্যাড লোন, এ জন্য ব্যাড লোনের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন রাখা সব দেশের সর্বকালের নীতি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা যদি সরকার করে…, অলরেডি তারা নীতিবহির্ভূত অনেক খারাপ কাজ করেছে। এটি আরও একটি গর্হিত কাজ হবে।’
এছাড়া বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয় যে, গত ১৬ মে এবং পরবর্তীতে জারি করা ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট আদায় করত ঋণ পুনঃতফসিল-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। আদালত বিশেষ এ স্কিম-কে বৈধতা দিয়েছেন। ফলে এ বিষয়ে আর কোনো দ্বিধা বা সংশয় থাকা সমীচীন নয়। এ স্কিমের আওতায় যোগ্য সব ভালো গ্রাহকের কাছে ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট পাওয়া-সংক্রান্ত বিষয় পৌঁছানোর কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
এক্ষেত্রে ব্যাংক ক্লায়েন্ট রিলেশনশিপের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। প্রয়োজনবোধে ব্যাংকগুলো গ্রাহকের বিভিন্ন প্রশ্নের যথাযথ উত্তর প্রদানের জন্য হেল্পলাইন চালু করতে পারে। ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা মহাব্যবস্থাপক এ সংক্রান্ত আবেদন যেন অনিষ্পন্ন অবস্থায় পড়ে না থাকে তা নিশ্চিত করবেন।
বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালার কার্যক্রম চলমান থাকায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কর্তৃক জারি করা রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মহাব্যবস্থাপকদের বদলির বিষয়টি আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত রাখা যেতে পারে বলে বৈঠকে মত দেয়া হয়।
এছাড়া চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসারদের মহাব্যবস্থাপক হতে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকে পদায়নের বিষয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংক অধিশাখা প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ এবং কৃচ্ছ্রসাধনের মাধ্যমে প্রশাসনিক খরচ কম করে মুনাফা বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, সর্বোপরি মুজিববর্ষ উপলক্ষে ব্যাংকগুলোকে জনকল্যাণমুখী বিশেষ সেবা ও কার্যক্রম গ্রহণ করতে পরামর্শ দেয়া হয়। যাতে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর আর্থিক সমৃদ্ধি ও কল্যাণ নিশ্চিত হয়।
শেয়ারবার্তা / আনিস