২০১০ সালের পর মন্দার কবলে রয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। সাম্প্রতিক বছরগুলোযতে বাজার পরিস্থিতি আরও মারাত্মক হয়েছে। এই সময়ে কোনো কারণ ছাড়াই একযোগে কমতে দেখা গেছে অধিকাংশ কোম্পানি এবং ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিটদর। নানা পদক্ষেপেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি, যার জের ধরে পুঁজিবাজারের প্রতি অনাস্থা তৈরি হয়েছে কোম্পানি মালিকদের। ফলে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ কমে গেছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলতি বছর পুঁজিবাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ও রাইট শেয়ার ছেড়ে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ মোট ৬৪১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছে, যা গত ৯ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। নয় বছর আগে ২০১০ সালে আইপিও ও রাইট শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ করেছিল তিন হাজার ৩৯০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। নয় বছরে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের পরিমাণ কমেছে ৮১ শতাংশের বেশি।
চলতি বছরে ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে পাঁচটি কোম্পানি ২৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। পাশাপাশি বুক বিল্ডিংয়ে তিনটি কোম্পানি ৩০৭ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। এই দুই পদ্ধতিতে আটটি কোম্পানি মোট ৫৫২ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। অন্যদিকে এই সময়ে রাইট শেয়ারের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয় ৮৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। সব মিলে মোট টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৪১ কোটি ৯৩ লাখ।
এর আগের বছর (২০১৮ সালে) ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে ১১টি কোম্পানি ২৬৬ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। ওই বছর বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে দুটি কোম্পানি সংগ্রহ করে ২৮০ কোটি টাকা। এছাড়া রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে উত্তোলন করা হয় ১০৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। অর্থাৎ এ বছর মোট সংগ্রহ করা হয় ৬৫৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
এর আগে ২০১৭ সালে আইপিও ও রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে এক হাজার ৪৪২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা সংগ্রহ করা হয়। ২০১৬ সালে ৯৫০ কোটি ১২ লাখ টাকা, ২০১৫ সালে ৬৭৫ কোটি, ২০১৪ সালে তিন হাজার ২৩৬ কোটি ৮৮ লাখ ও ২০১৩ সালে ৯১০ কোটি ৮০ লাখ সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া আইপিও ও রাইট শেয়ারের মাধ্যমে ২০১২ সালে এক হাজার ৮৪২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা, ২০১১ সালে তিন হাজার ২৩৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ও ২০১০ সালে তিন হাজার ৩৯০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা সংগ্রহ করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, সেকেন্ডারি মার্কেটের পরিস্থিতি ভালো না থাকায় পুঁজিবাজারের প্রতি কোম্পানি মালিকদের আগ্রহ কমেছে। তাছাড়া ব্যাংক থেকে সহজে অর্থ পাওয়া যাচ্ছে, যে কারণে তারা পুঁজিবাজারে না এসে ব্যাংকে যাচ্ছেন।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দেশের অর্থনীতি আগের চেয়ে অনেক এগিয়ে গেছে। সেই তুলনায় পুঁজিবাজার সেভাবে এগোতে পারেনি। এই সমস্যা দূর করার জন্য বেশি বেশি করে ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আনতে হবে।
মুসলিম ক্যাপিটালের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়ালি-উল মারুফ মতিন বলেন, দীর্ঘদিন থেকে পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো নেই। সে কারণে পুঁজিবাজারের প্রতি আস্থার ঘাটতি তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে সেকেন্ডারি মার্কেটের পরিস্থিতি ভালো নেই। প্রাইমারি মার্কেট সব সময় সেকেন্ডারি মার্কেটকে অনুসরণ করে। অনাস্থা তৈরি হওয়ার এটাও একটি কারণ। পুঁজিবাজারে লেনদেনও আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। সব মিলে পুঁজিবাজারের প্রতি এক ধরনের অনাস্থা তৈরি হয়েছে।
শেয়ারবার্তা / হামিদ