সেপ্টেম্বর মাসে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৬ কোম্পানির কারখানা পরিদর্শন করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রতিনিধি দল। কারখানা পরিদর্শনকালে আলোচ্য কারখানাগুলোর কারযক্রম বন্ধ ছিল।
ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কোম্পানিগুলো হচ্ছে- ফ্যামিলি টেক্স (বিডি), দুলামিয়া কটন স্পিনিং মিলস, রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস, উসমানিয়া গ্লাস শিট, নূরানী ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার এবং নর্দার্ণ জুট অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড।
জানা গেছে, ডিএসইর প্রতিনিধি দল কোম্পানিগুলোর বর্তমান কারযক্রম জানতে কারখানা পরিদর্শন করেছে। কিন্তু কারখানা পরিদর্শনকালে ডিএসইর প্রতিনিধি দল দেখে কোম্পানিগুলোর কারযক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এতে ডিএসই তাদের কারযক্রম সম্পূর্ণ করতে পারেনি।
এদিকে গত ৪ সেপ্টেম্বর ডিএসইর একটি প্রতিনিধি দল নর্দার্ণ জুটের কারখানা পরিদর্শন করে।
কারখানাটি বন্ধ থাকায় ডিএসইর প্রতিনিধি দল ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। এতে প্রতিনিধি দল নর্দার্ণ জুটের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কোনো তথ্য জানতে পারেনি।
পরে নর্দার্ণ জুটের হেড অফিস পরিদর্শ করে দেখা যয় বর্তমানে ওএমসি লিমিটেডের দখলে রয়েছে অফিসটি।
গত জুলাই মাসে ডিএসই সরেজমিনে তালিকাভুক্ত ৪২ কোম্পানির কার্যক্রম ও কারখানা পরিদর্শনের অনুমোদন চায়। তখন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ১৪টির কার্যক্রম ও কারখানা পরিদর্শনের অনুমতি দেয়। এরপর পরিদর্শন শুরু করে ডিএসই।
বিএসইসি যে ১৪টি কোম্পানির কার্যক্রম পরিদর্শনের অনুমোদন দিয়েছে, সেগুলো হচ্ছে ফরচুন শুজ, ন্যাশনাল ফিড মিলস, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি, দুলামিয়া কটন স্পিনিং মিলস, ফ্যামিলিটেক্স, কেয়া কসমেটিকস, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, নর্দার্ন জুট ম্যানুফ্যাকচারিং, রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস, ঢাকা ডাইং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং, উসমানিয়া গ্লাস শিট, জাহিন স্পিনিং ও জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ।
ডিএসই সূত্র জানায়, আলোচ্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে কয়েকটি দীর্ঘদিন ধরে সিকিউরিটিজ আইনের বিভিন্ন বিধিবিধান পরিপালন করছে না। কোনো কোনোটি লভ্যাংশ ঘোষণার পরও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিতরণ করছে না। আবার কোনো কোনো কোম্পানির উৎপাদন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। কোনো কোনো কোম্পানি নিয়মিত বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএম করছে না। ফলে এসব শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হচ্ছেন না। কোম্পানিগুলো সময়মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলোও বিনিয়োগকারীদের জানাচ্ছে না। এ কারণে এসব কোম্পানি পরিদর্শনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ডিএসই–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, পরিদর্শন কার্যক্রম শেষে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। ডিএসই যে ১৪টি কোম্পানির সার্বিক কার্যক্রম পরিদর্শন করছে, তার একটি বড় অংশই ২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধসের পর তালিকাভুক্ত হয়। ফলে এক যুগ ঘুরতে না ঘুরতেই এসব কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ এসব কোম্পানির বেশির ভাগেরই প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও অনুমোদনের আগে বিভিন্ন পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা হয়েছিল। মানহীন কোনো কোম্পানিকে যাতে বাজারে আনা না হয়, সে জন্য ডিএসইর পক্ষ থেকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপত্তিও জানানো হয়েছিল। তা সত্ত্বেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদের ক্ষমতাবলে আইপিও অনুমোদন দেয়। আইপিওর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ তুলে নেন কোম্পানির মালিকেরা।
এদিকে কারখানা বন্ধ থাকলেও বাজারে কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, চড়া দামে কেনাবেচাও হচ্ছে। যেমন: পি কে হালদারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোম্পানি নর্দার্ন জুটের শেয়ারের দাম গত বুধবার ৩ শতাংশের বেশি বেড়ে ২০২ টাকায় উঠেছে। অথচ স্কয়ার ফার্মা ও ব্র্যাক ব্যাংকের মতো ভালো মৌলভিত্তির অনেক শেয়ার দীর্ঘদিন ধরে সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে।