ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। যে কারণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।
এছাড়া, বিনিয়োগকারীদের একটি অংশের মূল আকর্ষণ থাকে কারসাজির শেয়ারের প্রতি। ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার সংখ্যা বেশি হওয়ায় কারসাজির সুযোগ তেমন নেই। তাই এসব শেয়ার কিনতে আগ্রহ দেখান না বিনিয়োগাকারীরা।
ফলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে শেয়ারে ক্রেতা সংকট লেগেই আছে। গত কয়েক মাস ধরে ৮টি ব্যাংকের শেয়ারের দাম ১০ টাকার নিচে অবস্থান করছে। ব্যাংক বহির্ভূত ৮টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারেরও একই অবস্থা। অথচ একসময় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিনিয়োগকারীদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২১ কোটি টাকা হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ১৬ শতাংশ বেশি। ব্যাংকিং খাতের মোট ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা ঋণের ৮.৮০ শতাংশ খেলাপি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছর শেষে ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৯২২ কোটি টাকা।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক আছে ৩৫টি। এর মধ্যে এবি ব্যাংক লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড, ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড এবং ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেডের শেয়ার দর এখন ১০ টাকার কম। অন্য ১২টি ব্যাংকের শেয়ারের দাম অভিহিত মূল্যের চেয়ে সামান্য বেশি।
অথচ দীর্ঘদিন লোকসানে থাকা জুটা স্পিনার্স লিমিটেডের শেয়ার ৩৩০ টাকার বেশি দরে লেনদেন হয়েছে। এই কোম্পানিটির ১৭ লাখ শেয়ার আছে।
এছাড়া ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, নর্দার্ন জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড, জিল বাংলা সুগার মিলস লিমিটেড ও শ্যামপুর সুগার মিলস লিমিটেডের মতো দুর্বল ও লোকসানি কোম্পানির শেয়ার ১০০ টাকার ওপরে লেনদেন হয়েছে। যদিও এসব কোম্পানির অভিহিক মূল্য ১০ টাকা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী, এসব কোম্পানির ২২ লাখ থেকে ৭০ লাখ পর্যন্ত শেয়ার আছে। কিন্তু, ব্যাংক ও এনবিএফআইগুলোর শেয়ার আছে ৭০ কোটি থেকে ১৬০ কোটি পর্যন্ত।
ব্যাংক বাহির্ভূত ২৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যাদের শেয়ারের দর অভিহিক মূল্যের চেয়ে কম সেগলো হলো- বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেড এবং ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লিমিটেড।
ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে ২৮ শতাংশ বা ১৬টির শেয়ার দর অভিহিত মূ্ল্যের নিচে লেনদেন হচ্ছে। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, অন্য সব খাতের ৪ শতাংশ বা ১২টি কোম্পানি ফেসভ্যালুর নিচে আছে।