বাংলাদেশের শীর্ষ গ্লোবাল ইলেকট্রনিক্স প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের আয়োজনে দেশে প্রথমবারের মতো হচ্ছে একক প্রতিষ্ঠানের প্রথম আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী। এখানে একই ছাদের নিচে পাওয়া যাচ্ছে ওয়ালটনের নিজস্ব কারখানায় উৎপাদিত আন্তর্জাতিক মানের ৫০ হাজারের বেশি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যাটেরিয়ালস, কম্পোনেন্টস, সার্ভিসেস এবং টেস্টিং ফ্যাসিলিটিজ। আজ শুক্রবার (১১ আগস্ট) এ প্রদর্শনীর দ্বিতীয় দিন। সকাল থেকেই মেলায় ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।
‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভান্সড কম্পোনেন্টস অ্যান্ড টেকনোলজি (এটিএস) এক্সপো ২০২৩’ এর ভেন্যু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা হল-১। গতকাল বৃহস্পতিবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ মেলা উদ্বোধন করেন। এ শিল্পমেলা চলবে আগামীকাল শনিবার (১২ আগস্ট) পর্যন্ত।
একই ছাদের নিচে একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত আন্তর্জাতিক মানের ৫০ হাজারেরও বেশি শিল্প উপকরণ ও বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এ ধরনের মেলা বাংলাদেশে এই প্রথম। ওয়ালটনের পণ্য নিয়ে দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর আগ্রহ আছে। মেলায় সেই প্রতিষ্ঠানের প্রায় সব পণ্যের সমাহার ঘটায় ক্রেতা এবং দর্শনার্থীদের সমাগম বেশি হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এটিএস এক্সপোতে টেস্টিং সলিউশন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যাটেরিয়ালস, কম্পোনেন্টস, সার্ভিসেস ও প্রোডাক্ট—এই চার ক্যাটাগরিতে পণ্য প্রদর্শন করা হচ্ছে। চারটি ক্যাটাগরিতে মোট ২১টি স্টলে ওয়ালটনের তৈরি আন্তর্জাতিক মানের ৫০ হাজারেরও বেশি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যাটেরিয়ালস, কম্পোনেন্টস, সার্ভিসেস এবং টেস্টিং ফ্যাসিলিটিস প্রদর্শন করা হচ্ছে। এগুলোর অধিকাংশই প্রায় সকল প্রকার শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ধাপে প্রধান কাঁচামাল ও কম্পোনেন্টস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, নিজস্ব চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি দেশের অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমদানি বিকল্প গুণগত মানের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যাটেরিয়ালস, কম্পোনেন্টস ও টেস্টিং সলিউশনস দিয়ে আমদানিনির্ভরতা হ্রাসের মাধ্যমে বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় ও দেশীয় শিল্পের ক্ষমতায়নে অবদান রাখতে পারে ওয়ালটন।
ওয়ালটন বাংলাদেশের বৃহত্তম কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি। দেশের অর্থনীতিতে এর শক্তিশালী প্রভাব রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ করদাতাদের মধ্যে অন্যতম। ওয়ালটন বাংলাদেশে ফ্রিজের সবচেয়ে বড় প্রস্তুতকারক, যার সর্বোচ্চ বাজার শেয়ার রয়েছে। ওয়ালটন ব্র্যান্ডের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত পণ্য রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার। বাংলাদেশের ফ্রিজ বাজারের ৬৬ শতাংশ ওয়ালটনের দখলে। বাংলাদেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রেফ্রিজারেটর রপ্তানি করে ওয়ালটন।
এই প্রতিষ্ঠানের আরেকটি উল্লেখযোগ্য পণ্য এয়ার কন্ডিশনার। সাশ্রয়ী মূল্যে উচ্চ মানের এয়ার কন্ডিশনার দিয়ে দেশের বাজারে শীর্ষস্থানে আছে ওয়ালটন। ওয়ালটনের এসির মধ্যে আছে ব্যাপক বিদ্যুৎসাশ্রয়ী আইওটি-বেজড স্মার্ট ইনভার্টার, টুইন ফোল্ড ইনভার্টার, ফিক্সড স্পিড আয়োনাইজার।
সর্বাধুনিক প্রযুক্তির স্মার্ট এলইইডি টেলিভিশন উৎপাদন ও রপ্তানি করে ওয়ালটন। বাংলাদেশের টিভি বাজারে ওয়ালটন শীর্ষে। ২০১০ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিজস্ব কারখানায় তৈরি টেলিভিশন রপ্তানি করছে। বর্তমানে বিশ্বের ৩৫টির বেশি দেশে রপ্তানি হচ্ছে ওয়ালটনের তৈরি টিভি। জার্মানি, গ্রিস, আয়ারল্যান্ড, পোল্যান্ড, স্পেনসহ বিশ্বের অনেকগুলো দেশে ওয়ালটনের টেলিভিশন রপ্তানি হয়।
২০১৭ সালের ৬ এপ্রিল এশিয়ার অষ্টম ও বিশ্বের ১৫তম কম্প্রেসর কারখানা চালু করে ওয়ালটন। বাংলাদেশের একমাত্র কম্প্রেসর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন। ওয়ালটন কম্প্রেসর কারখানার বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ৪ মিলিয়ন। ২০২৫ সালের মধ্যে উৎপাদন সক্ষমতা ১০ মিলিয়নে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ওয়ালটন কম্প্রেসর ও এর যন্ত্রাংশ ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।
ওয়ালটনের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অন্যতম সর্বোচ্চ বিক্রিত পণ্য। এছাড়া, ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো দেশীয় কারখানায় ওয়ালটন কম্পিউটার ও মনিটর বানানো শুরু করা হয়।
‘মেড ইন বাংলাদেশ’ স্লোগানে উৎপাদিত এসব পণ্যই ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভান্সড কম্পোনেন্টস অ্যান্ড টেকনোলজি (এটিএস) এক্সপো ২০২৩’তে পাওয়া যাচ্ছে।
ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোলাম মুর্শেদ বলেছেন, দেশি-বিদেশি শিল্পোদ্যোক্তা ও ক্রেতাদের কাছে ওয়ালটন উৎপাদিত পণ্য ও সেবা তুলে ধরে দেশের আমদানিনির্ভরতা হ্রাসের মাধ্যমে বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের পাশাপাশি রপ্তানি আয় বৃদ্ধির জন্য দেশে প্রথমবারের মতো এ ধরনের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম একক কোনো বাংলাদেশি ব্র্যান্ড তার টেকনোলজি ও সলিউশন দিয়ে সক্ষমতা প্রদর্শনের আয়োজন করেছে। এটিএস এক্সপোর মাধ্যমে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় শিল্প খাত, দেশীয় শিল্পের সক্ষমতা তুলে ধরা হচ্ছে। সরকারের নীতি সহায়তা ও মানুষের আস্থা বজায় থাকলে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে ওয়ালটন।