প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্রোকার হাউজ তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ মোট ১৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের দায়ে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গত বৃহস্পতিবার দুদকের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে তামহার সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন তামহা সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ, পরিচালকদ্বয় জাহানারা পারভীন ও ড. শাহনাজ বেগম, চারজন অ্যাকাউন্টস এক্সিকিউটিভ ও অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ (আব্দুর রহমান তালাল, সাঈদ চৌধুরী, মো. দেলোয়ার হোসেন ও মোহাম্মদ সাইদুজ্জামান), অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ মো. গোলাম রসুল, শেরাটন শাখার ইনচার্জ ও অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ এএম আলমগীর কবীর, শেরাটন শাখার ম্যানেজার ও অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ মো. ওয়ারিছ উদ্দিন, অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ মো. ফায়েজুর রহমান, সেটলমেন্ট অফিসার (সিডিবিএল অফিসার) ও অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ মো. শাহরিয়ার কবীর, অ্যাকাউন্টস এক্সিকিউটিভ ও অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ জি এম আজাদ হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের গাড়িচালক মো. মামুন হোসেন ও অফিস সহকারী মো. হাসান।
তামহা সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, ব্রোকারেজ হাউজটি দুটি ব্যাক অফিস সফটওয়্যার ব্যবহার করে গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাৎ করেছে। এর মধ্যে একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের মিথ্যা ও ভুয়া বিবরণী ও পোর্টফোলিও স্টেটমেন্ট প্রদান করা হতো। হাউজটিতে গ্রহকদের মোট ঘাটতির পরিমাণ ছিল প্রায় ১৩৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে গ্রাহকের সমন্বিত হিসাবে ঘাটতি ৯২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ও শেয়ারের বাজারমূল্যের ঘাটতি ৪৭ কোটি ১১ লাখ টাকা।
অভিযোগ রয়েছে, ব্রোকারেজ হাউজটির একটি সফটওয়্যারে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের প্রকৃত হিসাব রাখা হতো, যা সিডিবিএলের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। ব্যাক অফিস সফটওয়্যারটি সিডিবিএলের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল না। এই ব্যাক অফিস সফটওয়্যারটি বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাতের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যাক অফিস সফটওয়্যার দুটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন হারুনুর রশীদের নিকটাত্মীয় হিসেবে পরিচিত সাইদ চৌধুরী ও আব্দুর রহমান তালাল। তারা দুজনই ব্যাক অফিসের অ্যাডমিন হিসেবে কাজ করতেন।
দুদক সূত্রে জানা যায়, তামহা সিকিউরিটিজ তাদের ব্যাক অফিস সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের মিথ্যা বা ভুয়া বিবরণী সরবরাহ করেছে। শুধু তাই নয়, এই ব্রোকার হাউজে যেসব বিনিয়োগকারী সরাসরি নগদ অর্থ জমা দিয়েছেন কাগজে তা থাকলেও বাস্তবে জমা হতো না।
এছাড়া কোম্পানিটির সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ক্যাশ বা চেকের মাধ্যমে যেসব বিনিয়োগকারী শেয়ার ক্রয়ের জন্য অর্থ জমা করেছিলেন তাও নিয়মনীতি ভঙ্গ করে তামহা সিকিউরিটিজের মালিক পক্ষ তাদের কর্মচারীদের সহায়তায় নগদ চেকের মাধ্যমে জমাকৃত অর্থ পরস্পর যোগসাজশে উত্তোলনপূর্বক আত্মসাৎ করেছেন।
দুদক সূত্রে আরো জানা যায়, বিও হিসাবধারীরা যাতে শেয়ার লেনদেনের প্রকৃত তথ্য জানতে না পারেন সে জন্য তাদের অজান্তে তাদের বিও হিসাবে প্রদত্ত ফোন নম্বর বা মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে তামহা সিকিউরিটিজের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মোবাইল নম্বর সংশ্লিষ্ট বিও হিসাবের বিপরীতে ইনপুট দেয়া হয়েছে। এর মূল হোতা তামহা সিকিউরিটিজের সেটলমেন্ট অফিসার (সিডিবিএল অফিসার) ও অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ মো. শাহরিয়ার কবীর, যিনি নিখুঁতভাবে এই অন্যায় কাজটি করেছেন। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের বিনা অনুমতিতে তাদের শেয়ার ক্রয় ও বিক্রয় করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, তামহা সিকিউরিটিজ ২০০৫ সালের ১৯ জানুয়ারি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) নিবন্ধিত হয়। ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর এর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে লেনদেন স্থগিত করে দেয় এক্সচেঞ্জটি।