চলতি বছরের প্রথম তিন মাসের (জানুয়ারি-মার্চ) ব্যবসায় শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ১৬টি ব্যাংকের ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। ব্যাংকগুলোর ঋণাত্মক ক্যাশ ফ্লোর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা। এই ১৬টি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে এবি ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি, ইসলামী ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক এবং উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড।
ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক অবস্থায় থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৫২ টাকা ৬ পয়সা। এতে প্রতিষ্ঠানটিতে মোট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো রয়েছে ঋণাত্মক ৮ হাজার ৩৮১ কোটি ৬১ লাখ ১৪ হাজার টাকা। গত বছরের প্রথম তিন মাসে ব্যাংকটির ক্যাশ ফ্লো পজিটিভ ছিল। সে সময় শেয়ারপ্রতি অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো ছিল ২৪ টাকা ২২ পয়সা।
ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পড়ার পাশাপাশি ব্যাংকটির মুনাফায়ও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গত বছরের তুলনায় ব্যাংকটির মুনাফা কমেছে ৩৩ শতাংশ। চলতি বছরের তিন মাসে ব্যাংকটি শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে ৩৫ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয় ৫২ পয়সা। মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও ব্যাংকটির সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। চলতি বছরের মার্চ শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ৪৩ টাকা ৪৩ পয়সা, যা বছরের মার্চে ছিল ৪১ টাকা ৩৯ পয়সা।
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক ৩০ টাকা ৯৪ পয়সা। এতে মোট ঋণাত্মক ক্যাশ ফ্লো হয়েছে ৩ হাজার ২৩৬ কোটি ৩৪ লাখ ৯১ হাজার টাকা। গত বছরও ব্যাংকটির ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক ছিল। গত বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে শেয়ারপ্রতি ঋণাত্মক ক্যাশ ফ্লো ছিল ৪ টাকা ৮১ পয়সা। এ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির ঋণাত্মক ক্যাশ ফ্লো প্রায় আটগুণ বেড়েছে।
ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হওয়ার পাশাপাশি ব্যাংকটির মুনাফায়ও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চলতি বছরের তিন মাসে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ৩৭ পয়সা, গত বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফাা হয় ৫৩ পয়সা। তবে সম্পদমূল্য বেড়েছে। চলতি বছরের মার্চ শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ২১ টাকা ৬৯ পয়সা, যা গত বছরের মার্চ শেষে ছিল ১৯ টাকা ৯৮ পয়সা।
শেয়ারপ্রতি ১৮ টাকা ৪২ পয়সা ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হওয়ার মাধ্যমে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে এবি ব্যাংক লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির ক্যাশ ফ্লো মোট ঋণাত্মক হওয়ার পরিমাণ ১ হাজার ৪৮৫ কোটি ৮০ লাখ ৩২ হাজার টাকা। এ ব্যাংকটির মুনাফা ও সম্পদেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চলতি বছরের তিন মাসে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ১৩ পয়সা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১৮ পয়সা। আর চলতি বছরের মার্চ শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ২৯ টাকা ৮৪ পয়সা, যা গত বছরের মার্চ শেষে ছিল ২৯ টাকা ৯৪ পয়সা।
বড় অঙ্কের ঋণাত্মক ক্যাশ ফ্লোর তালিকায় রয়েছে সিটি ব্যাংক। ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ১০ টাকা ৭১ পয়সা। অর্থাৎ, মোট ঋণাত্মক ক্যাশ ফ্লোর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৮৫ কোটি ৮৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। গত বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে ক্যাশ ফ্লো পজিটিভ ছিল। সে সময় শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো ছিল ৬ টাকা ৭১ পয়সা।
ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পড়লেও ব্যাংকটির সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। আর মুনাফা রয়েছে আগের বছরের সমান। চলতি বছরের মার্চ শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ২৮ টাকা ৮৪ পয়সা। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ছিল ২৮ টাকা ২১ পয়সা। আর বছরের প্রথম তিন মাসে ব্যাংকটি শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে ৭৪ পয়সা।