চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অন্যদিকে, আমদানি ব্যয় ক্রমাগত বাড়ছে। এতে কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। সর্বশেষ বৈদেশিক দায় পরিশোধের পর রিজার্ভ কিছুটা কমেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবাহ না হলে রিজার্ভের অঙ্ক আরও কমে আসত। এটিকে দুর্বল অর্থনীতির লক্ষণ হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবর মাস শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ২৪৩ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার। গত ১৪ নভেম্বর এটি কমে দাঁড়ায় তিন হাজার ১৬৫ কোটি ডলারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রপ্তানি আয় কমে যাচ্ছে বাংলাদেশের, কিন্তু আমদানি ব্যয় সে হারে কমেনি। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি ব্যয় পরিশোধে রিজার্ভ কিছুটা কমেছে। কিন্তু প্রবাসীয় আয় যোগ হওয়ায় আবার বৃদ্ধিও পেয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মতে, রপ্তানি আয়ের চিত্র আরও কয়েক মাস নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে থাকলে রিজার্ভের পরিমাণ আরও কমে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন তারা। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, রপ্তানি আয় না বাড়লেও আমদানিনির্ভর দেশ হওয়ায় এ খাতে ব্যয় কিন্তু ঠিকই হবে।
জানা গেছে, বর্তমানে আকুর সদস্য ৯টি রাষ্ট্র হচ্ছে-বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ। আকুর অন্যান্য সদস্য দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের বিল প্রতি দুই মাস পরপর পরিশোধ করে থাকে বাংলাদেশ। আকুর মাধ্যমেই পরিশোধ করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৭ নভেম্বর বাংলাদেশ আকুর বিল পরিশোধ করে ৯৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। এতেই কমে যায় রিজার্ভের পরিমাণ। পরে প্রবাসী আয় যোগ হওয়ায় কিছুটা বৃদ্ধি পায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১১ ডিসেম্বর শেষে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ২১৯ কোটি ৮৭ লাখ মার্কিন ডলার, ছয় মাস আগে গত জুনে যা ছিল তিন হাজার ২৭১ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। ছয় মাসের ব্যবধানে রিজার্ভ কমেছে ৫১ কোটি ৭৮ লাখ ডলার।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মানসুর বলেন, ‘আমদানি ব্যয়ও কিছুটা কমেছে, কিন্তু কমার হার রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার হারের তুলনায় কম। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পণ্য আমদানি কমে যাওয়া ভালো নয়। অর্থনীতি যে দুর্বল হচ্ছে, তার লক্ষণ এটি। এতে বছর শেষে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির সরকারি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় তৈরি হবে।’
তিনি বলেন, আমদানি কমে যাওয়া মানেই উৎপাদন কমে যাওয়া। এতে ভ্যাট আদায় কমবে, রপ্তানি আরও কমে যাবে। যদি আমদানি চিত্র ভালো থাকত, তাহলে বোঝা যেত রপ্তানি সামনের দিকে বৃদ্ধি পাবে। এখন সরকারকেই ভাবতে হবে আয় বাড়ানো যায় কীভাবে। এর ওপরই নির্ভর করছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের পাঁচ মাস অর্থাৎ নভেম্বর শেষে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানি আয় কমেছে ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এ সময়ে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৮০৫ কোটি ডলার, অথচ আয় হয়েছে এক হাজার ৫৭৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার। একক মাস হিসেবে নভেম্বরে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩০৫ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। অথচ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৭২ কোটি ২০ লাখ ডলার। অর্থাৎ নভেম্বরে রপ্তানি আয় কমেছে ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ। আর গত অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছর রপ্তানি কমেছে সাত দশমিক ৫৯ শতাংশ।
অপরদিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর মাস পর্যন্ত আমদানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক তিন দশমিক ১৭ শতাংশ। আর নভেম্বর শেষে প্রবাসী আয় দাঁড়িয়েছে ৭৭১ কোটি ৪১ লাখ ডলার। প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধির হার ২২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের এ সময়ে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৯ শতাংশ।
শেয়ারবার্তা / হামিদ