সম্প্রতি ওয়াশিংটন সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বড় অঙ্কের ঋণ চুক্তি সই হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে ৫টি প্রকল্পে ২৫০ কোটি (২.৫০ বিলিয়ন) ডলারের ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক। বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা) ধরে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ২৬ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা।
প্রধানমন্ত্রীর বিনিয়োগ ও বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনো একদিনে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে এত বড় অঙ্কের ঋণ চুক্তি সই হয়নি।’
সোমবার (১লা মে) যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাসের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী পালন উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠান শেষে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস ও শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে দুপক্ষের মধ্যে এই চুক্তি সই হয়।
চার দিনের সফরে ২৫ এপ্রিল জাপান যান প্রধানমন্ত্রী। ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি জাপানে থাকেন। ২৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী জাপান থেকে সরাসরি ওয়াশিংটন যান বিশ্বব্যাংকের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে।
অনুষ্ঠান শেষে সালমান এফ রহমান বলেন, বাংলাদেশ-বিশ্বব্যাংকের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংক সদর দপ্তরে একটি বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অনেক আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস।
তিনি বলেন, সেই অনুষ্ঠান সুন্দর সফলভাবে শেষ হয়েছে। আমাদের জন্য খুবই ভালো খবর হলো এই অনুষ্ঠানে ৫টি প্রকল্পে আড়াই বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি সই হয়েছে। এর আগে কখনই একদিনে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে এতো বড় অঙ্কের ঋণ চুক্তি সই হয়নি।
প্রধানমন্ত্রীর বিনিয়োগ ও বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশের সরকারপ্রধান ও বিশ্বব্যাংকপ্রধানের উপস্থিতিতে এই অনুষ্ঠান বড় অঙ্কের ঋণ চুক্তি সই বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের সম্পর্ক আরও জোরদার করবে।
প্রায় ১০ বছর আগে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন দেখা দেয়। দুর্নীতির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ২০১৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সরকার পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ সহায়তার অনুরোধ প্রত্যাহার করে নেয়ার পর নিজস্ব অর্থে এই সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।
অবশেষে ২০২২ সালের জুন মাসে চালু হয়েছে সেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু। সেতুটি একদিকে যেমন বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে, তেমনি পুরোপুরি নিজস্ব অর্থে এই সেতু নির্মাণ করে বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।
তবে পদ্মা সেতু নির্মাণে ঋণ না নিলেও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের খুব একটা অবনতি হয়নি। সংস্থাটি বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়ন অব্যাহত রেখেছে। এমনকি পদ্মা সেতুতে যে অর্থায়ন করার কথা ছিল, তার চেয়েও বেশি অর্থ অতিরিক্ত হিসেবে অন্য প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে।
যে ৫টি প্রকল্পের ঋণ চুক্তি সই হয়েছে তার একটি হলো আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য বিশেষ করে নেপাল ও বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণে সড়কসহ অন্য যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন। এই প্রকল্পে ৭৫ কোটি ডলার ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক।
অন্যদিকে ভাঙন থেকে নদীতীর রক্ষা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণের আরেকটি প্রকল্পে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক। এই প্রকল্পের আওতায় মূলত প্রকল্প এলাকায় বন্যাসহ অন্যান্য দুর্যোগ থেকে মানুষ বাঁচাতে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।
এ ছাড়া বাজেট সহায়তা হিসেবে আরেকটি প্রকল্পে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক। সেই সঙ্গে আরও দুই-তিনটি প্রকল্পে ৭৫ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি সই হয়েছে বলে জানা গেছে।