বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে উন্নয়নের অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগে বিশাল সম্ভাবনা আছে। এখানে বিনিয়োগের অনেক সুযোগ অপেক্ষা করছে। এখানে বিনিয়োগ করে এখন সর্বোচ্চ রিটার্ন পাওয়া যাচ্ছে। সেজন্য কাতারে অবস্থানরত প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানাচ্ছি।
সোমবার (৬ মার্চ) কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৩ ‘দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: পটেনশিয়ালস অব ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক রোড শোতে তিনি এসব কথা বলেন। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশের বেশ সাফল্য আছে। নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য এ দেশের সম্ভাবনা অনেক। বাংলাদেশের জিডিপি এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। তুলনামূলকভাবে অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি এখনো কম। আমাদের রেমিট্যান্স আয়ও বাড়ছে। এখনো বাংলাদেশের অর্থনীতি যথেষ্ট ভালো অবস্থানে আছে। তাই, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এবং অশেষ সম্ভাবনা আছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে গ্রোইং ট্রেড রিলেশনশিপ রয়েছে। এ সম্পর্ক দিনে দিনে আরও শক্তিশালী হচ্ছে। কাতার থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২৪ বছরে বাংলাদেশ ও কাতারে মধ্যে পণ্য রপ্তানি-আবদানি অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আজকের এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশ সম্পর্কে যেসব তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হচ্ছে, সেটার কারণে আমরা আশা করছি, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বাড়বে।
বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে শক্তিশালী সুসম্পর্ক বিরাজ করছে। উইন উইন সিচুয়েশন তৈরিতে আগামীতে দুই দেশ একত্রে অনেক বিষয়ে কাজ করার সুযোগ আছে। আমরা কাতার থেকে এলএনজি আমদানি করছি। আমাদের সুসম্পর্কের কারণে ব্যবসা ও বাণিজ্য একের পর এক বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের দেশের শ্রমিকরা কাতারে কাজ করছে। কাতারের অবকাঠামো ও সেবা খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশের ৪০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক কাজ করে যাচ্ছে। কাতারের উন্নয়নে বাংলদেশের শ্রমিকরা বড় ভূমিকা রাখছে।
তিনি আরও বলেন, গত ৫০ বছরের বাংলাদেশ অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখিন হয়েছে। এ সমস্যটি ছিল আন্তর্জাতিক প্রোপাগান্ডা, নেতিবাচক খবর, অপপ্রচার। বলা হতো— আমরা গরিব দেশ, শিক্ষার হার অনেক কম, নারী ও পুরুষে বৈষম্য, জ্বালানিস্বল্পতা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতার অভাব আছে। এগুলো সবই পুরনো ধারণা। আসলে সেগুলো আর বিদ্যমান নেই। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে জিডিপি এখন ৬ থেকে ৪৬৫ বিলিয়নে উন্নীত হয়েছে। পার ক্যাপিটা জিএনআই ১২০ থেকে ২ হাজার ৮২৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে। এতেই বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশে কী ধরণের পরিবর্তন হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অতিথিরা বিভিন্ন সেক্টর নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। সেখানে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা, বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, সরকারের বিনিয়োগবান্ধব নীতি, শেয়ারবাজার ও সার্বিক অর্থনীতির পরিস্থিতি এবং এফডিআই’র বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা অতিথিদের সামনে তুলে ধরা হয়।
রোড শোতে উপস্থিত ছিলেন—পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া, অর্থ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান, বিএসইসি’র ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্টের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম, বিডার পরিচালক মো. আরিফুল হক, বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মো. কাওসার আলী ও বিএসইসির যুগ্ম পরিচালক মো. রাশিদুল আলমসহ কাতারে বসবাসরত বাংলাদেশি ও কাতারের বিনিয়োগকারীরা।
কাতারের রোড শোতে এবার বিএসইসির সঙ্গে আয়োজক হিসেবে আছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। পার্টনার হিসবে আছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সহযোগিতায় আছে ‘প্রাণ’ ও ‘বাংলাদেশ ফোরাম, কাতার’।