দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) গত ৫ মাস ধরে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছাড়াই চলছে। এমডি নিয়োগের জন্য ডিএসই কর্তৃপক্ষ দুই দফায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল। কিন্তু যোগ্য এমডি পায়নি। এরপর তৃতীয় দফা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এ দফায় এমডি না পেলে এগিয়ে আসবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কমিশন নিজে ডিএসইতে প্রশাসক (অ্যাডমিনিস্ট্রেটর) বসাবে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
ডিএসই দুই দফায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েও যোগ্য এমডি না পাওয়ায় গত ১০ ডিসেম্বর তৃতীয় দফায় এমডির খোঁজে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এতে আগ্রহী প্রার্থীদেরকে আগামি ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে জীবনবৃত্তান্তসহ আবেদন করতে বলা হয়েছে।
ডিএসইর এক সূত্রে জানা গেছে, দফায় দফায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েও যোগ্য এমডি না পাওয়ার বিষয়টি ভালোভাবে নিতে পারছে না কমিশন। এতে ডিএসইর মতো প্রতিষ্ঠানকে এমডি ছাড়া চলতে হচ্ছে। তাই তৃতীয় দফায় এমডি পাওয়া না গেলে, কমিশন পুঁজিবাজারের স্বার্থে নিজেই প্রশাসক বসাবে।
অন্য পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জও (সিএসই) এমডি নেই ৬ মাসের বেশি সময় ধরে। এই শূন্যস্থান পূরণে এরইমধ্যে এগিয়ে এসেছে বিএসইসি। স্টক এক্সচেঞ্জটিতে চলতি বছরের ৩১ মে এম সাইফুর রহমান মজুমদারের এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এরপর থেকে সিএসইর এমডির পদটি শূন্য রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সিএসইর পরিচালনা পর্ষদ এমডি নিয়োগ দিতে পারেনি। যাতে সিএসইতেও এমডির শূন্যস্থান পূরণের জন্য কাজ করছে বিএসইসি। এরইমধ্যে কমিশন সিএসইকে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত এমডি কি কি সুবিধা পাবে, তা জানতে চেয়ে একটি চিঠি ইস্যু করেছে।
জানা গেছে, চলতি বছরের ১১ জুলাই ডিএসইর এমডি পদ শূন্য হয়। ওই পদ পূরণে নতুন এমডির খোঁজে গত ৭ আগস্ট বিজ্ঞপ্তি দেয় ডিএসই কর্তৃপক্ষ। এতে আগ্রহী প্রার্থীদেরকে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়েছিল। যেখানে ১৬ জন আবেদন করেছিলেন। তবে ওই ১৬ জনের মধ্যে কাউকেই যোগ্য মনে করেনি ডিএসইর পর্ষদ এবং নমিনেশন অ্যান্ড রিমিউনারেশন কমিটি (এনআরসি)। এরপরে গত ৫ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফায় এমডির খোজেঁ বিজ্ঞপ্তি দেয় ডিএসই। এক্ষেত্রে আবেদন করেছিল ৩ জন। অর্থাৎ দুই দফায় ১৯ জন ডিএসইর এমডি পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করেছিল।
দুই দফায় আবেদনকারীদের মধ্য থেকে গত ২ অক্টোবর ৭ জন প্রার্থীকে সাক্ষাতকারের জন্য ডাকা হয়। পরবর্তীতে ৭ জনের মধ্যে ৩জনকে নিয়ে শর্ট লিস্ট করা হয়। যাদেরকে গত ৬ অক্টোবর ডিএসইর পর্ষদ ডাকে। তবে ওই ৩ জনের মধ্যেও কাউকে চূড়ান্ত নিয়োগের জন্য যোগ্য মনে করেনি পর্ষদ। যাতে যোগ্য এমডির খোঁজে আবারও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৬ অক্টোবরের পর্ষদ সভায়। যা গত ১০ ডিসেম্বর প্রকাশ করা হয়েছে।
সূত্র মতে, আগের দু’দফা বিজ্ঞপ্তির আলোকে দেশি-বিদেশি, অধ্যাপক, ব্যাংকার, নন ব্যাংকার এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টসহ বিভিন্ন খাতের ১৯ জন আবেদন করেছিলেন। এর মধ্য থেকে ডিএসইর নিয়োগ বোর্ড সাক্ষাতকারের জন্য ৭জনকে মনোনীত করেছিল। ৭ জনের মধ্যে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের(সিএসই) সাবেক এমডি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ব্যাংকার, নন-ব্যাংকার, প্রফেশনাল অ্যাকাউন্টেন্ট এবং এফসিএ ছিলেন।
আগের ধারাবাহিকতায় তৃতীয় দফার বিজ্ঞপ্তিত্রে এমডি পদটিতে আবেদনের জন্য যোগ্যতা হিসেবে বিজনেস, ইকোনোমিকস, স্ট্যাটিসটিকস, ম্যাথমেটিকস অথবা আইনে ব্যাচেলর ডিগ্রিসহ কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছিল। আর প্রফেশনাল ডিগ্রি সিএফএ, সিএ, সিএমএ, সিএস, সিপিএ ইত্যাদির ক্ষেত্রেও ১০ বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। তবে ক্যাপিটাল মার্কেটের ওপরে আন্তর্জাতিক দক্ষতা সম্পন্ন প্রার্থীর ক্ষেত্রে অন্যান্য শর্ত শিথিল করা হয়। আবেদনের সময় দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবিসহ জীবনবৃত্তান্ত পাঠাতে বলা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, ব্যবস্থাপনা থেকে মালিকানা পৃথকীকরণে ডি-মিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিমের পর দ্বিতীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ২০১৬ সালের ২৯ জুন নিয়োগ পান কে এ এম মাজেদুর রহমান। যার মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ১১ জুলাই। তারপর থেকেই পদটি খালি রয়েছে। ডিএসইর প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আবদুল মতিন পাটোয়ারী বর্তমানে স্টক এক্সচেঞ্জটির ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
শেয়ারবার্তা / আনিস