প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, বিদেশগামী বাংলাদেশিদের জন্য বাধ্যতামূলক ‘প্রবাসী কর্মী বিমা’ চালু করতে যাচ্ছে সরকার। প্রবাসী দিবসে (১৯ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সংক্রান্ত একটি প্রিমিয়াম হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে প্রকল্পটি উদ্বোধন করবেন।
তিনি বলেন, এলক্ষ্যে বুধবার (১১ ডিসেম্বর) ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড ও জীবন বীমা করপোরেশনের মধ্যে চুক্তি সই হয়েছে। পাইলটিং প্রজেক্ট হিসেবে এক বছরের জন্য জীবন বীমা করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। এক বছর পর পর্যালোচনা করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত চুক্তি সই অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান। চুক্তি সই করেন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক কাজী মুহাম্মদ জুলহাস ও জীবন বীমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহফুজুল হক।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থিক প্রবিধান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম, জীবন বীমা করপোরেশনের চেয়ারম্যান শেলীনা আফরোজা। এসময় প্রবাসী কল্যাণ সচিব সেলিম রেজা, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ রিক্রুটিং এজেন্সি বায়রা, জীবন বীমা করপোরেশন এবং ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
বিদেশগামী কর্মীদের বিমাকারী হিসেবে দায়িত্বে থাকছে জীবন বীমা করপোরেশন। তবে কর্মীর পক্ষে সার্বিক বিষয় তদারকির দায়িত্ব পালন করবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড।
মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, বিদেশগামী বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য এই বিমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একটু দেরিতে হলেও আমরা প্রবাসীদের জন্য কিছু করতে পেরেছি। এটাই আমাদের স্বার্থকতা। আমরা প্রথমে পাইলট প্রকল্প দিয়ে শুরু করেছি। আশা করছি প্রবাসীক র্মীদের কাছ থেকে আরও বেশি সাড়া পাবো। তখন ব্যাপক আকারে করা হবে।
প্রবাসী কল্যাণ সচিব সেলিম রেজা বলেন, জীবন বীমা করপোরেশন কর্তৃক বিদেশগামী কর্মীদের জন্য দু’টি পরিকল্পনা রাখা হয়েছে। তারা যেকোনো একটি গ্রহণ করতে পারবেন। প্রিমিয়ামের পরিমাণ যাই হোক না কেন, প্রত্যেক বিদেশগামী কর্মীকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা প্রিমিয়াম প্রদান করা হবে। বাকি প্রিমিয়াম কর্মী নিজে বহন করবে।
পরিকল্প-১’র আওতায় বিমার পরিমাণ দুই লাখ টাকা রাখা হয়েছে। বিমার মেয়াদ হবে দুই বছর এবং বয়সসীমা ১৮ থেকে ৫৮ বছর। এককালীন প্রিমিয়াম ধরা হয়েছে ৯৯০ টাকা। এর মধ্যে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে দেওয়া হবে ৫০০ টাকা এবং কর্মীকে বহন করতে হবে ৪৯০ টাকা।
পরিকল্প-২’র আওতায় বীমার পরিমাণ পাঁচ লাখ টাকা করা হয়েছে। এক্ষেত্রেও বিমার মেয়াদ ও বয়সসীমা একই, অর্থাৎ দুই বছর এবং ১৮ থেকে ৫৮ বছর রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে এককালীন প্রিমিয়াম ধরা হয়েছে দুই হাজার ৪৭৫ টাকা। এক্ষেত্রে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে এককালীন প্রিমিয়াম বাবদ দেওয়া হবে ৫০০ টাকা। অবশিষ্ট অর্থ কর্মীকে বহন করতে হবে।
সচিব বলেন, বিমার মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী কর্মীরা স্ব-উদ্যোগে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে পরর্বতী দুই বছর অন্তর অন্তর বিমাপত্রটি নবায়ন করতে পারবেন। বিমার মেয়াদ উর্ত্তীণ হওয়ার আগে নবায়ন করা হলে বিমা গ্রাহককে প্রিমিয়ামের ওপর দুই শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে। বিমার মেয়াদ উর্ত্তীণ হওয়ার ৩০ দিন পর নবায়ন করা হলে বিমা গ্রাহককে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নবায়ন করতে হবে।
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে জানানো হয়, জীবন বীমা করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি সইয়ের দিন থেকে এক বছরের জন্য চুক্তি করা হয়েছে। বিদেশগামী কর্মী বিদেশ গমনের উদ্দেশ্যে বহির্গমন ছাড়পত্র গ্রহণের তারিখ থেকে বিমার মেয়াদ দুই বছর পর্যন্ত বিমা দাবি জীবন বীমা করপোরেশন পরিশোধ করবে। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে পাওয়া তালিকার ভিত্তিতে জীবন বীমা করপোরেশন কর্তৃক ইস্যুকৃত বিমা সার্টিফিকেট অনলাইন থেকে সহজেই নেওয়া যাবে।
বিমার সুবিধাগুলো হলো- মৃত্যুর ক্ষেত্রে বিমার মেয়াদকালে স্বাভাবিক মৃত্যু হলে অথবা দুর্ঘটনাজনিত কারণে বিমার মেয়াদকালে বা মেয়াদোর্ত্তীণের পর ৯০ দিনের মধ্যে মারা গেলে বিমাগ্রহীতা শতভাগ সুবিধা পাবে। সম্পূর্ণ ও স্থায়ী অক্ষমতা বা পঙ্গুত্বের ক্ষেত্রে- উভয় চোখের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট, কবজির উপর থেকে উভয় হাত কাটা, গোড়ালির উপর থেকে উভয় পা কাটা, কবজির উপর থেকে এক হাত ও গোড়ালির উপর থেকে এক পা কাটা, এক চোখ ও কবজির উপর থেকে এক হাত নষ্ট/কাটা, এক চোখ ও গোড়ালির উপর থেকে এক পা নষ্ট/কাটা গেলে বিমাগ্রহীতা শতভাগ সুবিধা পাবে।
দাবি পরিশোধ হলো- চুক্তি অনুযায়ী বিমা দাবির অর্থ কে প্রাপ্য তা নির্ধারণ করবে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। বিমা দাবির অর্থ জীবন বীমা করপোরেশন থেকে গ্রহণ করে বিমাগ্রহীতাকে দেবে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড।
যেসব ক্ষেত্রে বিমা সুবিধা প্রযোজ্য হবে না, সেগুলো হলো- বিমার ঝুঁকি গ্রহণের ১২ মাসের মধ্যে আত্মহত্যা অথবা স্বীয় ক্ষতি, এইচআইভি সর্ম্পকিত রোগে মৃত্যু অথবা অসুস্থতা, উচ্চ ঝুঁকি সম্পন্ন খেলা অথবা দুঃসাহসিক কার্যকলাপ, যেমন- মোটর রেসিং, মুষ্টিযুদ্ধ, স্কুবা ডাইভিং ইত্যাদির কারণে অথবা মাদকাসক্তির কারণে মৃত্যু, যুদ্ধ অথবা দাঙ্গা এবং গুরুতর অপরাধে আদালতের রায়ে মৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত হলে বিমাগ্রহীতা কোনো সুবিধা পাবে না।
শেয়ারবার্তা / হামিদ