পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে মৌলভিত্তির দৌঁড়ে এগিয়ে রয়েছে ব্যাংক খাতের কোম্পানি। বর্তমানে ব্যাংক খাতের শেয়ারের মূল্য-আয় অনুপাত বা পিই রেশিও ৭.৮৮। নিয়ম অনুযায়ী, এ ধরনের পিই রেশিও থাকা কোম্পানির শেয়ার চাহিদা থাকার কথা। খাতটিতে দুর্বল কোম্পানির সংখ্যাও কম। কিন্তু তা সত্ত্বেও তলানিতে রয়েছে এ খাতের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর।
ব্যাংক খাতে লভ্যাংশ প্রদানের হারও রয়েছে অন্য খাতের তুলনায় সন্তোষজনক। আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ও এবি ব্যাংক ছাড়া খাতটির কোনো কোম্পানি ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে নেই। তারপরও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নেই এ খাতে।
বর্তমানে এ খাতে তালিকাভুক্ত ৩০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৯টি বা প্রায় ৫৯ শতাংশ ব্যাংক শেয়ারের দর রয়েছে ২০ টাকার নিচে। অন্যদিকে বাজার পতনের জেরে অভিহিত দরের নিচে নেমে গেছে চার প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর। এছাড়া অভিহিত দরের নিচে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে আরও তিন ব্যাংকের শেয়ার।
বর্তমানে এ খাতের যেসব ব্যাংকের শেয়ারদর ২০ টাকার নিচে অবস্থান করছে, সেগুলো হচ্ছে-এবি ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ঢাকা ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, এনবিএল, প্রিমিয়ার ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, এসআইবিএল, সাউথইস্ট ব্যাংক ও ইউসিবিএল।
এর মধ্যে অভিহিত দরের নিচে অবস্থান করছে এবি ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, এনবিএল ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের শেয়ারদর। অন্যদিকে অভিহিত দরের কাছাকাছি লেনদেন হচ্ছে ওয়ান ব্যাংক, এনসিসি, আইএফআইসি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ও এক্সিম ব্যাংকের শেয়ার।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, ব্যাংক খাতের শেয়ারদর পতন হওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে এ খাতের বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ না থাকা। ২০১০ সালের পর থেকে বিষয়টি অব্যাহত রয়েছে। কাক্সিক্ষতভাবে দর না বাড়ায় এসব শেয়ার থেকে সরে যাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। আবার অনেক শেয়ার অপেক্ষাকৃত কম দরে কেনার পরও লোকসান হচ্ছে ভুক্তভোগীদের। যে কারণে তারা এ শেয়ারের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন।
যদিও বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটি বিনিয়োগকারীদের ভুল ধারণা। কারণ, এ খাতটিকে বলা হয় পুঁজিবাজারের সবচেয়ে শক্তিশালী খাত। বর্তমানে এসব শেয়ারে বিনিয়োগ করলে তারা অন্য সব খাত থেকে বেশি নিরাপদে থাকতে পারেন। তবে বিনিয়োগটা অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদি হতে হবে। যারা অল্প সময়ে পুঁজি দ্বিগুণ করতে চান কিংবা খুব দ্রুত মুনাফা করতে চান, তাদের জন্য এসব শেয়ার নয়।
জানতে চাইলে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, শুধু ব্যাংক খাতই নয়, আমাদের দেশের বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী যে কোনো খাতের কোম্পানি থেকে খুব দ্রুত মুনাফা করতে চান। সেজন্য তারা ঘন ঘন পোর্টফোলিওতে পরিবর্তন আনেন। এটা করতে গিয়ে তারা সবচেয়ে বেশি ভুল করেন এবং কোনো খাত থেকেই ভালো মুনাফা করতে পারেন না। বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করা উচিত। তাহলে যে কোনো খাত থেকেই ভালো মুনাফা করা সম্ভব।
এদিকে সম্প্রতি কয়েক দিন পুঁজিবাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও ব্যাংক খাতের কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ছে না। বেশিরভাগ সময় এসব শেয়ারদর কমছে। গত সপ্তাহেও এর ব্যতিক্রম ছিল না। সপ্তাহের বেশিরভাগ দিনই কমতে দেখা গেছে এসব শেয়ারদর। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে তালিকাভুক্ত ৮০ শতাংশ ব্যাংকের শেয়ারদর কমতে দেখা গেছে।
শেয়ারবার্তা / আনিস