পুঁজিবাজারে দরপতন অব্যাহত থাকায় প্রতিদিনই দর হারাচ্ছে অধিকাংশ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের। এভাবে দর কমতে থাকায় অনেক কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট অভিহিত মূল্যের (ফেসভ্যালু) নিচে নেমে গেছে। বৃহস্পতিবার লেনদেন হওয়া তালিকাভুক্ত ৩৪৬ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৭২টি কোম্পানির শেয়ার অভিহিত মূল্য ১০ টাকার কমে কেনাবেচা হয়েছে। যা লেনদেন হওয়া সব কোম্পানি ও ফান্ডের প্রায় ২০ শতাংশ। আর গত ৫ নভেম্বর ৩৫৬টি কোম্পানির মধ্যে ৫২টি অভিহিত মূল্য ১০ টাকার কমে কেনাবেচা হয়েছে। যা তালিকাভুক্ত সব শেয়ার ও ফান্ডের প্রায় ২৪ শতাংশ।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, অভিহিত মূল্যের নিচে থাকা শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৭২টি বিভিন্ন কোম্পানি রয়েছে। বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ৩৫৬টি। অথচ ২০১৭ সালের নবেম্বরে এমন দরে কেনাবেচা হওয়া শেয়ার ছিল মাত্র ৭টি, যা মোটের ২ শতাংশ। ওই বছর তালিকাভুক্ত শেয়ার ছিল ৩০১টি। ২০১৬ সালে ৩১৫ শেয়ারের মধ্যে ৩৫টির দর ছিল ১০ টাকার কম।
তালিকাভুক্ত বিভিন্ন খাতের মধ্যে বর্তমানে মিউচুয়াল ফান্ড খাতে অভিহিত মূল্যের কমে কেনাবেচা হওয়া শেয়ার সবচেয়ে বেশি। এ খাতে তালিকাভুক্ত ৩৭টি কোম্পানির মধ্যে ৩২ কোম্পানির শেয়ার দর এখন ১০ টাকার নিচে। অর্থাৎ খাতটির ৮৬ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার অভিহিত মূল্যের নিচে কেনাবেচা হচ্ছে, যা খাতওয়ারি হিসেবে সর্বোচ্চ।
বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত ৫৫ কোম্পানির মধ্যে ১৬ কোম্পানির বাজার দর এখন ১০ টাকার নিচে। অর্থাৎ খাতটির ২৯ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার অভিহিত মূল্যের নিচে কেনাবেচা হচ্ছে, আর্থিক খাত। পুঁজিবাজারে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৩। এর মধ্যে ৯টির বাজার দর ১০ টাকার কম। যা মোট আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৩৯ শতাংশ। দু’বছর আগে যা ছিল মাত্র একটি। ব্যাংক খাতে মোট কোম্পানির সংখ্যা ৩০টি এর মধ্যে ৪ কোম্পানির শেয়ার দর ১০ টাকার কম। যা মোট ব্যাংকের ১৩ শতাংশ। সিরামিক খাতে মোট কোম্পানির সংখ্যা ৫টি এর মধ্যে ২ কোম্পানির শেয়ার দর ১০ টাকার কম। যা এ খাতে মোট কোম্পানির ৪০ শতাংশ। প্রকৌশল খাতে মোট কোম্পানির সংখ্যা ৩৯টি এর মধ্যে ৪ কোম্পানির শেয়ার দর ১০ টাকার কম। যা এই খাতে মোট কোম্পানির ১০ শতাংশ। খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে মোট কোম্পানির সংখ্যা ১৭টি এর মধ্যে ১টি কোম্পানির শেয়ার দর ১০ টাকার কম। যা এই খাতে মোট কোম্পানির ৬ শতাংশ। বিবিধ খাতে মোট কোম্পানির সংখ্যা ১৩টি এর মধ্যে ১ কোম্পানির শেয়ার দর ১০ টাকার কম। যা এই খাতে মোট কোম্পানির ৭ শতাংশ।
মিউচুয়াল ফান্ড খাতে মোট কোম্পানির সংখ্যা ৩৭টি এর মধ্যে ৩২ কোম্পানির শেয়ার দর ১০ টাকার কম। যা এই খাতে মোট কোম্পানির ৮৬ শতাংশ। মিউচুয়াল ফান্ডগুলো দীর্ঘদিন থেকে অভিহিত মূল্যের কমে কেনাবেচা হচ্ছে। ২০১৭ সালের নবেম্বরে ৩৬ ফান্ডের মধ্যে ২৯টি এবং ২০১৮ সালের নবেম্বরে ৩৩টির মধ্যে ২৯টি এমন দরে কেনাবেচা হয়।
ওষুধ ও রসায়ন খাতে মোট কোম্পানির সংখ্যা ৩২টি এর মধ্যে ৪ কোম্পানির শেয়ার দর ১০ টাকার কম। যা এ খাতে মোট কোম্পানির ১২ শতাংশ। ভ্রমণ খাতে মোট কোম্পানির সংখ্যা ৫টি এর মধ্যে ২ কোম্পানির শেয়ার দর ১০ টাকার কম। যা এ খাতে মোট কোম্পানির ৪০ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে ডিএসইর ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএর সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, কোম্পানিগুলোর বাজারদর অভিহিত মূল্যের নিচে নেমে যাওয়া অত্যন্ত শঙ্কার বিষয় প্রতিটি পুঁজিবাজারে কিছু খারাপ শেয়ার থাকে। তাই বলে দীর্ঘদিন অভিহিত মূল্যের নিচে কেনাবেচা হওয়া ভাল লক্ষণ নয়। তিনি আরও বলেন, কোন কোম্পানি ভাল ব্যবসা করতে না পারলে সেটি ভাল লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হয়। ফলে বিনিয়োগকারীরা ওই কোম্পানির শেয়ারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এতে ওই শেয়ারের দর কমে যায়। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানে ব্যবসা কমে যাওয়ার মূল কারণ সুশাসনের অভাব, যা সব সময় সামনে আসে না। তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে এখনও সুশাসন প্রতিষ্ঠা হয়নি, কিছু ভাল উদ্যোক্তার কারণে গুটিকয়েক কোম্পানিতে সুশাসন রয়েছে।
শেয়ারবার্তা / হামিদ