২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে মোট ১০৭টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে ৩৪টিই ছিল বস্ত্র খাতের কোম্পানি। তালিকাভুক্তির দৌড়ে এগিয়ে ছিল এ খাতের প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে পুঁজিবাজারে মোট ৫৫টি বস্ত্র খাতের প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত রয়েছে, যার মধ্যে ১৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর এখন ফেসভ্যালু বা অভিহিত দরের নিচে অবস্থান করছে।
অভিহিত দরের নিচে থাকা ১৮ কোম্পানি হচ্ছে-আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল, ঢাকা ডায়িং, ডেল্টা স্পিনিং, ফ্যামেলিটেক্স, জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন, ম্যাকসন স্পিনিং, মেট্রো স্পিনিং, মিথুন নিটিং, নূরানী ডায়িং, আরএন স্পিনিং, সাফকো স্পিনিং, তাল্লু স্পিনিং, তুংহাই নিটিং, ফারইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডায়িং ইন্ডাস্ট্রিজ ও জাহিন টেক্সটাইল। এর মধ্যে জাহিন টেক্সটাইল, তুংহাই নিটিং, তাল্লু স্পিনিং, আরএন স্পিনিং, জেনারেশন নেক্সট, ফ্যামেলিটেক্স, ঢাকা ডায়িং এবং সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের শেয়ার বিক্রি হচ্ছে পাঁচ টাকার কমে। ফলে এসব কোম্পানির শেয়ার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের ভোগান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, তালিকাভুক্তির দৌড়ে এগিয়ে থাকলেও এই খাতের কোম্পানি থেকে বেশি ঠকছেন বিনিয়োগকারীরা। তাই এ ধরনের কোম্পানি অনুমোদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জের (বিএসইসি) আরও সর্তক থাকা দরকার। তাদের অভিমত, তালিকাভুক্তির পর বেশিরভাগ কোম্পানির আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ছে। তারপরও এই খাতের কোম্পানির প্রতি আস্থা ধরে রেখেছে বিএসইসি।
এদিকে বর্তমানে পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে বর্তমানে ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে রয়েছে ১৪টি প্রতিষ্ঠান। পুঁজিবাজারে থাকা ২২ খাতের ফান্ড ও কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ‘জেড’ ক্যাটেগরির কোম্পানি রয়েছে এ খাতে। এসব কোম্পানি বছরের পর বছর শেয়ারহোল্ডারদের কোনো রিটার্ন দিতে পারছে না। এই খাতের কয়েকটি কোম্পানি তালিকাচ্যুত হওয়া ঝুঁকিতে রয়েছে। কয়েকটি কোম্পানির শিগগির মালিকানা বদল হবে, পুঁজিবাজারে এমন গুঞ্জনও শোনা যায়।
এদিকে বস্ত্র খাতের কোম্পানির বোনাস শেয়ার দেওয়ার হারও বেশি। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এই খাতের বেশিরভাগ কোম্পানি শুরু থেকেই বোনাস শেয়ার ইস্যু করে। সেই তুলনায় তাদের ব্যবসা বাড়ে না, বা প্রতিষ্ঠানের কাক্সিক্ষত উন্নয়নও হয় না, যার ফলে আগ্রহ কমতে থাকে এসব শেয়ারের। শুরু হতে থাকে দরপতন। ফলে এখানে যাদের বিনিয়োগ থাকে, তারা লোকসানের মুখে পড়ে যায়।
সংশ্লিষ্টদের মতে, যখন একটি খাতের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের অবস্থা নাজুক হয়, তখন বিএসইসির উচিত ওই শ্রেণির কোম্পানির অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে একটু হিসাবি হওয়া। নতুন ইস্যু আনতে হবে, এটা ভেবে কোম্পানির অনুমোদন দেওয়া ঠিক হবে না। কারণ দুর্বল কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়ার চেয়ে না হওয়া অনেক ভালো। এতে পুঁজিবাজার এবং বিনিয়োগকারী উভয়ই উপকৃত হয়।
এ প্রসঙ্গে প্রবীণ বিনিয়োগকারীর হেলাল উদ্দীন বলেন, বিনিয়োগকারীরা সবচেয়ে বেশি প্রতারিত হচ্ছেন বস্ত্র খাত থেকে। এই খাতের বেশিরভাগ কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে ১৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এর আগে তারা ইচ্ছামতো প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করে। আর কোম্পানি বাজারে আসার পর বেশি দরে শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে বাজারে থেকে সরে পড়ে। ফলে এসব শেয়ার নিয়ে বিপাকে পড়ে যান সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তাই এ ক্ষেত্রে বিএসইসির আরও সচেতন হওয়া উচিত।
অন্যদিকে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান বলেন, ইস্যু ম্যানেজাররা তাদের কাক্সিক্ষত কোম্পানির কাগজপত্র নিয়ে আমাদের কাছে আসেন। আমরা কমপ্লায়েন্স দেখি, কাগজপত্র দেখি। এরপর সব ঠিক থাকলেই কেবল প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদন মেলে। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি কোন খাতের, এটা বিবেচনায় নেওয়া হয় না।
শেয়ারবার্তা / আনিস