এখনো পুঁজিবাজারের বাইরে থাকা ২৬টি বীমা কোম্পানিকে তাদের ইকুইটির ২০ শতাংশ অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের পাশাপাশি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে তালিকাভুক্তির জন্য উদ্যোগ নিতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে (আইডিআরএ) অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গতকাল আইডিআরএ চেয়ারম্যানের কাছে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার মূলত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী-নির্ভর। এখানে ৮০ শতাংশই ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পরিবর্তে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আধিপত্য বেশি থাকবে এটিই প্রত্যাশিত। বীমা কোম্পানিগুলো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হিসেবে ভূমিকা রাখার মাধ্যমে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য ২৬টি বীমা কোম্পানিকে ছাড় দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, ৩০ কোটি টাকার কম পরিশোধিত মূলধনের ২৬টি বীমা কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের ইকুইটির ২০ শতাংশ অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার শর্তে ছাড় প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে কোম্পানিগুলো ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে তালিকাভুক্তি ও ইকুইটির ২০ শতাংশ অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ কোনোটিই এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন করেনি। এ অবস্থায় এসব বীমা কোম্পানিকে তালিকাভুক্তি ও ইকুইটির ২০ শতাংশ অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে আইডিআরএকে অনুরোধ করা হয়েছে।
২৬টি বীমা কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য ছাড় দিয়ে ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল বিএসইসি। এ প্রজ্ঞাপন অনুসারে বীমা কোম্পানিগুলো ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতির আইপিওর মাধ্যমে ন্যূনতম ১৫ কোটি টাকার তহবিল উত্তোলন করতে পারবে। এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোকে তাদের ইকুইটির ন্যূনতম ২০ শতাংশ অর্থ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করতে হবে।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে তারল্য সরবরাহ বাড়ানোর জন্য এরই মধ্যে বীমা কোম্পানিগুলোকে যে ছাড় প্রদান করা হয়েছে সেটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে আইডিআরএকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এক্ষেত্রে বীমা কোম্পানিগুলোকে আইপিওতে আসার আগে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে, যা বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়াতে অবদান রাখবে। পাশাপাশি কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হলে পুঁজিবাজারে শেয়ারের সরবরাহও বাড়বে। দেশে বর্তমানে ৮১টি বীমা কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫টি জীবন বীমা ও ৪৬টি সাধারণ বীমা কোম্পানি। বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা কোম্পানির সংখ্যা ৫৩টি। পুঁজিবাজারের বাইরে রয়েছে ২৮টি বীমা কোম্পানি। এর মধ্যে জীবন বীমা করপোরেশন ও সাধারণ বীমা করপোরেশন রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি। এ দুটি কোম্পানির তালিকাভুক্তির জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় ও সরকারের উদ্যোগের প্রয়োজন হবে। এর বাইরে বেসরকারি খাতের ২৬টি বীমা কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য ছাড় দিয়েছে বিএসইসি। এ কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হলে দেশের বীমা খাতের সব কোম্পানিই পুঁজিবাজারে চলে আসবে।
গতকালের বাজার পরিস্থিতি: গতকাল সূচকের সামান্য উত্থানের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স এদিন ৭ পয়েন্ট বেড়েছে। পাশাপাশি এক্সচেঞ্জটিতে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক বাড়লেও দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। পুঁজিবাজার পরিস্থিতি নিয়ে আজ বিকালে বাজার-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করবে বিএসইসি। এতে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ), অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ডস (এএএমসিএমএফ), পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল (সিএমএসএফ), ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করবেন।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গতকাল ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় লেনদেন শুরু হয়। ২০ মিনিট পরে শেয়ার বিক্রির চাপে পয়েন্ট হারাতে থাকে সূচক। মাঝে বেশ কয়েকবার ওঠানামা করলেও দিনশেষে সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে পুঁজিবাজারে লেনদেন শেষ হয়েছে। গতকাল ৭ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৭৬৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে ডিএসইএক্স। আগের কার্যদিবসে যা ছিল ৬ হাজার ৭৫৮ পয়েন্টে। গতকাল সূচকের উত্থানে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, জিপিএইচ ইস্পাত, তিতাস গ্যাস, বিএসসিসিএল ও ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের।