চলতি অর্থবছরের ( ২০১৯-২০) প্রথম মাসেই হোঁচট খেয়েছে রফতানি আয়। এরপর থেকেই রফতানি আয়ে শনির দশা অব্যাহত আছে। এই অর্থবছরের পঞ্চম মাস নভেম্বরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রফতানি আয় কমেছে ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ। অর্জিক আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ কম।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের রফতানি আয় তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভয়শীল। বিশ্ব বাজারে পোশাকের চাহিদা কম। বছরের শুরু থেকেই অর্ডার কমছে। সঙ্গে পণ্যের মূল্যও কমেছে। এ ছাড়া অবকাঠমোগত সমস্যা, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন না করা, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহারসহ বিভিন্ন কারণে রফতানি বাণিজ্যে নিম্ন গতি রয়েছে। রফতানি বাণিজ্য বাড়াতে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে তালমিলিয়ে সরকারের সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। তা না হলে আগামীতে রফতানি আয় আরও কমে যাবে। পাশাপাশি একক পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে রফতানি পণ্য বহুমুখীকরণে জোর দিতে হবে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) সব ধরনের পণ্য রফতানিতে বৈদেশিক মুদ্রার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয় এক হাজার ৮০৫ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু এ সময়ে এ খাতে আয় হয়েছে এক হাজার ৫৭৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ কম। একই সঙ্গে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এ বছর রফতানি প্রবৃদ্ধি অর্জিতের হার ৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ কম।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, একক মাস হিসাবে চলতি বছরের নভেম্বরে রফতানি আয় হয় ৩০৫ কোটি ৫৮ লাখ ডলার, কিন্তু লক্ষ্য ছিল ৩৭২ কোটি ২০ লাখ ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় নভেম্বরে রফতানি আয় কমেছে ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ।
এ ছাড়া একক মাস হিসাবে প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে ১৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। গত বছরের নভেম্বরে রফতানি আয় হয়েছিল ৩৪২ কোটি ১৯ লাখ ডলার।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে মোট রফতানি আয়ে পোশাকের অবদান প্রায় ৮৩ শতাংশ। তবে হোমটেক্স, টেরিটাওয়েলসহ এ খাতের অন্যান্য রফতানির উপখাত হিসাব করলে তৈরি পোশাক খাতের অবদান ৮৫ শতাংশে দাঁড়াবে। তাই তৈরি পোশাকের রফতানি কমলে তার প্রভাব পড়ে পুরো রফতানি খাতে।
আলোচিত সময়ে তৈরি পোশাক খাতের রফতানি আয়ও কমেছে। অর্থবছরের নভেম্বর শেষে পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে এক হাজার ৩০৮ কোটি ৮৬ লাখ ৯০ হাজার ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ কম। এই সময়ে রফতানি প্রবৃদ্ধিও কমেছে ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
ইপিবির তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের বড় খাতগুলোতেও রফতানি আয় কমেছে। চলতি বছরের নভেম্বর শেষে কৃষিপণ্য রফতানিতে আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৬৯ শতাংশ কমে ৪৪ কোটি ৬৩ লাখ ডলার হয়েছে।
প্লাস্টিক পণ্য রফতানির প্রবৃদ্ধি বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ১৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ। পাঁচ মাসে এ খাতে আয় হয়েছে ৪ কোটি ৮৮ লাখ ডলার।
আলোচিত সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি আয় প্রবৃদ্ধি কমেছে; অর্জন হয়নি লক্ষ্যমাত্রাও। পাঁচ মাসে চামড়াজাত খাত থেকে রফতানি আয় এসেছে ৩৯ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ কম। প্রবৃদ্ধিও কমেছে ১০ দশমিক ০৩ শতাংশ।
একই সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি বেড়েছে। নভেম্বর শেষে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ৪০ কোটি ৪৭ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেশি। প্রবৃদ্ধিও গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে (২০১৮-১৯) পণ্য রফতানি করে ৪ হাজার ৫৩ কোটি ডলার আয় করে বাংলাদেশ। এবার এ আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেশি।
চলতি অর্থবছরে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৫৪ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে পণ্য খাতে রফতানির টার্গেট সাড়ে ৪৫ বিলিয়ন এবং সার্ভিস সেক্টরে সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরের রফতানি আয়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি।
শেয়ারবার্তা / হামিদ