দীর্ঘ অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য বাজারে বিনিয়োগে নারীরা আগ্রহ হারাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ব্যবসা বাণিজ্যসহ অন্যান্য খাতে যখন নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে ঠিক তখন পুঁজিবাজারে পিছিয়ে পড়ছে নারীরা। তবে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারলে বাজারে অন্যদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নারীর অংশগ্রহণও বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।
পুঁজিবাজার যখন চাঙ্গা ছিল তখন নারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে নারী বিনিয়োগকারীদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স হিসাব (বিও অ্যাকাউন্ট)। কিন্তু যখন বাজারে ধস হয়েছে, তখন অন্যান্য বিনিয়োগকারীর সঙ্গে নারীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
বাজার দীর্ঘমেয়াদে মন্দা থাকায় বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট দেখা দেয়। এতে নারীরাও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ থেকে পিছু হটে। বাজারে আশার আলো দেখতে না পেয়ে অনেকে তাদের বিও হিসাব বন্ধ করে দেয়। কমতে থাকে বিও হিসাব সংখ্যা।
সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) এর হালনাগদ তথ্যমতে, গতকাল পর্যন্ত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৬৪ হাজার ৯১৯টি। এর মধ্যে পুরুষ বিনিয়োগকারী ছিল ১৮ লাখ ৭৮ হাজার ৭৪৮টি এবং ৬ লাখ ৮৬ হাজার ১৭১টি নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ছিল। ২০১৮ সালের ৪ ডিসেম্বর বাজারে মোট বিও হিসাব ছিল ২৭ লাখ ৫৮ হাজার ১৯৬টি।
এর মধ্যে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ছিল ২০ লাখ ২১ হাজার ৩০৪টি এবং ৭ লাখ ৩৬ হাজার ৮৯২টি ছিল নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব। এর আগের বছর নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৭ লাখ ১৮ হাজার ৫৯৭টি। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে তা ছিল ৭ লাখ ৯০ হাজার ৬৭৫টি। ওই বছর জুনে ৮ লাখ ৬৫ হাজার ২৫০টি বিও হিসাব ছিল। সাড়ে তিন বছরের ব্যবধানে নারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা ১ লাখ ৭৯ হাজার কমেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১০ সালে ধসের পর থেকে পুঁজিবাজারে বেশ সংস্কার হয়েছে। কিন্তু এসব সংস্কার বাজার স্থিতিশীলতায় ভূমিকা রাখতে পারছে না। মাঝেমধ্যে বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও তা স্থায়ী রূপ নেয় না। এসব কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আস্থার সংকট তীব্র হওয়ার কারণে নারীদের একটি অংশ নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। তবে বিনিয়োগ সুরক্ষার পাশাপাশি বাজারে টেকসই স্থিতিশীলতা ফিরে আসলে অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে নারীরা সক্রিয় হবে বলে মনে করছেন তারা।
এ সম্পর্কে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি ব্রোকারেজ হাউজের শীর্ষ নারী কর্মকর্তা বলেন, ২০১০ সালের ধসের পরে একটি নতুন কমিশন হয়েছে। কমিশন অনেক আইনের সংস্কার করেছে। যদি বাজার স্থিতিশীলতায় না ফেরে তাহলে সবধরনের সংস্কারই বিফল। এছাড়া ধসের পূর্বে যেভাবে বিনিয়োগকারীদের শ্রোত দেখা গিয়েছিল তা আর এখন নেই। বাজার দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতাই পারে সবধরনের বিনিয়োগকারীদের আগ্রহী করে তুলতে।
তিনি আরও বলেন, নারীরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্রভাবে সঞ্চয় গড়ে তুলে। কিন্তু সেই সঞ্চয়ের অর্থ যদি বাজারে বিনিয়োগ করার পর ফেরত না পায় তাহলে কেন তারা পুঁজিবাজারে আসবে। তাই বিনিয়োগ সুরক্ষা সময়ের দাবি বলে মনে করছেন তিনি।
শেয়ারবার্তা/ সাইফুল ইসলাম