শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের আড়ালে আইপিও এবং রাইটের অনুমোদন পাওয়া কোম্পানিতে চাদাঁবাজি করেন বাংলাদেশ পুজিঁবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক। এছাড়া অসংখ্য কোম্পানির নামমাত্র শেয়ার কিনে এজিএম পার্টির সক্রিয় ভূমিকায় দায়িত্ব পালন করেন এই চাদাঁবাজ রাজ্জাক। যেখানে থেকে ব্যক্তি স্বার্থ হাতিয়ে নেন।
বিনিয়োগকারীদের জন্য রাজপথে আব্দুর রাজ্জাকের জোড়ালো কন্ঠস্বর শোনা গেলেও তার বিরুদ্ধে অনৈতিক লেনদেনের অভিযোগও কম না। তিনি কোম্পানিগুলোর এজিএম গিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধার করে থাকেন। এছাড়া আইপিও অনুমোদন পাওয়া কোম্পানিগুলোতে গিয়ে অর্থ আদায় এবং লটারিতে টাকা সংগ্রহ করে থাকেন। যেখানে তার সঙ্গে একজোট হয়ে সংগঠনটির সেলিম চৌধুরী, শামীম, মিজানসহ কিছু সদস্য এ অনৈতিক কর্মকান্ড করে থাকেন।
এক মার্চেন্ট ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, এইসব লোকদের জ্বালায় আমরা অতিষ্ঠ। আইপিও অনুমোদনের পরপরই এরা চাদাঁ দাবি করে বসে। না হলে আবার উকিল নোটিশ পাঠায়। এছাড়া বিএসইসিতে আইপিও বাতিল চেয়ে চিঠি দেয়। যদিও কমিশন তাদের চিঠির পেছনে চাদাঁবাজির উদ্দেশ্য জেনে গেছে, যে কারনে তাদেরকে এখন আর গুরুত্ব দেয় না। সম্প্রতি তারা আইপিও লটারিতে গিয়েও চাদাঁবাজির পায়তারা শুরু করেছে। তাদের এতো অন্যায়ের পরেও নামসহ মন্তব্য করতে সাহস পাচ্ছি না। ওরা কখন আবার ব্যক্তিগতভাবে আক্রমন করে বসে। তাই এইসব চাদাঁবাজাদের রুখতে কমিশনকে এগিয়ে আসার জন্য আহবান করছি।
কাজী আব্দুর রাজ্জাকের বর্তমানে ৩টি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব রয়েছে। এগুলো ইবিএল সিকিউরিটিজ, হাবিবুর সিকিউরিটিজ ও বানকো সিকিউরিটিজে খোলা হয়েছে। সবগুলোতেই তার শেয়ার রয়েছে। তবে মূলত তিনি ইবিএল সিকিউরিটিজের বিও হিসাবে সব শেয়ার কিনেছেন।
আব্দুর রাজ্জাক শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩১৯টি কোম্পানির মধ্যে ১৫৮টি বা ৫০ শতাংশ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন। তিনি ওইসব কোম্পানির ১ হাজার ৭০৫টি শেয়ার কিনেছেন। গড়ে প্রত্যেকটি কোম্পানির ১১টি শেয়ার কিনেছেন। গত ৩১ আগষ্টে শেয়ারবাজারের প্রতিটি শেয়ারের গড় দর ছিল ৪৮ টাকা। এ বিবেচনায় রাজ্জাকের ১ হাজার ৭০৫টি শেয়ারের দর হয় ৮১ হাজার ৮৪০ টাকা। যেখানে বর্তমানে শেয়ারবাজারে ২৬ লাখের প্রতিটি বিও হিসাবে গড়ে ১৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। তারপরেও আব্দুর রাজ্জাক এই নামমাত্র বিনিয়োগ নিয়ে সভাপতি মিজানুর রশীদ চৌধুরীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানববন্ধনে সক্রিয় ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন।
ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক ১৫৮ কোম্পানির শেয়ার কিনলেও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের কোন ইউনিট কিনেন নাই। অনেক ফান্ডের ইউনিট দর তলানিতে থাকলেও তা আকৃষ্ট করতে পারেনি তাকে। যদিও ফান্ডের এজিএম অনুষ্ঠিত হয় না। যাতে ওখানে গিয়ে স্বার্থ হাসিলের সুযোগ থাকে না।
ঐক্য পরিষদের অনেকে এজিএম পার্টি হিসাবে অংশগ্রহণ করে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হ্যা সংগঠনের অনেকেই যায়। অনেক বিনিয়োগকারী নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ, তাই ওখানে যায়। আগে গেলে গিফট পেত, এখন যাতায়াতবাবদ কিছু টাকা পায়। গিফটের আশায় শেয়ারহোল্ডারসহ আমাদের কিছু সদস্য নিয়মিত এজিএমে যায়। এটা অবাস্তব বা অসত্য না। তবে ভবিষ্যতে এজিএম পার্টির দৌরাত্মরোধে কাজ করবেন বলে জানান তিনি।
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিকসের ডিন ড. মোহাম্মদ মুসা বলেন, এজিএমে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য নামমাত্র শেয়ার কিনে থাকে এজিএম পার্টির সদস্যরা। যারা নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থে শেয়ারবাজারের বৃহৎ স্বার্থকে জলাঞ্জলি দেয়। তাই শেয়ারবাজারের উন্নয়নে এ জাতীয় বিনিয়োগকারীদেরকে আইনের আওতায় আনা উচিত। একইসঙ্গে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সক্রিয় ভূমিকা রাখা দরকার।
শেয়ারবাজারের জন্য করনীয় নিয়ে সরকারকে উপদেশ দেওয়া আব্দুর রাজ্জাক নিজের ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করেন না। অন্যদের তিনি মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করার জন্য পরামর্শ দিলেও নিজে দূর্বল, লোকসানি এবং বন্ধ কোম্পানির মতো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কিনেন। তার এ তালিকায় বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), ফারইস্ট ফাইন্যান্স, জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনস, আইসিবি ইসলামীক ব্যাংক, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, কেয়া কসমেটিকস, পদ্মা ইসলামী লাইফ, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স ও খান ব্রাদার্সের মতো কোম্পানি রয়েছে।
বিনিয়োগকারীদেরকে ভালো কোম্পানির শেয়ার কেনার পরামর্শ দিয়ে নিজে দুর্বল কোম্পানির শেয়ার কেনার কারন কি? এমন প্রশ্নে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিআইএফসি অবসায়নের জন্য আবেদন করেছে। এজিএমে এর প্রতিবাদ জানানোর জন্য কোম্পানিটির শেয়ার কিনেছি। এজিএমে প্রতিবাদের মাধ্যমে মান্নান সাহেবের কাছ থেকে লুটপাটের অর্থ ফেরত আনতে ভূমিকা রাখব। একইভাবে বাকি দূর্বল কোম্পানির শেয়ার কেনার পেছনে উদ্দেশ্য আছে বলে জানান তিনি।
শেয়ারবার্তা/ সাইফুল ইসলাম