দেশে প্রায় ৬৩টি ব্যাংক ও ৪০টির মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকারীরা যদি অর্থ বিনিয়োগ করতে অনিশ্চয়তা বোধ করেন, তাহলে তারা অন্যত্র বিনিয়োগের চেষ্টা করবেন-আর এটাই স্বাভাবিক। বিনিয়োগের ভালো জায়গা হচ্ছে পুঁজিবাজার। কিন্তু সেখানেও তারা ভরসা পাচ্ছেন না। ফলে ব্যাংক, আর্থিক খাত ও পুঁজিবাজারে আস্থার অভাব রয়েই যাচ্ছে। এর যদি উন্নতি করা না যায় সেক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যাবে। মঙ্গলবার এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
খুজিস্তা নুর-ই-নাহারিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত ভিসি অধ্যাপক এম শাহজাহান মিনা এবং পুঁজিবাজার টেকনিক্যাল অ্যানালিস্টের ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ।
অধ্যাপক শাহজাহান মিনা বলেন, দিন দিন পুঁজিবাজারের সূচক ও ট্রেড ভলিউম কমে যাচ্ছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, বাজারে বিনিয়োগকারীর আস্থা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিনিয়োগকারীর আস্থা কোনো মতেই ফেরানো যাচ্ছে না। আসলে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বিএসইসি, ডিএসইসহ আরও যেসব নিয়ন্ত্রক সংস্থা রয়েছে, এদের মধ্যে সমন্বিত কোনো প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তারা মাঝে মধ্যে বাজারসংশ্লিষ্ট যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছে-তা সাময়িকভাবে নেওয়া হয়েছে। এখন বাজারে তারল্য সংকট চলছে। এ তারল্য সংকটের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে-ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ ঋণখেলাপি রয়েছে, তা আদায় করতে পারছে না। এ অর্থ আদায়ের চেষ্টা না করে বরং তাদের আরও সময় দেওয়া হচ্ছে। ফলে ওই অর্থ তাদের কাছে রয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, আর্থিক খাতের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান ভালো পারফরম্যান্স করতে পারছে না। এদের মধ্যে যথেষ্ট অর্থের ঘাটতি রয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার অভাব সৃষ্টি হয়েছে। আবার কয়েক মাস আগে আর্থিক খাতের একটি কোম্পানির অবসায়ন করা হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানে অনেক বিনিয়োগকারীর অর্থ রয়েছে। সেটা পাওয়াতেও অনিশ্চয়তা রয়েছে। আসলে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে এ সমস্যার মূল কারণ সুশাসনের অভাব। আজ যদি সুশাসন নিশ্চিত করা যেত তাহলে এ সমস্যায় পড়তে হতো না। প্রায় ৬৩টি ব্যাংক ও ৪০টির মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকারীরা যদি অর্থ বিনিয়োগ করতে অনিশ্চয়তা বোধ করেন, তাহলে কী অবস্থা দাঁড়াবে। সেক্ষেত্রে এ অর্থ তারা অন্যত্র বিনিয়োগের চেষ্টা করবেন-আর এটা হওয়াই স্বাভাবিক। বিনিয়োগের ভালো জায়গা হচ্ছে পুঁজিবাজার কিন্তু সেখানেও তারা ভরসা পাচ্ছেন না। ফলে ব্যাংক, আর্থিক খাত ও পুঁজিবাজারে আস্থার অভাব রয়েই যাচ্ছে। এর যদি উন্নতি করা না যায় সেক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যাবে। এমনিতেই অর্থ পাচার হচ্ছে আবার যদি বিনিয়োগের নিশ্চিয়তা না পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে আরও অর্থ পাচার হয়ে যাবে।
মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, বাজার কমা মানেই কারসাজি হচ্ছে এটা বলা যাবে না। কারণ বাজারে ওঠা-নামা থাকবেই। যদি বাজারে শেয়ারদর ওঠা-নামা না থাকে সেটাকে বাজার বলা যায় না। গত দুবছর ধরে বাজার নিম্নগতির দিকে রয়েছে, এটা অস্বাকীর করার কোনো কারণ নেই। তবে এর মধ্যে সূচক পাঁচ হাজারের ওপরে ছিল। এখন সেখান থেকে অনেকটা নিচে রয়েছে। তবে আশা করা যাচ্ছে নতুন বছরে বাজার ভালোর দিকে যাবে।
শেয়ারবার্তা , ৪ ডিসেম্বর ২০১৯