বছরের শেষ সপ্তাহে ইতিবাচক ধারায় লেনদেন শেষ হয়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) আগের দুই সপ্তাহে নেতিবাচক ছিল। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার সমাপ্ত সপ্তাহের লেনদেনে ডিএসইর প্রধান সূচক বেড়েছে ৫৪ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৮১ শতাংশ। আগের সপ্তাহের তুলনায় বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বেশি হওয়ায় লেনদেন বেড়েছে ৯ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ। আর বাজার মূলধন বেড়েছে শূন্য দশমিক ৫৪ শতাংশ।
পুঁজিবাজারের এই ইতিবাচক সপ্তাহের পেছনে বছর শেষের কয়েকটি ইস্যুকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা জানিয়েছেন, বছরের শেষ দিকে মার্জিন ঋণের প্রয়োজন শিথিলতা, বিএসইসি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যকার মতানৈক্য নিষ্পত্তির সম্ভাবনা এবং বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিও রি-ব্যালেন্সিং পুঁজিবাজারকে ঊর্ধ্বমুখী করেছে।
লেনদেনের চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিদায়ী সপ্তাহে মোট ৩৮৩টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট হাতবদল হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৬৫টির, কমেছে ১৮৫টির ও অপরিবর্তিত ছিল ৩৩টির। শেয়ারদর বেড়েছে এমন কোম্পানির চেয়ে দর হ্রাস পাওয়া কোম্পানির সংখ্যা কিছুট বেশি হলেও সপ্তাহ শেষে সূচক বাড়তে দেখা গেছে। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৫৪ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৮১ শতাংশ। এছাড়াও অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস সাত পয়েন্ট ও ডিএস৩০ ২০ পয়েন্ট বেড়েছে।
সূচককে টেনে তোলার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অবদান ছিল চার কোম্পানির। এগুলো হলোÑব্র্যাক ব্যাংক, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, বীকন ফার্মা এবং ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড। সূচক বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ছয় দশমিক ৮০ পয়েন্ট অবদান রেখেছে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড। একই সমান অবদান রেখেছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন লিমিটেড। বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের কারণে ছয় দশমিক তিন পয়েন্ট এবং ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড সূচক বাড়িয়েছে পাঁচ দশমিক ৫০ পয়েন্ট। এই চার কোম্পানির অবদানে ডিএসইর সূচকের উত্থান হয়েছে ২৫ পয়েন্ট বা মোট উত্থানের ৪৭ শতাংশ। আর সূচক পতনের ক্ষেত্রে বেশি ভূমিকা রেখেছে বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মা এবং রবি আজিয়াটা লিমিটেড
সপ্তাহজুড়ে লেনদেন বেড়েছে ৯ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ। আগের সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল তিন হাজার ৮১৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। বিদায়ী সপ্তাহে এটি দাঁড়ায় চার হাজার ১৬০ কোটি ৫০ লাখ টাকায়। আর লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে বিমা খাত। সপ্তাহজুড়ে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের তালিকায় থেকে এ খাতটির অবদান ছিল ১৭ দশমিক চার শতাংশ। এছাড়াও বিবিধ ও ব্যাংক খাতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ লক্ষ করা গেছে। ফলে সপ্তাহ শেষে লেনদেনে বিবিধ খাত ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ এবং ব্যাংক খাত ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ অবদান রাখে। এছাড়াও কাগজ ও মুদ্রণ এবং ওষুধ ও রসায়ন খাতেও ভালো লেনদেন হয়েছে। এই দুই খাতের লেনদেন ৯ শতাংশের বেশি ছিল।
লেনদেনের প্রভাবে বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে শূন্য দশমিক ৫৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন ছিল পাঁচ লাখ ৩৯ হাজার ২৫৮ কোটি। বিদায়ী সপ্তাহে সেটি বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ লাখ ৪২ হাজার ১৯৬ কোটি। খাত হিসেবে ব্যাংক খাতে ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ, ওষুধ ও রসায়ন খাতে ১৪ দশমিক ৯০ শতাংশ, টেলিযোগাযোগ খাতে ১৪ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং প্রকৌশল খাতে ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ বাজার মূলধন বেড়েছে।
এদিকে একক কোম্পানি হিসেবে সারা বছরে লেনদেনে বেক্সিমকোর দাপট থাকলেও বছরের শেষ সপ্তাহে এই স্থান দখল করেছে সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেড। কোম্পানিটির ৩৪০ কোটি ৪৫ লাখ ৬৬ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেড। কোম্পানিটির ২৭৭ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এছাড়াও লেনদেনের শীর্ষে থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হলোÑবাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন লিমিটেড, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, ওয়ান ব্যাংক, ফরচুন শুজ, জেনেক্স ইনফোসিস, বীকন ফার্মা, বেক্সিমকো ফার্মা ও ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।