শরিয়াভিত্তিক ইসলামি ‘সুকুক বন্ড’ ছেড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা তুলেছে সরকার। সরকারের পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক আজ বুধবার নিলামে বন্ড বিক্রি করে এই টাকা তুলেছে। যে প্রকল্পের জন্য টাকা তোলা হয়েছে, তার নাম ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাহিদামাফিক উন্নয়ন প্রকল্প’। আর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, পাঁচ হাজার কোটি টাকার এ সুকুক বন্ড কিনতে বিভিন্ন ব্যাংক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা মিলে ২৩ হাজার কোটি টাকার আবেদন জমা দেয়। তবে দিন শেষে ৫ হাজার কোটি টাকা তোলা হয়। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ বিনিয়োগ করে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো, ১০ শতাংশ বিনিয়োগ করেছে প্রচলিত ব্যাংকের ইসলামি শাখা, ১৫ শতাংশ বিনিয়োগ করে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলো। আর বাকি ৫ শতাংশ বিনিয়োগের কোটা ছিল সাধারণ বিনিয়োগকারীর জন্য, যা প্রায় আড়াই শ কোটি টাকা। তবে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে এত টাকার আবেদন জমা না পড়ায় বাকি অংশ ব্যাংকগুলোর মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, এই সুকুকের বিপরীতে বিনিয়োগকারীদের বার্ষিক ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ হারে অর্থ পরিশোধ করা হবে। এই বন্ডের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর। এটি হবে ইজারা সুকুক, অর্থাৎ বিনিয়োগের বিপরীতে ভাড়া হিসেবে বিনিয়োগকারীদের অর্থ পরিশোধ করবে সরকার, যা দেওয়া হবে ছয় মাস পরপর।
সুকুকের বিবরণীতে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাহিদামাফিক উন্নয়ন প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এ প্রকল্পের ব্যয় ৯ হাজার ১২৩ কোটি টাকা। গত নভেম্বর পর্যন্ত এই প্রকল্পে ৪ হাজার ৫১০ কোটি টাকা খরচ করেছে সরকার। আগামী এক বছরে আরও ৫০০ কোটি টাকা খরচ হবে। সরকারের খরচ করা এই অর্থই এখন সুকুকে রূপান্তর করে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হবে।
এ প্রকল্পের অধীনে দেশে ৪০ হাজার অতিরিক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ, ৮ হাজার প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা প্রদান, ৩৬ হাজার ৫০০ শ্রেণিকক্ষে বেঞ্চ ও শিক্ষকদের ৩ হাজার ৫০০ শ্রেণিকক্ষে চেয়ার, টেবিল, আলমারি ও দেয়াল ক্যাবিনেট সরবরাহ করা হবে।
এর আগে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে গণস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন একটি প্রকল্পের জন্য সুকুকের মাধ্যমে প্রথম দফায় ৪ হাজার কোটি টাকা তুলেছিল সরকার। ওই প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৮ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা। দ্বিতীয় দফার নিলামে ওই প্রকল্পের জন্য চলতি বছরের ২৮ জুন আরও ৪ হাজার কোটি টাকা তোলে সরকার।
এদিকে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতও সুকুক ছেড়ে অর্থ সংগ্রহ করতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে পুঁজিবাজারে সুকুক বন্ড ছেড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে বেক্সিমকো লিমিটেড।