বছরজুড়ে পুঁজিবাজারে সূচক নিয়ে ছিল বেশ আলোচনা। বছরের মাঝামাঝি সময়ে পুঁজিবাজারে সূচক বেড়ে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। একই সঙ্গে বাজার মূলধন এবং লেনদেন বেড়েও নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। আগামীতে নতুন রেকর্ড গড়ার পূর্ব পর্যন্ত ২০২১ সাল পুঁজিবাজারে ইতিহাস হয়ে থাকবে। তবে সম্ভাবনাময় এ খাতে ভবিষ্যতে আরও নতুন রেকর্ড গড়বে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারির সময় ২০২০ সালে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। নতুন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বাজারের জন্য ইতিবাচক নানা পদক্ষেপ নিয়ে তা বাস্তবায়নে জোড় দিয়েছিল। যার ফলে অতীতে যেসব বিনিয়োগকারী বাজারের প্রতি আস্থা হারিয়েছিল তারা ফিরে এসেছে। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে বাজারে বিনিয়োগ বাড়তে শুরু করে। যা এক বছর পর ২০২১ সালে লেনদেনে, সূচক, বাজার মূলধনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাতে সব কিছুতে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়। যদিও সেটা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। তবে গত এক বছরে বাজারে সূচক বেড়েছে সাড়ে ১২০০ পয়েন্ট এবং বাজার মূলধন বেড়েছে প্রায় ৮৭ হাজার কোটি টাকা। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে বাজার আরও নতুন ইতিহাস গড়বে।
তারা আরও জানান, বর্তমান কমিশন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার তথা অর্থনীতি নিয়ে রোড শো করে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। যদি এসব প্রচারণা ইতিবাচক হয়ে থাকে তাহলে বাজারে নতুন বিনিয়োগকারীদের আগমন ঘটবে। তাতে বাজার আবারও নতুন রেকর্ড গড়তে পারবে। তবে প্রত্যেক বিনিয়োগকারীদেরই সচেতনতার সঙ্গে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, বর্তমান কমিশন যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে তা ধারাবাহিক চলতে থাকলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে কমিশনের মনিটরিং আরও জোরদার করতে হবে। যাতে কেউ বাজারের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে বিএসইসি’র।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০২১ সালে ডিএসইএক্স অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন ইতিহাস গড়েছে। একই চিত্র ছিল বাজার মূলধন এবং লেনদেনেও। ডিএসইএক্স গত ১০ অক্টোবর বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৭ হাজার ৩৬৭ পয়েন্টে। যা ৮ হাজার পয়েন্টকে ছোঁয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে নানা কারণে সূচকের উত্থান ধারা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া গত ৯ সেপ্টেম্বর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছিল ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩১৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। অতীতে কোনো সময় বাজার মূলধন এই পরিমাণ বাড়েনি। সেই সঙ্গে লেনদেনে রেকর্ড গড়ে পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৩ হাজার ২৪৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২১ সালের শুরুতে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ৬১৮ পয়েন্ট। ওই সময় বাজার মূলধন ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৬৩৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা। গত ১৫ ডিসেম্বর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৮৬৮ পয়েন্ট এবং বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৫১ হাজার ৫৯০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে সূচক বেড়েছে ১২৪৯ পয়েন্ট এবং বাজার মূলধন বেড়েছে ৮৬ হাজার ৯৫৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
এদিকে, বছরের শুরুতে লেনদেন ১ হাজার ৯২৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা থাকলেও বর্তমানে তা হাজার কোটি টাকার নিচে নেমে গেছে।
পুঁজিবাজারের শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউজ রয়েল ক্যাপিটাল। প্রতিষ্ঠানটির রিসার্স বিভাগের প্রধান আকরামুল আলম রাইজিংবিডিকে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে দেশের পুঁজিবাজার আন্ডার ভ্যালুট রয়েছে। এই বাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে ভালো রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ২০২১ সালে বাজারে লেনদেন, সূচকে যে গতি ফিরে পেয়েছিল তা ভবিষ্যতেও ধরে রাখাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে বাজারে স্বাভাবিক গতি বিদ্যমান থাকবে। এতে সব ধরনের বিনিয়োগকারীদের জন্য সুফল বয়ে আনবে বলে মনে করেন তিনি।