প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) অর্থ দিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার অভিযোগ উঠেছে পুঁজিবাজারে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেনের বিরুদ্ধে।
চলতি বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত কোম্পানিটির উত্তোলিত আইপিও’র অর্থ থেকে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ বাবদ ৭৮ শতাংশ টাকা অব্যবহৃত রয়েছে। তাই কোম্পানিটিকে শেষবারের মতো ব্যাংক ঋণ পরিশোধের বিষয়ে সতর্ক করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
গত ১৫ নভেম্বর অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন আইপিও’র অর্থ ব্যবহার করে ব্যাংক ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানোর জন্য বিএসইসি’র কাছে আবেদন জানায়। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি কোম্পানিটির ব্যবস্থপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে সতর্কবার্তা দিয়েছে বিএসইসি। একইসঙ্গে বিষয়টি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই-সিএসই) প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তাকে (সিআরও) বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে।
বিএসইসি’র পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত ১৫ ডিসেম্বর আইপিও’র অর্থ ব্যবহার করে ব্যাংক ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানোর বিষয়ে চিঠি দিয়েছে অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন। এ পরিস্থিতিতে কমিশন আইপিও অর্থ ব্যবহার করে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ জন্য সময় বাড়ায়নি। এছাড়া, এই ধরনের আইন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে এই চিঠিটিকে শেষ সতর্কতা হিসাবে বিবেচনা করতে বলেছে কমিশন।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন ১ কোটি ৫০ লাখ শেয়ার ইস্যু করে পুঁজিবাজার থেকে ১৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। কোম্পানিটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাস, মেডিক্যাল গ্যাস, ওয়েল্ডিং গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ করে থাকে। আইপিও’র মাধ্যমে কোম্পানিটি ১৫ কোটি টাকা তুলে নতুন মজুদ ছাউনি ও নতুন প্ল্যান্ট শেড তৈরি করে ব্যবসা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি আইপিওর টাকা থেকে নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করে। ১৯৯০ সালে নিবন্ধন পাওয়ার পর ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর থেকে ব্যবসা শুরু করে অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন।
অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেনের আইপিওর অর্থ ব্যবহারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আইপিওর ১৫ কোটি টাকার মধ্যে চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ কোটি ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৯১৮ টাকা ব্যবহার করেছে। এর মধ্যে কনস্ট্রাশন অব নিউ প্ল্যান্ট সেড অ্যান্ড স্টোর সেড বাবদ ৬ কোটি ৩০ লাখ ৮৮ হাজার ৪২৭ টাকা, নিউ প্ল্যান্ট অ্যান্ড মেশিনারি বাবদ ৮১ লাখ ৩৩ হাজার ১৩৮ টাকা, ব্যাংক লোন রিপেমেন্ট বাবদ ৪৪ লাখ টাকা এবং আইপিও রিলেটেড এক্সপেন্স বাবদ ১ কোটি ৫৫ লাখ ৪৩ হাজার ৩৫৩ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। আর ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত আইপিওর অর্থ ব্যবহার হয়েছে ৯ কোটি ১৪ লাখ ৫২ হাজার ৯১৮ টাকা। এর মধ্যে অক্টোবর মাসে শুধু কনস্ট্রাশন অব নিউ প্লন্ট সেড অ্যান্ড স্টোর সেড বাবদ ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। ওই মাসে নিউ প্ল্যান্ট অ্যান্ড মেশিনারি, ব্যাংক লোন রিপেমেন্ট ও আইপিও রিলেটেড এক্সপেন্স বাবদ কোনো টাকা ব্যয় করা হয়নি। ফলে অক্টোবর মাস পর্যন্ত আইপিওর ১৫ কোটির মধ্যে অব্যবহৃত রয়েছে ৫ কোটি ৮৫ লাখ ৪৭ হাজার ৮২ টাকা। ওই টাকার মধ্যে ব্যাংক লোন রিপেমেন্ট বাবদ অব্যবহৃত রয়েছে ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বা ৭৮ শতাংশ। এ পরিস্থিতিতে গত ১৫ ডিসেম্বর আইপিও’র অর্থ ব্যবহার করে ব্যাংক ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানোর বিষয়ে চিঠি দিয়েছে অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর পুঁজিবাজার তালিকাভুক্ত হয় অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন। এর আগে গত ১৬ জুলাই বিএসইসি কোম্পানিটির আইপিও অনুমোদন দেয়। কোম্পানিটির শেয়ারের অভিহিত মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১০ টাকা। কোম্পানিটির ইস্যু ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছে বিডি ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল হোল্ডিংস। ‘এ’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ১০২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সেহিসেবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১০ কোটি ২৬ লাখ। এর মধ্যে উদ্যোক্তা বা পরিচালকদের হাতে ৩০.৬৫ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৪.০৮ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ০.০৬ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪৫.২১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।