পুঁজিবাজার নিয়ে অনেকেরই ভাবনা টাকা বিনিয়োগ করলেই কয়েকগুণ হয়ে যায়। কিন্তু পুঁজিবাজার কোন জাদুর বাক্স না, যেখানে আমরা টাকা দিব এবং টাকা দুইগুণ, তিনগুন হয়ে বের হয়ে আসবে। পুঁজিবাজার বিনিয়োগ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং এই ঝুঁকি ম্যানেজ করতে পারলেই সফলতা আসবে। সুতরাং এখানে বিনিয়োগ করলে যেমন লাভের আশা বেশি, ঠিক তেমনই ক্ষতির সম্ভাবনাও বেশি।
এই বাজার এমন একটি প্লাটফর্ম যেখানে বিভিন্ন পেশার ও চিন্তার মানুষ ভিন্ন ভিন্ন বিনিয়োগ নীতি নিয়ে আসেন। যাদের কোন ধরনের বিনিয়োগ নীতি থাকে না তারা বাজার থেকে লাভও করতে পারেন না। ভুলক্রমে লাভ হলেও পরে অনেক বেশি ক্ষতির মূখে পড়ে যান।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ নীতি তৈরি করা খুবই জরুরী। অনেকে বলেন, বিনিয়োগ নীতি না থাকলেও পুঁজিবাজার থেকে লাভ করা যায়। সেটা হতে পারে। আপনি একবার, দুই বার লাভ করতে পারেন। তবে সেই লাভ কখনোই দীর্ঘ মেয়াদী হতে পারে না। আপনি দশ হাজার টাকা বিনিয়োগ করবেন বা দশ লাখ টাকা বিনিয়োগ করবেন, যাই করেন না কেন একটা বিনিয়োগ নীতি আপনাকে সফল হতে সাহায্য করবে।
বিনিয়োগ নীতি : পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য যেসকল বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ তার মধ্যে অন্যতম বিনিয়োগকারীর বয়স, বিনিয়োগের উদ্দেশ্য, সম্ভাব্য লাভের হার, সঞ্চয়ের পরিমাণ, আয়ের উৎস, পেশা, মোট সঞ্চয়ের কত ভাগ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হবে ইত্যাদি নানা বিষয়।
বিনিয়োগের জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আদর্শ পরিকল্পনা করে বিনিয়োগে আসা উচিৎ। পুঁজিবাজারে মূল উপাদান টাকা বিনিয়োগ করা, তবে টাকা থাকলেই এই বাজারে বিনিয়োগ করে আপনি লাভ করতে পারবেন না। বিষয়টা মোটেই সহজ নয়। টাকার সাথে বিনিয়োগকারীর সময়, ধৈর্য এবং মেধার মিশ্রন ঘটাতে পারলে সফলতা আসতে পারে।
ধরুন দশ লাখ টাকা নিয়ে কোন বিনিয়োগকারী বাজারে আসল, কোন পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়া, আরেক জন বিনিয়োগকারী দুই লাখ টাকা নিয়ে আসলো। একটি সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে, তাহলে এখানে ঐ ১০ লাখ টাকার চেয়ে দুই লাখ টাকার বিনিয়োগকারীর মূল্য বেশি থাকবে। কারণ পরিকল্পনার অভাবে দশ লাখ টাকা বিনিয়োগ থাকা সত্ত্বেও ভালো ফলাফল আসতে নাও পারে। অন্যদিকে, স্বল্প বিনিয়োগ নিয়ে এসে ভালো পরিকল্পনা দিয়ে দুই লাখ টাকার বিনিয়োগকারী লাভবান হয়ে যাবে। সে জন্য পরিকল্পনার মধ্যে যেসব বিষয় রাখতে হবে, তারমধ্যে রয়েছে বিনিয়োগের সময়, সম্ভাব্য লাভের হার এবং রিস্ক ম্যানেজমেন্ট।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, সকল বিনিয়োগকারীর জন্য রিস্ক সমান না। ধরা যাক, যার ঘরে বাবা, মা, বউ বাচ্চা আছে তিনি যতটুকু ঝুঁকি নিতে পারবেন তার থেকে একজন ব্যাচেলার ব্যক্তি বেশি রিস্ক নিতে পারবেন। পুঁজিবাজারে বেশি ঝুঁকি বেশি লাভ একই সাথে বেশি ক্ষতির কারণ হতে পারে।
তবে কোন বিনিয়োগকারীর যদি একটা ব্যাক্তিগত বিনিয়োগ নীতি থাকে, তাহলে তিনি ঝুঁকি কমাতে পারবেন। একে পুঁজিবাজারের পরিভাষায় সিস্টেমেটিক রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বলা হয়। এই ঝুঁকি মূলত ক্ষতির সম্ভাবনা সীমাবদ্ধ করে, একই সাথে সক্রিয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। আমরা অনেকে হয়ত একটা সম্ভাবনাময় কোম্পানিকে বিনিয়োগের জন্য নির্বাচন করতে পারি।
তবে কোন প্রাইজে সেই কোম্পানির শেয়ার কিনব এবং কোন প্রাইজে সেল দিব এর পরিকল্পনা না থাকলে আমরা Opportunity Loss এবং একই সাথে Capital Loss ও করতে পারি।
শেষ কথা, পুঁজিবাজারে সফলতার জন্য যতখানি একটা ভালো কোম্পানির নির্বাচন করা জরুরী, ঠিক তেমনি সেই কোম্পানিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে লাভ করতে চাইলে একটা বিনিয়োগ নীতিও জরুরী।