1. [email protected] : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক
  2. [email protected] : শেয়ারবার্তা : nayan শেয়ারবার্তা
  3. [email protected] : news uploder : news uploder
যে কারনে ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজার
রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:২২ এএম

যে কারনে ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজার

  • আপডেট সময় : শুক্রবার, ২৮ মে, ২০২১
share

পুঁজিবাজারে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় ধস হয় ২০১০ সালে। ১১ বছর আগে ঘটে যাওয়া এই ধসের পর প্রকৃতপক্ষে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি পুঁজিবাজার। এর মধ্যে কয়েকবার বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও তা সফল হয়নি। তবে গত এক বছরে বদলে গেছে পুঁজিবাজার চিত্র। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নতুন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করে বাজারচিত্র, বর্তমানে যে পরিস্থিতি অব্যাহত রয়েছে।

করোনাভাইরাসের ছোবলে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের পুঁজিবাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে সেটা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে রোগী শনাক্ত হওয়ার পর। তখন দেশের সব খাতের পাশাপাশি নেতিবাচক অবস্থায় চলে যায় পুঁজিবাজার। মূলত বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার আগেই আতঙ্ক তৈরি হয়।

গত বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচকটি চার হাজার ৭৬৮ পয়েন্টে ছিল, যেটা করোনা আতঙ্কে তা ৮ মার্চ এসে দাঁড়ায় চার হাজার ২৮৭ পয়েন্টে। আর ওইদিন দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পরে ৯ মার্চ এক দিনেই ২৭৯ পয়েন্ট কমে যায়, যা ১৮ মার্চ করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে প্রথম রোগী মারা যাওয়ার দিন নেমে যায় তিন হাজার ৬০৪ পয়েন্টে। আতঙ্কিত পুঁজিবাজারের এমন পতন ঠেকাতে ১৯ মার্চ চালু করা হয় ফ্লোর প্রাইস।

এরপর কভিড মহামারির কারণে পুঁজিবাজার টানা ৬৬ দিন বন্ধ থাকে। এর মধ্যে ১৭ মে কমিশনে চেয়ারম্যান হিসেবে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের যোগদান করেন। পরে যোগদান করেন কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, ড. মো. মিজানুর রহমান ও মো. আব্দুল হালিম। করোনা আতঙ্কের মধ্যেই ৩১ মে পুঁজিবাজারে আবারও লেনদেন চালু হয়। এর কিছুদিন পরেই ধীরে ধীরে বাজারের গতি ফিরতে শুরু করে।

কমিশনের এই পরিবর্তনের পরেও করোনাভাইরাস আতঙ্কে শেয়ারবাজার গত বছরের ২৩ জুলাই পর্যন্ত অনেকটা একই বৃত্তে ঘোরাফেরা করে। এরপর ২৯ জুলাই পর্যন্ত ধীরগতিতে এগোয়। তবে ওইদিন মুদ্রানীতি ঘোষণার পরে ৩০ জুলাই থেকে বাজারে বড় গতি আসে। এরপর গত এক বছরের ব্যবধানে লেনদেন, মূল্যসূচক ও বাজার মূলধনে অনেক উন্নতি হয়েছে।

এই সময়ের (২৫ মে পর্যন্ত) ব্যবধানে ডিএসইএক্স বা প্রধান সূচক চার হাজার ৬০ পয়েন্ট থেকে বেড়ে পাঁচ হাজার ৮৮৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ এ সময়ে সূচক বেড়েছে ৮২৪ পয়েন্ট। একই সময়ের ব্যবধানে লেনদেন চলে এসেছে ১৪৩ কোটি টাকা থেকে দুই হাজার আট কোটি টাকায়। অন্যদিকে একই সময়ে বাজার মূলধন তিন লাখ ১৬ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা থেকে বেড়ে চার লাখ ৯৮ হাজার ৫৮০ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ এ সময়ে বাজার মূলধন বেড়েছে এক লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা।

গত এক বছরে বাজারের উন্নয়নের পেছনে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বর্তমান কমিশন। এই সময়ে তালিকাভুক্ত দুর্বল মৌল ভিত্তি কোম্পানির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত কোম্পানির অবস্থার উন্নতির পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিত করতে বর্তমান কমিশন নতুন করে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যা কোম্পানিগুলোকে ব্যবসায় উন্নতি করতে সহযোগিতা করবে। এর মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ধারণকৃত শেয়ার বিক্রি, হস্তান্তর ও বন্ধকি দেয়ার সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া পর্ষদ পুনর্গঠন, বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগ, পর্যবেক্ষক বসানো ও ৪৫ কর্মদিবসের মধ্যে বিদ্যমান বোর্ড পুনর্গঠন করতে ব্যর্থ হলে বর্তমান পরিচালক ও উদ্যোক্তাদের পুঁজিবাজারে কোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানি বা মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানে পরিচালক হিসেবে থাকার সুযোগ বন্ধ করেছে। কমিশনের এসব সিদ্ধান্ত ‘জেড’ ক্যাটেগরির সংস্কারে কার্যকর পদক্ষেপ বলে মনে করছেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া শিবলীর নেতৃত্বাধীন কমিশন তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের এককভাবে ন্যূনতম দুই শতাংশ এবং সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের কঠোরতা আরোপ করেছে। তাদের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষমাণ থাকা আইপিও আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তি এবং মানহীন ও দুর্বল কোম্পানির আইপিও আবেদন বাতিল। দুর্বল ভিত্তির ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত কোম্পানিগুলোর আর্থিক ও ব্যবসায়িক অবস্থা পর্যালোচনা করে কোম্পানিগুলোর অবস্থা উন্নয়নে পদক্ষেপ নেয়া। রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সক্ষমতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া। মার্জিণ ঋণ নিয়ে যেসব বিনিয়োগকারী বাজারে বিনিয়োগ করেছে, তাদের স্বার্থে শেয়ারবাজারের ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান স্টক ব্রোকার ও মার্চেন্ট ব্যাংক কর্তৃক প্রথমবারের মতো মার্জিন ঋণের বিপরীতে সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ সুদ নির্ধারণ করে দেয়া। যেসব কোম্পানির উদ্যোক্তারা লোকসান দেখিয়ে নিজেরা লাভবান হচ্ছেন এবং বিনিয়োগকারীদেরকে ঠকাচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করা।

একইভাবে সেকেন্ডারি বাজারে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং আইপিওতে অধিকতর অংশগ্রহণের জন্য সেকেন্ডারি বাজারে ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ বাধ্যতামূলক করে আইপিও লটারি পদ্ধতি তুলে দেয়া, ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে দেশের বাইরে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর ডিজিটাল বুথ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা, দেশে প্রথমবারের মতো বিদেশি কোম্পানিকে মিউচুয়াল ফান্ডের উদ্যোক্তা হিসেবে যুক্ত করার উদ্যোগসহ আর কিছু পদক্ষেপ।

জানতে চাইলে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসেন বলেন, বিএসইসির নতুন নেতৃত্ব গত এক বছরে ভালো কাজ করেছে। পুঁজিবাজারে যার প্রভাবও পড়েছে। কমিশন পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি অন্যায়কারীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনছেন, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সৃষ্টি করছে।

একই বিষয়ে জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, আমার জানা মতে কমিশন ভালো কাজ করছে। তাদের সময়ে কিছু ভালো কোম্পানি বাজারে এসেছে। এছাড়া তারা বাজার উন্নয়নের জন্য নানা সংস্কার করছেন। এটা ভালো দিক। বাজার বর্তমানে যে পরিস্থিতিতে রয়েছে, সে পরিস্থিতিতে থাকলে এখানে আরও অনেক বিনিয়োগকারীর আগমন ঘটবে।

এদিকে বাজার পরিস্থতি ভালো থাকায় বাজারে বিনিয়োগকারী এবং তাদের বিনিয়োগও বেড়েছে। বর্তমানে কোটিপতি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজারের ওপরে। এর মধ্যে ১০ কোটি টাকার ওপরে বিনিয়োগ রয়েছে এমন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা হাজারের ওপরে। সম্প্রতি বেনেফিশিয়ারি ওনার (বিও) হিসাবের তথ্য পর্যালোচনা করে এমন তথ্য পেয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

তথ্যমতে, কোটি টাকার ওপরে বিনিয়োগ রয়েছে এমন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ২৩ হাজার ২১০ জন। তাদের মধ্যে ১০ কোটি টাকার ওপরে বিনিয়োগ রয়েছে এক হাজার ২৫০ বিনিয়োগকারীর। এ ছাড়া ১০ কোটি টাকার নিচে এবং পাঁচ কোটি টাকার ওপরে বিনিয়োগ আছে দুই হাজার ২৫০ জনের।

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:

ভালো লাগলে শেয়ার করবেন...

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ