পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নন-ব্যাংকিং আর্থিক খাতে কোম্পানির সংখ্যা ২৩টি। এর মধ্যে ৭টি কোম্পানি এ পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ’২১) আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কোম্পানি ৭টির মধ্যে ৬টি কোম্পানির মুনাফায় ঊর্ধ্বগতি রয়েছে। তবে ১টি কোম্পানি মুনাফার ঊর্ধ্বগতি ধরে রাখতে পারেনি।
যে ৬টি কোম্পানি মুনাফায় ঊর্ধ্বগতিতে রয়েছে, সেগুলো হল-আইডিএলসি ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল হাউজিং এন্ড ফাইন্যান্স, ডিবিএইচ, বিডি ফাইন্যান্স, আইপিডিসি ও ইসলামিক ফাইন্যান্স। অন্যদিকে ইউনাইটেড ফাইন্যান্স মুনাফার প্রবৃদ্ধি দেখাতে পারেনি।
কোম্পাগুলোর মধ্যে ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরে বেশি মুনাফা করেছে আইডিএলসি, ন্যাশনাল হাউজিং এন্ড ফাইন্যান্স, ডিবিএইচ, বিডি ফাইন্যান্স, আইপিডিসি ও ইসলামিক ফাইন্যান্স। তবে ইউনাইটেড ফাইন্যানেন্সের মুনাফা কমেছে।
কিন্তু মুনাফার প্রবৃদ্ধির থাকার পরও ন্যাশনাল হাউজিং এন্ড ফাইন্যান্স এবং বিডি ফাইন্যান্স এবছর আগের বছরের তুলনায় বেশি ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। ইসলামিক ফাইন্যান্স আগের বছরের সমপরিমাণ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছ। তবে আইডিএলসি ফাইন্যান্স, ডিবিএইচ ও আইপিডিসি আগের বছরের কম ডিভিডেন্ড দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন সার্কুলারের কারণে কোম্পানি ৩টি আগের বছরের থেকে কম ডিভিডেন্ড দিতে বাধ্য হয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরজুড়ে সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আর্থিক খাত। অনিয়ম, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনায় খাতটি নাজুক অবস্থায় রয়েছে। তারপর রয়েছে মহামারি করোনার ছোবল। এতদসত্বেও কোম্পানিগুলো সমাপ্ত অর্থবছরে এবং চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে মুনাফার প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে। এটি গোটা আর্থিক খাতের জন্য একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত।
তাঁরা বলছেন, ব্যাংক ও আর্থিক খাতের কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন ব্যক্তি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর ন্যায় খেয়াল খুশী মতো করা যায় না। আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলোর প্রতিবেদনের উপর বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়া নজর থাকে। যে কারণে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনে বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আর্থিক খাতের এই কোম্পানিগুলো ভালো পারফরমেন্স দেখিয়ে পুঁজিাবাজারে আলো ছড়িয়েছে। এ খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর সর্বোচ্চ তলানিতে এসে নিভু নিভু করছিল। এমনি সময়ে কোম্পানিগুলোর ভালো পারফরমেন্সের খবরে খাতটি জেগে উঠেছে। খাতটির শেয়ারদর ও লেনদেনে ফের চাঙ্গাভাব দেখা দিয়েছে। যদিও অন্যান্য খাতের তুলানায় আর্থিক খাতের শেয়ারদর এখনো অনেক পিছিয়ে আছে। এখাতের বেশিরভাগ শেয়ার এখনো নিরাপদ বিনিয়োগ উপযোগি অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
প্রথম প্রান্তিকে কার কত ইপিএস:
চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ডিবিএইচ-এর শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ২ টাকা ১ পয়সা, আইডিএলসির ১ টাকা ২৫ পয়সা, ন্যশনাল হাউজিং এন্ড ফাইন্যান্সের ৭২ পয়সা, আইপিডিসির ৫৫ পয়সা, বিডি ফাইন্যান্সের ৫০ পয়সা, ইসলামিক ফাইন্যান্সের ৪১ পয়সা এবং ইউনাইটেড ফাইন্যান্সের ১২ পয়সা।
আগের বছরের প্রথম প্রান্তিকে ডিবিএইচ-এর ইপিএস ছিল ১ টাকা ৬৮ পয়সা, আইডিএলসির ৭৮ পয়সা, ন্যশনাল হাউজিং এন্ড ফাইন্যান্সের ৪৮ পয়সা, আইপিডিসির ৪০ পয়সা, বিডি ফাইন্যান্সের ৩৫ পয়সা, ইসলামিক ফাইন্যান্সের ৩৮ পয়সা এবং ইউনাইটেড ফাইন্যান্সের ১৬ পয়সা।
প্রথম প্রান্তিকে মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে আইডিএলসির ৬০.২৫ শতাংশ, ন্যশনাল হাউজিং এন্ড ফাইন্যান্সের ৫০ শতাংশ, বিডি ফাইন্যান্সের ৪২.৮৫ শতাংশ, ডিবিএইচ-এর ১৯.৬৪ শতাংশ, আইপিডিসির ১৪.৬০ শতাংশ এবং ইসলামিক ফাইন্যান্সের ৭.৮৯ শতাংশ। তবে ইউনাইটেড ফাইন্যান্সের মুনাফা কমেছে ২৫ শতাংশ।
২০২০ সালে কার কত ইপিএস:
৩১ ডিসেম্বর, ২০২০ অর্থবছরে আইডিএলসির ইপিএস হয়েছে ৬ টাকা ৭৪ পয়সা, ডিবিএইচ-এর ৫ টাকা ৭৮ পয়সা, ন্যশনাল হাউজিং এন্ড ফাইন্যান্সের ২ টাকা ৭৫ পয়সা, আইপিডিসির ১ টাকা ৯০ পয়সা, বিডি ফাইন্যান্সের ১ টাকা ৮০ পয়সা, ইসলামিক ফাইন্যান্সের ১ টাকা ৫৪ পয়সা এবং ইউনাইটেড ফাইন্যান্সের ১ টাকা ১৩ পয়সা।
আগের বছর আইডিএলসির ইপিএস ছিল ৪ টাকা ৫১ পয়সা, ডিবিএইচ-এর ৮ টাকা ০৪ পয়সা, ন্যশনাল হাউজিং এন্ড ফাইন্যান্সের ২ টাকা ২ পয়সা, আইপিডিসির ১ টাকা ৮২ পয়সা, বিডি ফাইন্যান্সের ১ টাকা ১২ পয়সা, ইসলামিক ফাইন্যান্সের ১ টাকা ৩৯ পয়সা এবং ইউনাইটেড ফাইন্যান্সের ১ টাকা ৩১ পয়সা।
মুনাফায় প্রবৃদ্ধি ছিল বিডি ফাইন্যান্সের ৬০.৭১ শতাংশ, আইডিএলসির ৪৯.৪৪ শতাংশ, ন্যশনাল হাউজিং এন্ড ফাইন্যান্সের ৩৬.১৪ শতাংশ, আইপিডিসির ৪.৩৯ শতাংশ এবং ইসলামিক ফাইন্যান্সের ১০.৭৯ শতাংশ। অন্যদিকে, ডিবিএইচ-এর মুনাফা কমেছে ২৮.৪৮ শতাংশ এবং ইউনাইটেড ফাইন্যান্সের মুনাফা কমেছে ১৩.৭৪ শতাংশ।
এবছর কে কত ডিভিডেন্ড দিল
ডিবিএইচ ডিভিডেন্ড দিয়েছে ১৫ শতাংশ ক্যাশ ও ১৫ শতাংশ স্টক, আইডিএলসি ১৫ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ স্টক, ন্যশনাল হাউজিং এন্ড ফাইন্যান্স ১৫ শতাংশ ক্যাশ, আইপিডিসি ১২ শতাংশ ক্যাশ, বিডি ফাইন্যান্স ৬ শতাংশ ক্যাশ ও ৬ শতাংশ স্টক, ইসলামিক ফাইন্যান্স ১০ শতাংশ ক্যাশ ও ইউনাইটেড ফাইন্যান্স ১০ শতাংশ ক্যাশ।
আগের বছর ডিবিএইচ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল ২০ শতাংশ ক্যাশ ও ১৫ শতাংশ স্টক, আইডিএলসি ৩৫ শতাংশ ক্যাশ, ন্যশনাল হাউজিং এন্ড ফাইন্যান্স ১০ শতাংশ ক্যাশ, আইপিডিসি ১০ শতাংশ ক্যাশ ৫ শতাংশ স্টক, বিডি ফাইন্যান্স ১০ শতাংশ ক্যাশ, ইসলামিক ফাইন্যান্স ১০ শতাংশ ক্যাশ ও ইউনাইটেড ফাইন্যান্স ১০ শতাংশ ক্যাশ।
এবছর ডিভিডেন্ড বেড়েছে ন্যশনাল হাউজিং এন্ড ফাইন্যানন্সের ৫০ শতাংশ এবং বিডি ফাইন্যান্সের ২০ শতাংশ।
অন্যদিকে, ডিভিন্ডে কমেছে ডিবিএইচ-এর ১৪.২৮ শতাংশ, আইডিএলসি ৪২.৮৫ শতাংশ এবং আইপিডিসির ২০ শতাংশ।
ডিভিডেন্ড অপরিবর্তিত রয়েছে ইসলামিক ফাইন্যান্সের ও ইউনাইটেড ফাইন্যান্সের।
এদিকে, লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্সও সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। যদিও কোম্পানিটি চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের ইপিএস এখনো প্রকাশ করেনি। সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ১ টাক ৮১ পয়সা। যা আগের বছর ছিল ৯৮ পয়সা। এবছর কোম্পানিটি ডিভিডেন্ড দিয়েছে ১২ শতাংশ ক্যাশ। যা আগের বছর ছিল ৭ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ স্টক।