পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের দুই কোম্পানি ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০ অর্থবছরের জন্য ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। আজ রোববার (২৩ মে) লেনদেন শুরুর আগেই কোম্পানি দুটির ডিভিডেন্ডের খবর স্টক এক্সচেঞ্জে প্রচার করা হয়। লেনদেনের শুরুতে কোম্পানি দুটির লেনদেন ইতিবাচক প্রবণতায় থাকলেও আধা ঘন্টা পরই নেতিবাচক প্রবণতা দেখা দেয়। যা লেনদেনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। কোম্পানি দুটি হলো-স্ট্যান্ডার্ড ইন্সুরেন্স ও মার্কেন্টাইল ইন্সুরেন্স।
সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানি দুটির ডিভিডেন্ড, শেয়ারপ্রতি আয়, সম্পদ মূল্য ও নগদ অর্থ প্রবাহ আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে। তারপরও কোম্পানি দুটির শেয়ারদর দাঁড়াতে পারেনি। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগকারীরা কোম্পানি দুটি থেকে হয়তো আরও বেশি কিছু আশা করেছিলেন। আশা পুরণ না হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা শেয়ারটি ছেড়ে যাচ্ছেন। তাদের সেল প্রেসারের কারণে কোম্পানি দুটির শেয়ার উঠতে পারেনি।
কোম্পানি দুটির ডিভিডেন্ড চিত্র:
সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য স্ট্যান্ডার্ড ইন্সুরেন্স ১২.৫০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। আগের বছর কোম্পানিটি ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। এবছর ডিভিডেন্ড বেড়েছে ২৫ শতাংশ।
সমাপ্ত অর্থবছরে স্ট্যান্ডার্ড ইন্সুরেন্সের শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ২ টাকা ৭ পয়সা। আগের বছর মুনাফা ছিল ১ টাকা ৮৮ পয়সা। মুনাফা বেড়েছে ১৯ পয়সা বা ১০.১০ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২১) স্ট্যান্ডার্ড ইন্সুরেন্সের ইপিএস হয়েছে ৬৭ পয়সা। আগের অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ইপিএস ছিল ৫৫ পয়সা। প্রথম প্রান্তিকে ইপিএস বেড়েছে ১২ পয়সা বা ২১.৮২ শতাংশ।
অন্যদিকে, সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য মার্কেন্টাইল ইন্সুরেন্স ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। আগের বছর কোম্পানিটি ডিভিডেন্ড দিয়েছিল ৭ শতাংশ ক্যাশ। ডিভিডেন্ড বেড়েছে ৪২.৮৫ শতাংশ।
সমাপ্ত অর্থবছরে মার্কেন্টাইল ইন্সুরেন্সের ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৬৮ পয়সা। আগের অর্থবছরে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ১ টাকা ৪৩ পয়সা। ইপিএস বেড়েছে ২৫ পয়সা বা ১৭.৪৮ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২১) স্ট্যান্ডার্ড ইন্সুরেন্সের ইপিএস হয়েছে ৭২ পয়সা। আগের অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ইপিএস ছিল ৩৩ পয়সা। প্রথম প্রান্তিকে ইপিএস বেড়েছে ৩৯ পয়সা বা ১১৮.১৮ শতাংশ।
উল্লেখ্য, সমাপ্ত অর্থবছরে এবং চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে উভয় কোম্পানির ডিভিডেন্ড ও আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি ক্যাশ ফ্লো এবং সম্পদ মূল্যও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লেনদেন শুরুর পর কোম্পানি দুটির শেয়ার দর তেমন না বাড়ায় বিনিয়োগকারীরা মনে করেছেন, শেয়ার দুটির দৌঁড় বোধ হয় এখানেই শেষ। সুতরাং কোম্পানি দুটির শেয়ার ধরে রেখে আর লাভ নেই। এই ভাবনায় বেশিরভাগ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী সেল প্রেসারে ছিল। তাদের সেল প্রেসারে শেয়ার দুটির দরপতন হয়েছে।
প্রবীণ বিনিয়োগকারী হেলাল হোসেন বলেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যেদিন কোম্পানির ডিভিডেন্ড ঘোষণা আসে, সেদিনের অপেক্ষায় থাকে। সেদিন শেয়ারের দর যাই হোক, তারা শেয়ার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। স্টান্ডার্ড ও মার্কেন্টাইল ইন্সুরেন্স দুটির ক্ষেত্রেও আজ অনেকটা তেমন হয়েছে। এ কারণে আজ অন্যান্য ইন্সুরেন্সের শেয়ারদর বেশ চাঙ্গা থাকলেও এই শেয়ার দুটির পতন হয়েছে। তিনি বলেন, কোম্পানি দুটির ডিক্লারেশন ভালই হয়েছে। ইপিএসও ভালো। কোম্পানি দুটির শেয়ারদর সামনে অনেক দুর যাবে বলে তিনি বেশ আস্থার সঙ্গে বলেন।
কোম্পানি দুটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ চিত্র
স্ট্যান্ডার্ড ইন্সুরেন্স: চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) স্ট্যান্ডার্ড ইন্সুরেন্সের সর্বশেষ শেয়ার হোল্ডিংয়ের অবস্থা আপডেট করা হয়েছে। যদিও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এখনো কোম্পানিটির শেয়ার হোল্ডিং আপডেট করেনি। এতে দেখা যায়, গত ৩১ ডিসেম্বরে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ৬.৪৬ শতাংশ, ২৮ ফেব্রুয়ারিতে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৭.০৪ শতাংশে। ৩১ মার্চ কমে দাঁড়ায় ৬.৪৭ শতাংশে। তবে এপ্রিল মাসে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় দ্বিগুণে। ৩০ এপ্রিল স্ট্যান্ডার্ড ইন্সুরেন্সে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ দাঁড়ায় ১২.১০ শতাংশে।
এদিকে আজ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৪৭টি। এটি চলতি বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন। এর আগে গত ২৮ এপ্রিল কোম্পানিটির ২৩ লাখ ৩৯ হাজার ১৯৭টি শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাহলে আজ এতো শেয়ার কিনলো কারা? সাধারণত দেখা যায়, ডিভিডেন্ড ঘোষণার দিন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাই শেয়ার বেশি সেল করে। কারণ তারা ডিভিডেন্ড ঘোষণার পরের দিনটির অপেক্ষায় থাকে। লাভ হলেও শেয়ার ছেড়ে দেয়, লোকসান হলেও ছেড়ে দেয়। তাঁরা বলছেন, এতো শেয়ারতো সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কিনেনি। এর পেছনেও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ভূমিকা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় ন।
মার্কেন্টাইল ইন্সুরেন্স: মার্কেন্টাইল ইন্সুরেন্সের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। সিএসইতে কোম্পানিটির সর্বশেষ শেয়ার হোল্ডিং আপডেট করা হলেও ডিএসইতে এখনো আপডেট করা হয়নি। সিএসইর ওয়েব সাইটে দেখা যায়, গত ৩১ ডিসেম্বর কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ২১.৩৩ শতাংশ। যা ২৮ ফেব্রুয়ারিতে কমে দাঁড়ায় ১৫.২৬ শতাংশে। ৩১ মার্চ তারিখে আরও কমে দাঁড়ায় ১৪.৮০ শতাংশে। তবে এপ্রিল মাসে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বড় আকারে বেড়ে যায়। ৩০ এপ্রিল মার্কেন্টাইল ইন্সুরেন্সে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়ায় ২৬.০৯ শতাংশে।
এদিকে আজ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৭ লাখ ৮১ হাজার ৪৮১টি। এটি চলতি বছরের মধ্যে অন্যতম বড় লেনদেন। যদিও এর আগে কোম্পানিটির লেনদেন ৪২ লাখ ছাড়িয়েছিল। তারপরও আজকের লেনদেন খুব একটা কম নয়। তাহলে আজকে এতো শেয়ার কিনলো কারা? আজতো ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদেরতো শেয়ার ছাড়ার কথা। তাহলেও এর পেছনেও কী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ভূমিকা এসে যায়?