পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) নতুন পাঁচটি সমুদ্রগামী জাহাজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
আগামিকাল বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর এর উদ্বোধন করবেন তিনি। শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বিএসসির জন্য নতুন ছয়টি জাহাজ সংগ্রহ করেছে। এরমধ্যে ৫ টির উদ্বোধন করা হবে।
বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ি ছয়টি জাহাজ সংগ্রহে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৬৩৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে চীন সরকারে সহায়তা ১ হাজার ৫২৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা এবং বিএসসির নিজস্ব অর্থ ১০৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। প্রতিটি জাহাজের ধারণক্ষমতা ৩৯ হাজার ডিডব্লিউটি (ডেড ওয়েট টন)।
জাহাজগুলোর মধ্যে তিনটি প্রোডাক্ট অয়েল ট্যাংকার (তেলবাহী) এবং তিনটি বাল্ক ক্যারিয়ার (পণ্যবাহী) । ছয়টি জাহাজের মধ্যে প্রথমটি ‘এম.ভি বাংলার জয়যাত্রা’ গত ২০১৮ সালের পহেলা নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেন। আগামীকাল দু’টি বাল্ক ক্যারিয়ার ও তিনটি প্রোডাক্ট অয়েল ট্যাংকার উদ্বোধন করা হবে। জাহাজগুলো হলো- ‘এম.ভি বাংলার সমৃদ্ধি’, ‘এম.ভি বাংলার অর্জন’, ‘এম.টি বাংলার অগ্রযাত্রা’, ‘এম.টি বাংলার অগ্রদূত’ এবং ‘এম.টি বাংলার অগ্রগতি’।
স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশের কোন সমুদ্রগামী জাহাজ ছিল না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের বহিঃবাণিজ্য পরিবহনের জন্য সম্পূর্ণ বিদেশি জাহাজের উপর নির্ভর না হয়ে স্বাধীনতার মাত্র ছয় মাসের মধ্যে বিএসসি’র জন্য ‘এম.ভি. বাংলার দূত’; ২৯ মাসের মধ্যে ১৪টি জাহাজ এবং ১৯৭৪ সালের মধ্যে ২৬টি জাহাজের ব্যবস্থা করেন যা পর্যায়ক্রমে বিএসসির বহরে সংযোজিত হয়। পরবর্তিতে পর্যায়ক্রমে বিএসসি’র বহরে সর্বমোট ৩৮টি সমুদ্রগামী জাহাজ সংগৃহীত হয়। সংগ্রহকৃত জাহাজসমূহ দীর্ঘদিন চালানোর পর সর্বশেষ মাত্র ২টি ট্যাংকার জাহাজ বিএসসি’র বহরে বিদ্যমান থাকে। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বিএসসি’র জন্য সর্বাধুনিক ৬টি সমুদ্রগামী জাহাজ ক্রয় করায় বর্তমানে বিএসি বহরে ৮টি জাহাজ রয়েছে। আরও ৬টি মাদার ভ্যাসেল (বড় জাহাজ) ও ৪টি কন্টেইনার জাহাজ ক্রয় প্রক্রিয়াধিন রয়েছে।
উল্লেখ্য, ৩টি বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ ‘এম.ভি. বাংলার জয়যাত্রা’, ‘এম.ভি. বাংলার সমৃদ্ধি’, ‘এম.ভি. বাংলার অর্জন’ যথাক্রমে ২০১৮ সালের ২৭ জুলাই, ১০ অক্টোবর ও ডিসেম্বরে এবং তিনটি প্রোডাক্ট অয়েল ট্যাংকার জাহাজ “এম.টি.বাংলার অগ্রযাত্রা”, “এম.টি. বাংলার অগ্রদূত”, “এম.টি. বাংলার অগ্রগতি” যথাক্রমে ২০১৯ সালের ২৫ জানুয়ারি, ১ মার্চ এবং ২৫ মে ডেলিভারি পাওয়া গেছে। বর্তমানে সবকটি জাহাজই আন্তর্জাতিক সমুদ্র পথে বাণিজ্যিক কার্যক্রমে নিয়োজিত আছে এবং আন্তর্জাতিক সমুদ্র পথে বাংলাদেশ প্রতিনিধিত্ব করছে।
বিএসসি’র সর্বশেষ জাহাজ অর্জনের সুদীর্ঘ ২৭ বছর পর আলোচ্য প্রকল্পের জাহাজসমূহ সংগ্রহের ফলে বিএসসি তথা বাংলাদেশ সরকারের সামুদ্রিক পণ্য পরিবহন ক্ষমতা আনুমানিক ২ লাখ ৩৪ হাজার ডিডব্লিউটি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে বিএসসি’র মোট আয় ছিল ২২২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা এবং মোট ব্যয় ছিল ১৬৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। নিট মুনাফা হয়েছে ৫৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে মুনাফা ছিল ১২ কোটি ৫২ লাখ টাকা । নতুন ৬টি জাহাজ যুক্ত হওয়ায় গত বছর থেকে এবছর নিট আয় বেড়েছে ৪২ কোটি ৭১ লাখ টাকা। আশা করা যাচ্ছে এ ছয়টি জাহাজ হতে প্রতি বছর প্রায় ৭৯ কোটি টাকা মুনাফা হবে।
শেয়ারবার্তা/ সাইফুল ইসলাম