পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গত ৭ এপ্রিল শেয়ারদর ৫০ টাকার নিচে থাকা ৬৬টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার কথা চিন্তা করে এবং বাজার উত্থান প্রবণতায় থাকায় কোম্পানিগুলোর উপর থেকে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু বাজার চাঙ্গা থাকার পরও ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা কোম্পানিগুলোর পতন অব্যাহত থাকে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে থাকা মৌলভিত্তির কিছু শেয়ার দরেও পতন হয় ঢালাওভাবে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা ৬৬টি কোম্পানির মধ্যে ১৫ শতাংশের বেশি ডিভিডেন্ড দিয়েছে, এমন কোম্পানি রয়েছে ৪টি। কোম্পানিগুলো হলো-এস্কয়ার নিটিং, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি (কেপিসিএল), নাহি অ্যালুমিনিয়াম ও কুইনসাউথ টেক্সটাইল।
কোম্পানিগুলোর মধ্যে এস্কয়ার নিটিং তালিকাভুক্তির পর দু’বছরই ১৫ শতাংশ করে ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। অন্য তিন কোম্পানিও প্রতিবছরই ১৫ শতাংশ বা তার বেশি ডিভিডেন্ড দিয়েছে। মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) বিবেচনায়ও কোম্পানিগুলোর শেয়ার বিনিয়োগ উপযোগি। তারপরও ফ্লোর প্রাইসে কোম্পানিগুলো ক্রেতাশুন্য থাকে। এমনকি ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করার পরও কোম্পানিগুলোর পতন অব্যাহত থাকে।
এস্কয়ার নিটিং : কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০১৯ সালে। দু’বছরই ১৫ শতাংশ করে ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। এরপরও ফ্লোর প্রাইস ২১ টাকা ৯০ পয়সায় ক্রেতাশুন্য থাকে দিনের পর দিন।
ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর দর নেমে আসে ২০ টাকা ৩০ পয়সায়। তারপর উঠে দাঁড়ায়। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৩ টাকা ৩০ পয়সায়। অর্থাৎ কোম্পানিটির শেয়ার এখন ফ্লোর প্রাইসের উপরে কেনাবেচা হচ্ছে। এর বর্তমান পিই ১০.৩১।
খুলনা পাওয়ার কোম্পানি (কেপিসিএল): কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০১০ সালে। এরপর থেকেই বিনিয়োগকারীদের ভালো ডিভিডেন্ড দিয়ে আসছে। বিনিয়োগকারীদের ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত ডিভিডেন্ড দেয়ার রেকর্ডও রয়েছে কোম্পানিটির। সর্বশেষ গত বছর ৩৪ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে।
কোম্পানিটি ফ্লোর প্রাইস ৪৫ টাকা ৩০ পয়সা বহুদিন যাবত ক্রেতাশুন্য থাকে। ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করার পরও প্রতিদিন ২ শতাংশ হারে ক্রেতাশুন্য অবস্থায় নামতে থাকে। শেয়ার লেনদেন হয় হাজারের নিচে। সর্বশেষ দর নেমে আসে ৩১ টাকা ৯০ পয়সায়।
কোম্পানিটির পাওয়ার প্লান্টের মেয়াদ বৃদ্ধির তদবির করছে বিএসইসি শীর্ষক একটি খবর বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়। এরপর কোম্পানিটির শেয়ারদর ‘ইউ টার্ন’ নেয়। বৃহস্পতিবারই এটি বিক্রেতাশুন্য হয়ে পড়ে। দর বাড়ে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। লেনদেন হয় প্রায় ৪ লাখ শেয়ার। বিএসইসি’র তদবিরে কোম্পানিটির ভাগ্য হয়তো খুলে যেতে পারে। তাহলে ভাগ্য খুলে যাবে বিনিয়োগকারীদেরও। এর বর্তমান পিই ১১.১৫।
নাহি অ্যালুমিনিয়াম: কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০১০ সালে। তালিকাভুক্তির পর কোম্পানিটি কোনো বছরই বিনিয়োগকারীদের ১৫ শতাংশের কম ডিভিডেন্ড দেয়নি। গত বছরও কোম্পানিটি ৮ শতাংশ ক্যাশ ও ৭ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড দিয়েছে।
কোম্পানিটি ৪৭ টাকা ১০ পয়সায় ফ্লোর প্রাইসে প্রায় ৬ মাস যাবত ক্রেতাশুন্য অবস্থায় ছিল। শেয়ার লেনদেন হয়েছে হাজারের নিচে। এমনি অবস্থায় ফ্লোর প্রাইস উঠে যায়। ফ্লোর প্রাইস উঠে যাওয়ার পরও প্রতিদিন ২ শতাংশ কমে ক্রেতাশুন্য থাকে এর শেয়ার। সর্বশেষ কোম্পানিটির দর ৩৬ টাকার নিচে নেমে আসে। তারপর ঘুরে দাঁড়ায়। লেনদেনও বাড়ে। এরমধ্যে একদিন লেনদেন গড়ায় ১০ লাখের বেশি শেয়ার। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ার দর দাঁড়ায় ৩৭ টাকা ৩০ পয়সায়। বর্তমান দর গত এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এক বছরে মধ্যে সর্বোচ্চ দর উঠেছিল ৬৮ টাকার উপরে। এর বর্তমান পিই ১৬.৫০।
কুইনসাউথ টেক্সটাইল: কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০১৮ সালে। তালিকাভুক্তির পর থেকেই কোম্পানিটি ১৫ শতাংশের বেশি ডিভিডেন্ড দিয়ে আসছে। গত দুই বছরও ৮ শতাংশ ক্যাশ ও ৮ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড দিয়েছে।
কোম্পানিটি ২৪ টাকা ফ্লোর প্রাইসে বহুদিন যাবত ক্রেতাশুন্য ছিল। ফ্লোর প্রাইস উঠে যাওয়ার পর ২০ টাকা ৬০ পয়সায় নেমে আসে। এরপর ঘুরে দাঁড়ায়। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার শেয়ারটি লেনদেন হয়েছৈ ২১ টাকা ৮০ পয়সায়। লেনদেনও বাড়ছে। আগে যেখানে লেনদেন হাজার ছুঁতে পারেনি, এখন লাখও গড়ায়। এর বর্তমান পিই ২০.১৯।