ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার চাহিদা কমছে। অন্যদিকে ঋণের চাহিদাও কমে আসছে ব্যাংকগুলোতে। এতে ব্যাংকে জমা হচ্ছে অলস টাকার পরিমাণ। নির্দিষ্ট অঙ্কের বেশি অর্থ নিজেদের কাছে রাখতে পারে না ব্যাংকগুলো। সেই অর্থ জমা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকে। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা তোলার পরিবর্তে জমা হচ্ছে বেশি। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা জমা হয়েছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা
রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলে থাকা ব্যাংকের শাখাগুলো কয়েকদিন আগেও বড় অঙ্কের টাকা জমা নিত সন্ধ্যার পরও। টাকার চাহিদা মেটাতে গ্রাহকদের এই সুবিধা দিত ব্যাংকগুলো। কিন্তু এখন বদলেছে সেই দৃশ্যপট। বড় অঙ্কের অর্থের লেনদেনে বাড়তি সতর্কতা রাখছে ব্যাংকাররা। বিকাল ৪টার মধ্যেই সব ধরনের অর্থ জমা নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে ব্যাংকগুলো। প্রায় সব ব্যাংকের চিত্রই এটি।
জানা গেছে, প্রতিটি ব্যাংকই নগদ অর্থের পুরোটা নিজ ব্যাংক বা শাখায় জমা রাখতে পারে না। মূলধন অনুপাত অনুযায়ী ব্যাংকগুলো নির্দিষ্ট পরিমাণ নগদ অর্থ নিজেদের ভল্টে রাখতে পারে দৈনিক ভিত্তিতে। বাকি অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শাখা বা অনুমোদিত সরকারি ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। ব্যাংক প্রয়োজনে আবার সেই অর্থ ফিরিয়ে নিতে পারে।
এদিকে প্রতিদিনই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অচল টাকা জমা হয়। বিভিন্ন ব্যাংক এই অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দেয়। এর পরিবর্তে সমমূল্যের বিনিময় যোগ্য নোট নেয় ব্যাংকগুলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব অচল নোটের পরিবর্তে নতুন নোট ও জমা থাকা অর্থ ব্যাংকগুলোকে চাহিদা মাফিক ফেরত দেয়। আবার অর্থের প্রয়োজনে গাজীপুরের টাকশাল থেকেও টাকা নিয়ে আসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই অর্থের প্রবাহ কমে গিয়েছে। ব্যাংকগুলোও জমা রাখা টাকা খুব একটা নিচ্ছে না। উল্টো নিয়মিত টাকা জমা রাখছে।
জানা গেছে, ব্যাংকের নগদ টাকার চাহিদা কমেছে ঋণ বিতরণেও। ব্যবসায়ীরা ঋণ নিচ্ছেন না আগের মতো। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণের স্থিতি হয়েছে ১০ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক বছরের হিসাবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আবার গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে শূন্য দশমিক ৬৪ শতাংশ। কিন্তু ২০১৮ সালে আলোচিত সময়ে এই খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল এক দশমিক ২৪ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে এই সময়ে ঋণের স্থিতি হওয়ার কথা ১০ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকার ঘরে। এই সময়ে ঋণ বিতরণের প্রবৃদ্ধি হওয়ার কথা ১২ শতাংশ। এছাড়া টাকার চাহিদা কমে যাওয়ায় নতুন করে গাজীপুর থেকে নোটের চাহিদা দিচ্ছে না বাংলাদেশ ব্যাংক।
এদিকে ক্যাসিনো কাণ্ডের পর বড় অঙ্কের টাকা লেনদেনেও ব্যাংকগুলো বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছে। এ কারণে ব্যাংকে অর্থের চাহিদা কমছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
শেয়ারবার্তা / আনিস